তৌফিক ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার সম্পদের তথ্য প্রকাশ্যে আসায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবার এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। একের পর এক সম্পদের ফিরিস্তি বের হয়ে আসছে পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের। সুন্দরবন থেকে বান্দরবন, উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধন সম্পদ ও জমি গাড়ি-বাড়ির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। দুদক যেমন দৌড়াচ্ছে প্রতিদিনই, খোঁজও মিলছে প্রতিদিনই। এবার মালয়েশিয়ায় বেনজীরের বিলাসবহুল আবাসিক ভবনের পর কানাডার বেগমপাড়াতেও খোঁজা হচ্ছে তার বাসাবাড়ি।

পুলিশের দোর্দণ্ডপ্রতাপ কাজে লাগিয়ে সম্পত্তির পাহাড় গড়লেও পাসপোর্টে আড়াল করেছেন পুলিশ পরিচয়। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তিনি সরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে নীল রঙের অফিশিয়াল পাসপোর্ট করেননি। সুযোগ থাকার পরও নেননি ‘লাল পাসপোর্ট’। বেসরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে সাধারণ পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রেও আশ্রয় নিয়েছেন নজিরবিহীন জালিয়াতির।

নবায়নের সময় ধরা পড়লে আটকে দেয় পাসপোর্ট অধিদপ্তর। চিঠি দেওয়া হয় র‌্যাব সদর দপ্তরে। কিন্তু অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে ম্যানেজ করেন সব। পাসপোর্ট অফিসে না গিয়ে নেন বিশেষ সুবিধা। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের আলোচিত দুই ভাই হারিস আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ জোসেফ যে প্রক্রিয়ায় পাসপোর্ট করেছিলেন, সেই একই কায়দায় পাসপোর্ট নেন বেনজীর।

সেখানকার প্রবাসী বাঙালিরাই বেগমপাড়ায় অনুসন্ধান চালিয়ে একটি বাড়িকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছে। কানাডা প্রবাসী সাংবাদিকরাও বেগমপাড়ায় একটি বাড়িকে ঘিরে কৌতূহল প্রকাশ করছেন। ঢাকায় দুদক এ বিষয়ে সুনিশ্চিত কিছু বলতে না পারলেও অনুসন্ধানের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছে। গত রোববার দুদকের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়ায় বেনজীরের সেকেন্ড হোমের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর এখন কানাডার বেগমপাড়ায় জোর অনুসন্ধান চলছে।

এদিকে পত্রিকার পাতা আর টেলিভিশনে প্রতিদিনই নতুন নতুন সম্পদের খবর উঠে আসছে পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের। বন-পাহাড়-সমুদ্র কোথায় নেই তার সম্পদ! এ পর্যন্ত শুধু তার ৬২১ বিঘা জমিই জব্দ করা হয়েছে। কালই তা বেড়ে হাজার বিঘার খবরে পরিণত হলেও অবাক হবে না মানুষ। একজন মানুষের কয়টি অ্যাকাউন্ট থাকতে পারে! বেনজীর আহমেদের ৩৮টি অ্যাকাউন্ট জব্দই হয়েছে। আরও যে নেই নামে-বেনামে, তাই-বা বলবে কে? এত বিপুল সম্পদ গড়ে যদিও তিনি এখন লাপাত্তা।

পুলিশ সদস্যদের তিনি হিম্মতওয়ালা হওয়ার পরামর্শ দিতেন, মাটির গভীর থেকে দুর্নীতিবাজদের তুলে আনার হুংকার দিতেন। তিনিই কিনা চুপিসারে দেশ ছেড়েছেন, মানা যায়! বেনজীর দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর কেবল নড়েচড়েই বসেননি, রীতিমতো হম্বিতম্বি শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সরকারও। দুদক আগামী ৬ জুন তলব করেছে বেনজীর আহমেদকে। সেদিন তিনি দুদকে হাজির হচ্ছেন না, তা অনেকটা নিশ্চিত। তারপরও সেদিন পর্যন্ত সবার চোখ থাকবে দুদকের দিকেই। থাকবে সব আয়োজন। যদি তিনি আসেন?

