কক্সবাজার ও টেকনাফ প্রতিনিধি, দেশ প্রতিক্ষণ: সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফগামী দুটি ট্রলার ও কয়েকটি স্পিডবোট লক্ষ্য করে মায়ানমার থেকে আবারও গুলি ছোড়া হয়েছে। দফায় দফায় মায়ানমারের গুলিতে আতঙ্কিত সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। এতে চরম সংকটের মুখে দ্বীপের কয়েক হাজার মানুষ। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাফ নদীর নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। গত সাত দিন ধরে চলছে একই ধরনের ঘটনা। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফগামী দুটি ট্রলার ও কয়েকটি স্পিডবোট লক্ষ্য করে মায়ানমার থেকে আবারও গুলি চালানো হয়। এতে ওই নৌযানগুলো টেকনাফ না গিয়ে আবার সেন্টমার্টিনে ফিরে আসে। গত সাত দিন ধরে মায়ানমার থেকে এভাবে গুলি ছোড়া হচ্ছে। এতে আতঙ্কে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে যাত্রী ও পণ্যবাহী সব নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা চরম সংকটে রয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, দ্বীপের চিকিৎসাব্যবস্থা আগে থেকেই দুর্বল। রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে নিয়ে যেতে হয় টেকনাফ বা কক্সবাজার। সেখানে যাওয়ার মাধ্যম তো বন্ধ। অসুস্থ কারও অবস্থা খারাপ হলে তো ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে। চিকিৎসা, খাদ্যসংকট সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারের সহযোগীতা প্রয়োজন।

উপজেলা প্রশাসন জানায়, এই প্রবাল দ্বীপে বসবাস করেন ১০ হাজারের বেশি বাসিন্দা। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হওয়ায় বাসিন্দাদের খাদ্য ও নিত্যপণ্য আসে টেকনাফ থেকে। নৌযানই যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে প্রতিদিন ট্রলারে করে দ্বীপের বাসিন্দারা আসা-যাওয়া করেন। একইসঙ্গে খাদ্যপণ্য পরিবহনেও ব্যবহৃত হয় ট্রলার। গেলো কয়েকদিন গুলির মুখে এসব ট্রলার বন্ধ রাখা হয়েছে।

দ্বীপের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে নাফ নদীর মোহনা শেষে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা দিয়ে পার হওয়ার সময় মায়ানমার থেকে দ্বীপে যাতায়াত করা বোটগুলোকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। যার কারণে মানুষ প্রাণের ভয়ে পার হতে চায় না। তবে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী, নাকি বিদ্রোহীরা গুলি চালাচ্ছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। গত কয়েক দিনে দুই থেকে তিনটি বোটে এ রকম গুলি চালানো হয়। পরে বোট চলাচল বন্ধ করে দেন মালিকরা।

সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, মায়ানমারের গোলাগুলির কারণে সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। আমরা কষ্টে আছি। দ্বীপবাসীকে সবকিছু টেকনাফ থেকে আনতে হয়।

স্পিডবোটচালক বেলাল বলেন, সকালে শাহপরীর দ্বীপ থেকে স্পিডবোটে সাত যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে নাফ নদীর মোহনায় ১০-১২ রাউন্ড গুলি করে মায়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী। ঢেউয়ের কারনে কেউ হতাহত হয়নি।

সেন্টমার্টিন স্পিডবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, বোটে প্রকাশ্যে গুলি করতে দেখে মানুষ ভয়ে এ রুটে যাচ্ছেন না। তাছাড়া ওই পথ ছাড়া সেন্টমার্টিনে আসার বিকল্প কোনও ব্যবস্থা বা রুটও নেই। প্রতিদিন সেন্টমার্টিন-টেকনাফ নৌরুটে চারটি ট্রলার ছয়টি স্পিডবোটের মাধ্যমে শতাধিক মানুষ আসা-যাওয়া করার পাশাপাশি খাদ্য ও নিত্যপণ্য বহন করা হতো।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, সম্প্রতি মায়ানমার থেকে ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছে। তাই ওই নৌরুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে জরুরি ভিত্তিতে শাহপরীর দ্বীপ অংশ থেকে বিকল্প পদ্ধতিতে বঙ্গোপসাগর হয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায় কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই সংঘাত চলছে মায়ানমারের অভ্যন্তরে।

এর জেরে এখন টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে নাফ নদীর নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে মিয়ানমার থেকে ছোড়া হচ্ছে গুলি। এরই মধ্যে গেলো ৫ জুন সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার সময় নির্বাচনি সরঞ্জাম ও কর্মকর্তাদের বহনকারী নৌযানে গুলি ছোড়া হয় মায়ানমার থেকে। এতে ট্রলারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ হতাহত হয়নি। এরপর ৮ জুন পণ্যবাহী ট্রলারে আবারও গুলি করা হয়। এতে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ট্রলারে সাতটি গুলি লাগে।