দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি রিজেন্ট টেক্সটাইলের দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে ২০২০ সাল থেকে লভ্যাংশ বঞ্চিত শেয়ারহোল্ডারা। তবুও থেমে নেই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার নিয়ে কারসাজি। শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে মো. আব্দুল কাদেরকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজিকারীর জরিমানা করে সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসির একটি তদন্ত কমিটি ২০১৭ সালের ২ জুলাই থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত সময়ের রিজেন্ট টেক্সটাইলের লেনদেন তদন্ত করে। এতে আব্দুল কাদের ও তার সহযোগীরা সিরিজ লেনদেনের মাধ্যমে কারসাজি করেছে বলে তদন্তে উঠে আসে।

এর মাধ্যমে আব্দুল কাদের ও তার সহযোগীরা রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ধারা ১৭(ই)(৫) ও (২) লঙ্ঘন করেছে। এই বিষয়ে শুনানিতে তলব করলে আব্দুল কাদের ২০২৩ সালের ১৯ মার্চ উপস্থিত হতে পারবেন না বলে জানান এবং সময় চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু এরপর সময় বাড়ানো হলেও তিনি উপস্থিত হননি।

আব্দুল কাদেরের এমন কর্মকাণ্ডে তিনি স্বেচ্ছায় কমিশনের আইনের প্রতি ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন বলে বিএসইসি মনে করে। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য বলেই ধরে নেয়। যার আলোকে কমিশন তাকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে এবং অন্যদের সতর্ক করেছে।

এদিকে সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কর্মকর্তারা কোম্পানিটির কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে কার্যক্রম বন্ধ দেখতে পান। সিকিউরিটিজ আইনানুসারে কারখানা কার্যক্রম বন্ধ থাকলে সে তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদিও স্টক এক্সচেঞ্জকে এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানায়নি রিজেন্ট টেক্সটাইল।

তথ্যানুসারে সর্বশেষ ২০২০-২১ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক তথ্য প্রকাশ করেছে রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস। এরপরের দুই হিসাব বছর অর্থাৎ ২০২১-২২ এর নিরীক্ষিত আর্থিক তথ্য ও ২০২২-২৩ হিসাব বছরের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রকাশ করেনি কোম্পানিটি। ফলে কোম্পানিটির প্রকৃত আর্থিক ও ব্যবসায়িক তথ্য জানতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।

৩০ জুন সমাপ্ত ২০২১ হিসাব বছরে রিজেন্ট টেক্সটাইলের আয় হয়েছে ১১০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৮৬ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ২০ কোটি ৮০ লাখ টাকার বেশি, আগের হিসাব বছরে যা ছিল প্রায় ৪ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির লোকসান বেড়েছে প্রায় ১৭ কোটি টাকা।

২০২১ হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৬২ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৩১ পয়সা। ৩০ জুন ২০২১ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৬ টাকা ৫২ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময় শেষে যা ছিল ২৮ টাকা ৪৬ পয়সা। আলোচ্য হিসাব বছরে কোনো লভ্যাংশের সুপারিশ করেনি রিজেন্ট টেক্সটাইলের পরিচালনা পর্ষদ।

৩০ জুন ২০২০ সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য উদ্যোক্তা পরিচালক বাদে অন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১ শতাংশ নগদ ও সব ধরনের শেয়ারহোল্ডারকে ১ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে রিজেন্ট টেক্সটাইল। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩১ পয়সা। আগের হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৯৩ পয়সা (পুনর্মূল্যায়িত)। ৩০ জুন ২০২০ শেষে প্রতিষ্ঠানটির এনএভিপিএস দাঁড়ায় ২৮ টাকা ৪৬ পয়সায়, আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ৩০ টাকা ২১ পয়সা।

২০১৫ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১৫০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১২৮ কোটি ৬১ লাখ ২০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ১৪০ কোটি ৫ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১২ কোটি ৮৬ লাখ ১২ হাজার ১৩৮। এর মধ্যে ৫৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বাকি ৪০ দশমিক ৮৪ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।