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম বলেন, অবশ্যই ৬ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এলে একধরনের কনসিকোয়েন্স, না এলে আরেক ধরনের কনসিকোয়েন্স। এমনও হতে পারে উনি আইনজীবীর মাধ্যমে সময় চাইতে পারেন। কাজেই ৬ তারিখ পার না হলে কিছুই বলা যাবে না। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তাও কথা বলেছেন রাষ্ট্রের সুরেই। কঠোর অবস্থান তারও। বলছেন অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিচারের মুখোমুখি বেনজীরকে হতেই হবে। হিসাব দিতে হবে টাকা ও সম্পদের।

অ্যার্টনি জেনারেল আমিন উদ্দিন বলেন, তদন্ত করে প্রমাণ পেলে অবশ্যই তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। বেনজীর আহমেদের আইনজীবীও জানিয়ে দিয়েছেন, বিচারে ‘ডরান না’ বেনজীর। আইনি পথে হাঁটবেন তিনি। তবে ৬ জুন আসছেন না দুদকে তা মোটামুটি নিশ্চিত।
বেনজীরের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, আমি জানি না উনি কোথায় আছেন। সপ্তাহখানেক আগে ওনার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওনার সঙ্গে আমার যেটুকু কথা হয়েছে সেটা হলো, ওনার বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ উঠেছে, দুদক তদন্ত করছে, ওনার সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয়েছে, সুতরাং উনি আইনগত ব্যবস্থা উনি নেবেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ পদে থেকে এর আগে কেউ এতটা বেপরোয়াভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন এমন তথ্য নেই কারো কাছে। আর তা হবেই-বা কীভাবে তিনি তো বে-নজির। এদিকে দেশের অভ্যন্তরেই বেনজীরের আরও জমিজমা ও সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে দুদক। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানের সম্পদ যেন উপচে পড়ছে। রাতারাতি আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মতো ঘটনা। দেশ-বিদেশে তার সম্পদের পাহাড়ের খবরে সবার চোখ যেন কপালে উঠছে। চমকের পর চমক আসছে।

অথচ, পুলিশের সাবেক এই শীর্ষ কর্মকর্তা শিল্পপতি ছিলেন না, বংশ পরম্পরায় বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিকও ছিলেন না। তাহলে কী করে রাতারাতি পাহাড় সমান সম্পদের মালিক বনে গেলেন? এই প্রশ্ন এখন সব জায়গায়, সব মহলে আলোচনার খোরাক। এখন পর্যন্ত যত সম্পদের তথ্য বের হয়ে এসেছে, তাতে হাজার বিঘার বেশি জমি কিনে তিনি হয়েছেন ‘ল্যান্ডলর্ড’। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এর আগে কোনো আইজিপি বা শীর্ষস্থানীয় কোনো আমলার এত সম্পদের নজির দেখা যায়নি। সবাই বলছেন, বেনজীরের এত সম্পত্তি নজিরবিহীন।

দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, বান্দরবান, কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, গাজীপুরসহ ঢাকার আশপাশে হাজার বিঘার বেশি জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। রাজধানীর গুলশানে পাওয়া গেছে আলিশান চারটি ফ্ল্যাট, যেগুলোর মোট আয়তন ৯ হাজার ১৯২ বর্গফুট, যার বর্তমান বাজারদর ২৫ কোটি টাকার কম নয়। পরিবারটির নামে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের কয়েক কোটি টাকা মূল্যমানের শেয়ার ও তিনটি বিও হিসাব, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে। এসব হিসাব থেকে বেনজীর আহমেদ বিপুল পরিমাণ অর্থ সরিয়ে নিয়েছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

দুর্নীতিবিরোধী এই প্রতিষ্ঠানটির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, সরিয়ে নেয়া এই টাকার পরিমাণ কয়েকশ কোটি হতে পারে। জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের প্লাম জুমেরা ও মেরিনা এলাকায় বেনজীরের নামে-বেনামে বেশ কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। যার মধ্যে জুমেরা এলাকার ৪০ তলা কনকর্ড টাওয়ারে অবস্থিত একটি অ্যাপার্টমেন্ট কয়েকদিনের মধ্যেই প্রায় ২৯ কোটি টাকায় বিক্রি করেছেন।

দুবাইয়ের মস্কো নামের একটি বহুতল হোটেলে বেনজীরের যৌথ বিনিয়োগের তথ্যও আছে। আর ঢাকার ভাটারা থানাধীন একটি অভিজাত আবাসিক এলাকায় বেনজীরের একটি সাত তলা ভবন ছিল, সেটাও সম্প্রতি বিক্রি করে দিয়েছেন। আর টাকা সরানো ও সম্পদ বিক্রি করা হয়েছে আদালতের আদেশে দুদক কর্তৃক বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করার আগে। এদিকে, দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ছাড়াও কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বেনজীর আহমেদ এবং তার পরিবারের কোনো সম্পদ আছে কিনা, সে তথ্য অনুসন্ধানের অনুরোধ জানিয়ে বিএফআইইউতে চিঠি দিয়েছে দুদক। দুদকের অনুরোধ বিবেচনায় নিয়ে এসব দেশের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বিএফআইইউ।

