দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: স্মরণকালের সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে দেশের পুঁজিবাজার। ব্যাপক সম্ভাবনাময় খাতটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। সবার চোখের সামনে প্রতিদিনই হাওয়ায় মিশে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার বাজার মূলধন। আতঙ্কে দিন কাটছে বিনিয়োগকারীদের। সূচকের টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। তাদের পিঠ রীতিমতো দেওয়ালে ঠেকে গেছে। ফলে লাখো বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে বাজারবিমুখ হয়ে পড়ছেন। ফলে বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ বাড়ছে। যদিও পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারপ্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিপূর্বে বারবার তৎপরতা দেখিয়েছেন; কিন্তু তাতে করেও বিশেষ কোনো ফল লাভ হয়নি।

পুঁজিবাজার টানা দরপতন হলেও বাজার ইস্যুতে বিষয়টি নিয়ে কাউকে তেমন সিরিয়াস ভূমিকা গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপরও ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে দেশের আর্থিক খাতের পুঁজিবাজার যে অন্তিম শয়ানে চলে যাবে, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এদিকে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসই সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে সূচক কমলেও লেনদেন কিছুটা বেড়েছে।

এম সিকিউরিেিজর বিনিয়োগকারী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের বাঁচান, আমরা নি:স্ব একথা টুকু একটু পত্রিকায় লিখেন। ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে আজ আমার পুঁজি শেষ। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিক্রয় করলেও ৪ লাখ টাকা বিক্রয় করতে পারি। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজারে আছি। কিন্তু এমন খারাপ সময় কখনো দেখেননি বলেন তিনি।

মশিউর সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আকরাম হোসেন বলেন, পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের শেষ কোথায়। আজ এক বছরের বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজার দরপতন চলছে। আমাদের পুঁজি শেষ। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে আজ আমরা নি:স্ব। আগে বাজার খারাপ হলেও কিছুদিনের মধ্যেই আবার ঘুরে দাঁড়াত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বাজার খারাপ যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, দিনে দিনে বাজার খারাপ হতে হতে একদম খাদের কিনারে এসে ঠেকেছে। আমাদের ঈদ নেই, কোনো উৎসব নেই। ভেবেছিলাম, বাজেটে এমন কিছু থাকবে, যাতে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু বাজেট পেশের পর বাজার যেন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। ফলে টানা দরপতনের শেষ কোথায়।
বাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। বিনিয়োগকারীরা আশা করছিলেন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে বিভিন্ন প্রণোদনা থাকবে। কিন্তু তা-তো নেই-ই উলটো মূলধনি মুনাফার ওপর কর আরোপ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা ৫০ লাখ টাকার ওপরে ক্যাপিটাল গেইন করলে তার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ট্যাক্স দিতে হবে। যেটা আগে ছিল না। এ রকম আত্মযাতী সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, আগামী বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে কোনো দিক নির্দেশনা নেই। কিন্তু বর্তমান মন্দাবস্থায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা করা উচিত ছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষ একটি ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী বলেন, পুঁজিবাজারে টানা দরপতন হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। আর পুঁজিবাজারের মূল সমস্যা কি? তা আসলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বুঝতে পারছে না।

তিনি দু:খ করে বলেন, আমার হয়েছে জ্বর, আর আমাকে দেওয়া হয়েছে পেট খারাপের ওষুধ। তাহলে কি আমার রোগ ভালো হবে? মুলত পুঁজিবাজারের মূল মার্কেট যেখানে চলে না, সেখানে বিএসইসি এসএমই মার্কেট নিয়ে ব্যস্ত। অথচ এসএমই মার্কেটে কয়টা ভালো কোম্পানি আনা হচ্ছে? এসব কিছু এখন রিভিউ করতে হবে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৩৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৭৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮০৩ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৪ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫১ টির, দর কমেছে ৩০৮ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টির। ডিএসইতে ৪৩১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১১২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩১৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৫৭০ পয়েন্টে। সিএসইতে ২১১ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৬৩ টির এবং ২৩ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১০৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।