চাঙা পুঁজিবাজারে চার কার্যদিবসে ৩ হাজার বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের গত সপ্তাহের চার কার্যদিবসে মধ্যে প্রথম কার্যদিবস দরপতনের হলেও তিন কার্যদিবস সূচকের বড় উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে চাঙা পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহে মাত্র চার কার্যদিবসে তিন হাজারের বেশি বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার ছেড়েছেন। এসব বিনিয়োগকারী গত সপ্তাহে তাঁদের হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব বন্ধ করে দিয়েছেন।
পুঁজিবাজারের বিও হিসাব সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিডিবিএলের বিও হিসাবসংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গত সপ্তাহের সোমবার থেকে নতুন অর্থবছর ২০২৪-২৫ শুরু হয়েছে। নতুন অর্থবছরের প্রথম সপ্তাহে শেয়ারবাজার দরপতনের ধারা থেকে বেরিয়ে কিছুটা উত্থানের ধারায় ফিরেছে।
তাতে পুঁজিবাজারে সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনও। গত সপ্তাহের চার কার্যদিবসে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪২ পয়েন্ট বেড়েছে। আর এক সপ্তাহের ব্যবধানে দৈনিক গড় লেনদেন প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১৬ কোটি টাকায়। তা সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীরা বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন।
সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ গত ৩০ জুন সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের শেষ দিনে দেশের শেয়ারবাজারে শেয়ারসহ বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৫ হাজার ৭৫১। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে অর্থাৎ ৪ জুলাই শেয়ারসহ বিও হিসাবের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ২ হাজার ৩৪৬–এ। অর্থাৎ মাত্র চার কার্যদিবসে ৩ হাজার ৪০৫টি বিও হিসাবে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা।
নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিনিয়োগকারী তাঁর বিও হিসাব থেকে সব শেয়ার বিক্রি করে দিলে ওই হিসাব শেয়ারশূন্য বিও হিসেবে থাকার কথা। তাতে শেয়ারসহ বিও হিসাব যত কমবে, শেয়ারশূন্য বিও তত বাড়বে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেটি ঘটেনি। কারণ, শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া বেশির ভাগ বিও হিসাব বন্ধ হয়ে গেছে।
সিডিবিএল সূত্রে জানা যায়, প্রচলিত নিয়মে প্রতিবছরের জুলাই মাসে বার্ষিক মাশুল দিয়ে বিও হিসাব হালনাগাদ রাখতে হয়। যাঁরা বার্ষিক মাশুল দিতে চান না, তাঁরা শেয়ার বিক্রি করে বিও হিসাব বন্ধ করে দেন। এতে বাজারে সক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা কমে যায়। গত সপ্তাহ শেষে শেয়ারবাজার সক্রিয় বিও হিসাব প্রায় ৪ হাজার কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৭১ হাজার ১২৫টিতে। ৩০ জুন এ সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৭৫ হাজার ১৪৬। সেই হিসাবে গত চার কার্যদিবসে শেয়ারবাজারে ৪ হাজার ২১টি সক্রিয় বিও হিসাব বন্ধ হয়ে গেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজারে মন্দাভাব চলছে। সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১ হাজার ১৫ পয়েন্ট বা ১৬ শতাংশ। এ সময়ে ৬ হাজার ৩৪৩ পয়েন্ট থেকে সূচকটি নেমে এসেছে ৫ হাজার ৩০০ পয়েন্টের ঘরে। ফলে হতাশ বিনিয়োগকারীরা বাজার ছাড়ছেন সুযোগ পেলেই।
দীর্ঘদিন শেয়ারের ওপর সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস আরোপ থাকায় বিনিয়োগকারীরা চাইলেও শেয়ার বিক্রি করতে পারেননি। কিন্তু গত ১৯ জানুয়ারি থেকে ধাপে ধাপে এই ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়। এতে বাজারে দরপতন শুরু হলেও বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ার বিক্রি সুযোগ তৈরি হয়। এ সুযোগে অনেক বিনিয়োগকারী লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে হলেও বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন।
সিডিবিএল-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিও হিসাবে বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ মাশুল বা ফি না দিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিও হিসাব বন্ধ করে দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। কত বিনিয়োগকারী শেষ পর্যন্ত বিও হিসাব বন্ধ করে দিচ্ছেন, এর প্রকৃত পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে জুলাই মাস শেষে।