জানা গেছে, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় বৈরাগীটোল গ্রামে জমি কিনে বেনজীর গড়ে তুলেছেন সাভানা ইকোরিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক। প্রায় এক হাজার ৪০০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত এই ইকো রিসোর্টের বিভিন্ন জায়গায় মাটি ভরাট করে বানানো হয়েছে কৃত্রিম পাহাড়। সাগরের কৃত্রিম ঢেউ খেলানো সুইমিং পুলও রয়েছে এখানে। আছে হাজারের বেশি ভিয়েতনামি নারকেলগাছসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ। রয়েছে বিশাল আকৃতির কনসার্ট হল। এছাড়া বেশ কয়েকটি পুকুর ও দৃষ্টিনন্দন ঘাট, কৃত্রিম ঝরনা ও বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স কটেজ।

এছাড়া বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে গোপালগঞ্জের পাশাপাশি মাদারীপুরেও কয়েকশ বিঘা জমি কেনা হয়েছে বলে জানা গেছে। শুধু স্থলভাগ নয়, সমুদ্র পাড়েও সম্পত্তি কিনেছেন বেনজীর। ‘জমিবিলাসী’ এ মানুষটি জায়গা কিনেছেন সাগরসৈকতেও।

জানা যায়- সেন্টমার্টিন্স দ্বীপে ১০ বছর আগে নিজের নামে ১ একর ৭৫ শতক জমি কেনেন সাবেক এই আইজিপি। কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের ইনানী সৈকতে স্ত্রী ও তিন মেয়ের নামে কেনেন আরো ৭২ শতক জমি। সে সময় বেনজীর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার ছিলেন।
এদিকে, গাজীপুরের ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা-তেও রয়েছে বেনজীরের মালিকানা। বনভূমি বেষ্টিত এ রিসোর্ট এলাকার মানুষের কাছে ‘বেনজীরের রিসোর্ট’ নামে পরিচিত। পাঁচতারকা মানের এই রিসোর্টের ২৫ শতাংশের মালিক হতে এক পয়সাও লগ্নি করতে হয়নি সাবেক পুলিশপ্রধানকে।

ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেই গাজীপুরের এ রিসোর্টের মালিক বনে গেছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর। শুরুতে ১৯ একর জমি নিয়ে এ রিসোর্টের কাজ শুরু হলেও বেনজীরের ক্ষমতার দাপটে প্রায় ৫০ একর জায়গা দখল করে নেন রিসোর্ট মালিকরা। ভাওয়াল রিসোর্ট ছাড়াও রাজধানীর পূর্বাচল উপশহর ঘেঁষে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পাশের চান্দখোলা মৌজার বেতুয়ারটেক গ্রামে বেনজীর বিঘার পর বিঘা জমি কিনেছেন বলেও দুদকের অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে। সম্প্রতি কালীগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে তল্লাশি চালিয়ে বেনজীর ও তার স্ত্রী এবং বড় মেয়ের নামে দুদক পাঁচটি দলিল পেয়েছে।

মালয়েশিয়ায় ‘সেকেন্ড হোম’ : মালয়েশিয়ায় দ্বিতীয় নিবাস গড়ার কর্মসূচি ‘মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম’ প্রকল্পের অধীনে বেনজীর আহমেদ বিপুল বিনিয়োগ করেছেন বলে জানা গেছে। মালয়েশিয়ার হুন্ডি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম হুমায়ুন কবির ও রতনের মাধ্যমে বেনজীর বিপুল টাকা পাচার করেন। পাচার করা টাকায় পরিবারের থাকার জন্য একটি অত্যাধুনিক বাড়ি কিনেছেন বেনজীর। বিনিয়োগ করেছেন আবাসন খাতে।
এদিকে কম যান না বেনজীরের শাশুড়ি-শ্যালকও।

বেনজীরের প্রভাব কাজে লাগিয়ে সম্পত্তি বাগিয়েছেন শ্বশুরালয়ের আত্মীয়রাও। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ আলীপুর গ্রামে ৪৮ বিঘা জমির ওপর একটি আধুনিক ইটভাটা স্থাপন করেছিলেন আনারুল ইসলামের ছেলে আশরাফুজ্জামান হাবলু। কিন্তু পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ইটভাটাটি যাত্রা শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই দখল করে নেন বেনজীর আহমেদের শ্যালক মির্জা আনোয়ার পারভেজ।

