দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে টানা দরপতন হচ্ছে দেশের পুঁজিবাজারের। টানা দরপতনের মধ্যে পড়ে প্রতিদিন বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। লোকসান কাটিয়ে ওঠার কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। ফলে দিন যত যাচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর আতঙ্ক তত বাড়ছে। আতঙ্কে অনেকেই দিনের সর্বনিম্ন দামে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছেন। ফলে মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে বাজারে ক্রেতা সংকট দেখা যাচ্ছে।

এতে সূচকের যেমন পতন হচ্ছে, তেমনি কমে আসছে লেনদেনের গতি। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারের ভবিষ্যত কী তা নিয়ে শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা। তাছাড়া পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব কার এ প্রশ্ন খোদ বিনিয়োগকারীদের। তবে সাম্প্রতিক পুঁজিবাজার টানা দরপতন হলেও বিএসইসি নিশ্চুপ রয়েছেন। এছাড়া ডিএসইর ভুমিকা নিস্কিয় বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া সিএসই তে থেকেও নেই।

ফলে টানা দরপতনে অভিবাভক শুন্য হয়ে পড়েছে পুঁজিবাজারের। এ অবস্থায় পুঁজি কমতে কমতে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীদের ৭০ শতাংশ হারিয়েছে। আর এ অবস্থা চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি শুন্য হয়ে যাবে। এ অবস্থায় বাজারে গত ২ মাসে লাখ কোটি টাকার বেশি পুঁজি কমেছে। এই চরম মন্দায় নিয়মিত বাজার ছাড়ছেন হাজারো বিনিয়োগকারী। তারপরেও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কোন ভূমিকা নেই।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দুই মাসে লাগাতার পতনে ৫০ হাজারের বেশি বিনিয়োগকারী সর্বশান্ত হয়ে শেয়ারবাজার ছেড়েছেন। পতনের ছোবল অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই নিঃস্ব হওয়ার বিনিয়োগকারীদের তালিকা বড় হচ্ছে। কিন্তু পতনের তান্ডব থামার কোনো লক্ষণ নেই। তাদেরও একই প্রশ্ন, তাহলে কী শেয়ারবাজার শেষ হয়ে যাবে?

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি ডিএসইর সূচক ছিল ৭ হাজার ১০৫ পয়েন্ট। ১৭ মাস ১০ দিন পর আজ ১০ জুন ডিএসইর সূচক দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১০৫ পয়েন্টে। এই সময়ে ডিএসইর সূচক কমেছে পুরো ২ হাজার পয়েন্ট।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেভাবে সূচক পতনের প্রতিযোগিতা চলছে, তাতে সূচক শেষ হতে বেশি সময় লাগবে না। টানা দরপতনে ডিএসইএক্স সূচকটি ২০২১ সালের ৪ এপ্রিলের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে গেছে। অর্থাৎ সূচকটি বিগত ৩ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন। ধারাবাহিক এই পতনে বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও বা বিনিয়োগমূল্য কমে গেছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা।

এ বছরের ১৭ জানুয়ারি ডিএসইর সব সিকিউরিটিজের দাম ছিল ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। যা কমে ৯ জুন নেমে এসেছে ৬ লাখ ৩৯ হাজার ৯৯ কোটি টাকায়। অর্থাৎ চলতি বছরে বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। তবে প্রকৃতপক্ষে এর পরিমাণ আরও বেশি। কারন এরইমধ্যে কিছু ট্রেজারি বন্ড ও কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। যেগুলো তালিকাভুক্তিতে স্বাভাবিকভাবেই বাজার মূলধনে কয়েক হাজার কোটি টাকা যোগ হয়েছে।

পুঁজিবাজারের এমন পতনে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা। যারা চোখেমূখে অন্ধকার দেখছেন। এমন পরিস্থিতিতে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছাড়তে শুরু করেছেন। নিয়মিত সিকিউরিটিজ শুন্য হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার পোর্টফোলিও। তবে বিনিয়োগকারীদের এমন রক্তক্ষরণেও কার্যত নিশ্চুপ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। টানা পতনে বিনিয়োগকারীরা নিঃশ্ব হয়ে মরার অবস্থা হলেও কোন কার্যকর ভূমিকা নেই বিএসইসির। যা দু-একটি ভূমিকা রাখতে চায়, সেটাও কাজে আসছে না। অথচ অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন বিএসইসির এই কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরে অসংখ্য কাজ করতে দেখা গেছে।

ডিএসইর সূচক ১০ হাজারে ও লেনদেন কিভাবে ৫ হাজার কোটি টাকা করা যায়, তা নিয়ে সক্রিয় ছিল। এমনকি বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আনার জন্য অনেক দেশে রোড শো করেছে। তবে চলমান বাজারের মন্দায় অনেকটা ব্যর্থ অতিতের সেই প্রাণাঞ্চল শিবলী কমিশন। এখন সূচক ও লেনদেন দেখা তাদের কাজ না বলে দায়িত্ব থেকে পালিয়ে বা দূরে সরে যেতে চায় এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির কর্তারা।

তবে প্রকৃতপক্ষে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে যাদের ভূমিকা রাখা দরকার এবং যাদের দায়িত্ব, তারা অনেক আগে থেকেই নিস্ক্রিয়। ডিএসই এখন নিস্ক্রিয় হলেও দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) শুরু থেকেই না থাকার মতো। পুঁজিবাজারের সমস্যা নিয়ে এই স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে কখনো মাথায় চাঁপ নিতে হয়নি।

বিএসইসি ও ডিএসইর উপরই সব দায়িত্ব, এমন মনোভাব নিয়েই শুরু থেকে পথ পাড়ি দিচ্ছে সিএসইর কর্তারা। যে কারনে এ বাজারটি দীর্ঘ পথচলায়ও নিজস্ব আলোয় জলতে পারেনি। বেরিয়ে আসতে পারেনি পরনির্ভরশীলতার মানসিকতা থেকে সিএসইর কর্তারা।