দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেড গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর লভ্যাংশ সংক্রান্ত এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কোম্পানি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৩৫ টাকা ১৭ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি ১১ টাকা ৯৫ পয়সা লোকসান হয়েছিল। গত ৩১ ডিসেম্বর,২০২৩ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য ছিল মাইনাস ৫১ টাকা ০৩ পয়সা। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৮ জুলাই।
এদিকে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের লোকসানের বোঝা প্রতি বছরই বড় হচ্ছে।

একদিকে আয় ও পরিচালন মুনাফা কমছে। পাশাপাশি নিট লোকসান বাড়ায় ‘ডুবতে যাচ্ছে’ কোম্পানিটি। একই সঙ্গে কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসানও বছর বছর বাড়ছে। এ ছাড়া কোম্পানির বিতরণকৃত ঋণের খেলাপির হারও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে নিরীক্ষক। কোম্পানিটি টানা পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বড় লোকসানে রয়েছে।

মুলত নেতৃত্বের দুর্বলতায় এক সময়কার ভালো মানের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন কাপিটাল লিমিটেড টানা লোকসানের মুখে। কোম্পানিটির ভবিষ্যত নিয়ে বিনিয়োগকারীরা রয়েছেন অন্ধকারে। টানা পাঁচ বছর ধরেই একটানা লোকসান দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ধারাবাহিকভাবে কমছে ঋণ, আমানত ও পরিচালন আয়। এমনকি দৈনন্দিন অর্থের জোগান দিতে হচ্ছে ঋণ করে চলছে ইউনিয়ন ক্যাপটাল। এসব মুলে পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে ডুবতে বসেছে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেড। ঋণের নামে বের করে নেয়া অর্থ ফিরছে না কোম্পানিটিতে। এখন আমানতকারীদের অর্থও ফেরত দিতে পারছে না কোম্পানিটি।

নেতিবাচক দক্ষতায় আমানতকারীরাও মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। গত পাঁচ বছর ধরেই কমছে প্রতিষ্ঠানটির আমানতের পরিমাণ। একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে বিনিয়োগ ও সুদ আয়। ফলে সার্বিকভাবে কমে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন মুনাফা পর্যন্ত।

এছাড়া ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেড সর্বশেষ পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে লোকসানে রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সমাপ্ত অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে। এমনকি গত হিসাব বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি লোকসান গুনতে হয়েছে কোম্পানিটিকে। মূলত কোম্পানির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিনদিন বড় হওয়ায় এ লোকসানের বোঝাও বাড়ছে। মৃুলত চৌধুরী মনজুর লিয়াকতের দায়িত্ব পালনকালে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের লোকসান হয়েছে ১৭৪ কোটি টাকার বেশি।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাববছরে বিনিয়োগকারীদের পাঁচ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়। আর ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাববছরে বিনিয়োগকারীদের পাঁচ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়, যা তার আগের বছরে ছিল ১০ শতাংশ বোনাস। কোম্পানিটি ২০০৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। ২০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ১৭২ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। রিজার্ভ ঘাটতির পরিমাণ ৪৪৬ কোটি ২১ লাখ টাকা।

ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যমতে, কোম্পানির মোট ১৭ কোটি ২৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮৪৩টি শেয়ার রয়েছে। কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে ৩৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক ১৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে বাকি ৪৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ শেয়ার।

লোকসানের কারণ হিসাবে কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের খেলাপি ঋণ বাড়ায় সুদ-বাবদ আয় কমে গেছে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তার বিপরীতে সঞ্চিতি বাড়াতে হয়েছে। পাশাপাশি ব্রোকারেজ কমিশন-বাবদ আয়ও এ সময়ে কমেছে। এ সব কারণে কোম্পানিটিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লোকসান গুণতে হয়েছে।