ভগ্নিপতির ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে রাতের অন্ধকারে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে হাবলুর কাছ থেকে ইটভাটাটি দখল করেন পারভেজ। এছাড়া সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার ১ নম্বর শোভনালী ইউনিয়নের শরাফপুর গ্রামে বেনজীরের শাশুড়ি লুৎফুন নেসার নামে শতাধিক বিঘার ওপর চারটি মাছের ঘের আছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি আরকুনি মৌজায় দুটি, পশ্চিম বিল আর পাশের পুঁটিমারি বিলেও আরো কয়েকটি মাছের ঘের রয়েছে।

মাদারীপুরে বেনজীরের স্ত্রীর বিপুল জমি : মাদারীপুরে বেনজীরের স্ত্রী জীশান মির্জার নামে ২৭৩ বিঘা জমি কেনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বেনজীর আহমেদ অবসরে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে স্ত্রী জীশান মির্জার নামে এসব জমি কেনা হয়। এসব জমির রেজিস্ট্রি মূল্য দেখানো হয়েছে প্রায় ১০ কোটি ২১ লাখ টাকা। আদালতে উপস্থাপন করা দুদকের নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেড় বছরেরও কম সময়ের মধ্যে বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মির্জার নামে ১১৪টি দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়।

এদিকে, দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ৫ মার্চ বেনজীর আহমেদ রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে মোট ৯ হাজার ১৯২ বর্গফুট আয়তনের চারটি ফ্ল্যাট মাত্র ২ কোটি ১৯ লাখ টাকায় কিনেছেন। তবে বাস্তবে এই ৯ হাজার বর্গফুট রিয়েল এস্টেটের মূল্য হবে কমপক্ষে ২৫ কোটি টাকা। এই চারটি ফ্ল্যাট ছাড়াও মেয়ের ‘বিশ্রামের জন্য’ সাড়ে ৩ কোটি টাকা দিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনেন বেনজীর। ২০১৭ সালে র‌্যাবের মহাপরিচালক থাকাকালে সাড়ে ৩ হাজার বর্গফুটের এ ফ্ল্যাট কেনেন তিনি। এছাড়া বেনজীরের দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল ‘লা মেরিডিয়ান’-এর ২ লাখ শেয়ার রয়েছে বলে জানা যায়। ৫৫ টাকা অধিকমূল্যে ৬৫ টাকা প্রতিটি শেয়ারের দর হিসাবে এই কোম্পানিতে বেনজীরের দুই মেয়ের বিনিয়োগ ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

এদিকে, দুদক অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে-স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজে বিতর্কিত হয়ে দেশজুড়ে আলোচিত নাম মোতাজেরুল ইসলাম মিঠুর সঙ্গে বেনজীর আহমেদের ব্যবসা রয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে দুদক। উত্তরাঞ্চলের দুটি জেলায় কয়েকশ বিঘা জমি কিনেছেন তারা। তার মধ্যে অন্তত তিনটি জায়গায় শত বিঘার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে ‘নর্থ পোলট্রি খামার’। মুরগির খাদ্যের ব্যবসাও আছে তাদের। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ের জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বড় খোজাবাড়ি এলাকায় বিশাল পোলট্রি খামার রয়েছে।

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নে ভিন্ন জগৎ পার্কসংলগ্ন এলাকায় একই নামে রয়েছে আরেকটি খামার। এছাড়া কিশোরগঞ্জ উপজেলার ধরেয়ার বাজার এলাকায় আরো একটি খামার রয়েছে। এসব খামারে নামে-বেনামে কয়েকশ বিঘা জমি কেনা হয়েছে বলে জানা গেছে। মিঠুর ভাই মানিক হাজি এই খামারগুলো দেখাশোনা করেন।

বান্দরবানেও বেনজীরের ৮০ একর জমির খোঁজ : বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-কন্যার নামে বান্দরবানে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি। এসব সম্পত্তি দেখাশোনা করেন বান্দরবান জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মং ওয়াইচিং মারমা। জানা যায়- বান্দরবান পৌরসভার মধ্যমপাড়া এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে শাহজাহানের কাছ থেকে বান্দরবান সদর উপজেলার ৩১৪ নম্বর সুয়ালক মৌজায় ৬১৪ নম্বর দাগের ৩ নম্বর সিটে ২৫ একর লিজের জমি ক্রয় করেন বেনজীর আহমেদ,

তার স্ত্রী জীশান মির্জা ও মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর। যেখানে গড়ে তুলেছেন গবাদি পশুর খামার, মৎস্য প্রজেক্ট, ফলজ, সেগুন বাগান ও বিলাসবহুল খামারবাড়ি। এই খামারবাড়িতে রয়েছে অন্তত অর্ধকোটি টাকারও বেশি গবাদিপশু। এছাড়া লামা উপজেলার সরই ডলুছড়ি মৌজার টংগো ঝিরিতে রয়েছে আরো অর্ধশত একরেরও বেশি জায়গা।