মনিরুজ্জামান মনির, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: টানা দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। কোনোভাবেই থামছে না সূচকের পয়েন্ট হারানো ও দরপতন। বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ আর ক্রন্দন। প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। ভিটেবাড়ি ও সম্পদ বিক্রি করে এখানে বিনিয়োগ করে আজ পথে বসেছে। আশার আকাশে প্রতিদিনই নিরাশার কালো মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে।

লোকসান দিতে হতে বিনিয়োগকারীরা আজ সর্বশান্ত হচ্ছেন। সামনে ঈদুল আযহা পরিবার নিয়ে রয়েছেন দু:চিন্তায়। বিনিয়োগকারীদের অভিমত এটা ২০১০ সালের পরিস্থিতিকে হার মানিয়েছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা মধুর মধুর কথা বলে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর পরিবারকে সর্বশান্ত করছেন। এছাড়া দরপতন ঠেকাতে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছেন না নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফলে টানা দরপতনে পুঁজিবাজারে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদে মতিঝিলের বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।

ফলে মোটা দাগে মার্চেন্ট ব্যাংকের ফোর্সড সেল ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের অভাব এবং সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতাকেই পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের জন্য দায়ী করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
এদিকে গত দুই মাসের বেশি সময় যাবত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে গেইন ট্যাক্স আরোপ এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর সুবিধা কর্তনের বিষয়ে গণমাধ্যমে নানা রকম নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হচ্ছিল। এর প্রেক্ষিতে পুঁজিবাজাওে চলছে টানা দরপতন। দুই মাসের ধারাবাহিক পতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচক উধাও ৬০০ পয়েন্টের বেশি।

গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে গণমাধ্যমের আগাম সেসব খবরই প্রতিফলিত হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে গেইন ট্যাক্স আরোপ প্রস্তাব করা হয়েছে এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির সুবিধা কর্তন করা হলেও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির সুবিধা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এতে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা হতবাক হয়েছেন এবং পুঁজিবাজার বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এমন অবিবেচন াপ্রসূত প্রস্তাবের কঠোর বিরোধিতা করেছেন।

ফলে বাজেট ঘোষণার পর সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বড় সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ কমে তিন বছরের বেশি বা ৩৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। পাশাপাশি সূচকের সাথে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর ও টাকার পরিমাণে লেনদেন।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৫.৭৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১৭১ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরীয়াহ সূচক ১৫.৯৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১২০ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২২.৫২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮৩৫ পয়েন্টে।

আজ ডিএসইতে ৩৫৭ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কর্মদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৫৪২ কোটি ৬০ লাখ টাকার। আজ লেনদেন কমেছে ১৮৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আজ ডিএসইতে ৩৯২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৩টির, কমেছে ২৪০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টির।

অপর পুঁজিবাজার চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএই) আজ লেনদেন হয়েছে ১০৭ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৪ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। এদিন সিএসইতে ২১৭টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৪টির, কমেছে ১৫১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টি প্রতিষ্ঠানের। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৯৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এরমধ্যে দর বেড়েছিল ৬৮টির, কমেছিল ১০৩টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট।