আলমগীর হোসেন ও মুজিবুর রহমান মাছুম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: জাতীয় নির্বাচনের প্রায় পাঁচ মাস পর এসে সরকারবিরোধী একদফার আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে যুগপতের শরিকদের সঙ্গে গত মাসে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে দলটি। তবে আগামীর সেই আন্দোলনের কৌশল কী হবে, বিএনপি এবার কীভাবে এগোবে, তা জানতে চায় দলটির তৃণমূল।

তাদের শঙ্কা, ক্ষমতাসীনরা অতীতের মতো এবারও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে দমন-পীড়নের মাধ্যমেই আন্দোলন দমন করতে চাইবে। এ কারণে প্রধান শরিক বিএনপির কাছে একই জিজ্ঞাসা যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদেরও। বিএনপি বলছে, দলীয় ফোরাম ও মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করেই সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলনের কর্মকৌশল ঠিক করা হবে।

ফলে নিজেদের ঘর গুছিয়ে শরিকদের নিয়ে মাঠে নামতে চায় বিএনপি। ইতিমধ্যে অঙ্গ সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের মাঠে থাকা দলটি। ঈদুল আজহার পর গরম কমলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা তাদের। এর আগে জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের আগের মতো মাঠে নামানো হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কেন্দ্র থেকে তৃণমূল মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে বৈঠক করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, সাংগঠনিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির হাইকমান্ড বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। নেতাকর্মীদের আগের মতো উজ্জীবিত করতে রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে সারা দেশে ব্যাপকভাবে ১৫ দিনের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।

প্রতিষ্ঠাতার প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্মরণে দেশব্যাপী ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন এসব কর্মসূচির মাধ্যমে নেতাকর্মীরা মাঠে চাঙ্গা হবে। এ ছাড়া সামনে বেশকিছু জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুদায়িত্ব যাদের সেই ঢাকা মহানগরের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ প্রায় প্রতিদিনই সাংগঠনিক বৈঠক, কর্মিসভা, বর্ধিত সভা করে যাচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, থানা, ওয়ার্ড ও অঞ্চলভিত্তিক কার্যক্রম চলছে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে নিয়মিত। দীর্ঘদিন আন্দোলন করতে গিয়ে তারা ব্যাপকভাবে নির্যাতিত ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এই মুহূর্তে আমরা একটু দম নিয়ে আগের মতো দলকে সংগঠিত করছি।

বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আমাদের সাংগঠনিক কাজ চলমান। বিগত আন্দোলন উত্তর মূল্যায়নের ভিত্তিতে কমিটি গঠন করা হবে। যেখানে লো ফল্ট (দুর্বলতা) আছে সেখানে বেশি মনোযোগ দেওয়া হবে। সে মোতাবেক কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করছেন।

যেখানে দলীয় কোন্দল ও বিভেদ আছে তা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন বলে জানান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরুজ্জামান লস্কর তপু। সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান চান, শিগগিরই জেলা কমিটি নতুন করে সাজানো হোক। এতে যারা রাজপথে পরীক্ষিত তারাই যাতে মূল্যায়িত হন।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, দীর্ঘদিন টানা আন্দোলন করতে গিয়ে নেতাকর্মীরা বেশ ক্লান্ত। হামলা-মামলায় জর্জরিত। নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তারা। আন্দোলনে কাক্সিক্ষত সফলতা না আসায় কিছুটা হতাশাও ভর করেছে তাদের মনে। এই হতাশা দূর করতে সারা দেশে সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মসূচি থাকবে। সে লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সাংগঠনিক সফর শুরু করেছে ছাত্রদল। পর্যায়ক্রমে কৃষক দল, যুবদল, মহিলা দলের নেতাকর্মীরা জেলা সফর করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অব্যাহত কর্মসূচির মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাবে বিএনপি।

ঢাকা উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক শরীফ উদ্দিন জুয়েল বলেন, মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গ সংগঠনগুলোকে নতুন করে গোছানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাজ চলমান আছে। উত্তরের এখনও ১৮টি থানা কমিটি গঠনের কাজ বাকি আছে। এগুলো ঈদের পর দিয়ে দেওয়া হবে। গত বছরের ২৮ অক্টোবরের পর থেকে আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের খোঁজখবর ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কয়েকটি টিম করে দিয়েছেন।

তারা এখন প্রত্যেক জেলায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পরিবারের খোঁজখবর নিচ্ছেন। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রিমালে বিধ্বস্ত এলাকায় যাচ্ছে দলের ত্রাণ সহায়তা টিম। এসব ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে সাংগঠনিক কাজও চলমান। গত এক মাস গেছে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে। নির্বাচন বর্জনে আমাদের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা বাস্তবায়নে দায়িত্বশীল নেতারা ব্যস্ত ছিলেন।

এ বিষয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটির কাজ প্রায় শেষ করেছি। ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সায় দিলেই কমিটি দিয়ে দেওয়া হবে। আমরা ইতিমধ্যে ১৩টি জেলা সফর করে কর্মিসভা করেছি। তৃণমূলের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা চাই ১১৮টি সাংগঠনিক জেলা সফর করতে। এতে সংগঠন শক্তিশালী হবে এবং সামনের আন্দোলন আরও গতিশীল হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দিন কয়েক আগে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, নিজের ঘর কেউ এসে সামলিয়ে দেবে না; নিজেকেই এগিয়ে আসতে হবে। নিজের শক্তি বাড়িয়ে লড়াই করতে হবে।