দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা অর্থ আত্মসাৎ ও কর ফাঁকির মামলায় হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক ও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ভ্রমন ও আবাসন খাতের কোম্পানি বেস্ট হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান আলোচিত ব্যবসায়ী আমিন আহমেদকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামস জগলুল হোসেনের আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেন আমিন আহমেদ।

আমিন আহমেদের পক্ষে অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী জামিন চেয়ে শুনানি করেন। জামিনের বিরোধিতা করেন দুদক আইনজীবী। শুনানি শেষে বিকেল ৩টার দিকে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। ২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট বাজারের ৩০.২৫ কাঠা জমি ক্রয় দেখিয়ে প্রায় ৯৫ কোটি টাকা গোপন করার চেষ্টা এবং সাড়ে আট কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু এবং হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক।

বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক নুরুল হুদা। মামলার আসামিরা হলেন: বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, তার স্ত্রী শিরিন আক্তার, তার ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্না, বাচ্চুর ছেলে শেখ রাফা হাই ও শেখ ছাবিদ হাই অনিক এবং হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ।

মামলা সূত্রে আরও জানা যায়, জমি বিক্রয় ও প্রকৃত মূল্য গোপন করতে শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে সহযোগিতা করেছেন আমিন আহমেদ। তিনি ১৩৪টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও নগদে ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন। অন্যদিকে, তাদের আয়কর নথিতে জমির জন্য মূল্য প্রদর্শন করেছেন ২৪ কোটি ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৪ টাকা। অর্থাৎ শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর আয়-ব্যয় এবং প্রকৃত সম্পদের মধ্যে কোনো সামঞ্জস্যতা পাওয়া যায়নি।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১২ সালের ৮ জুলাই ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকার ৬ নম্বর প্লটের ৩০.২৫ কাঠা জমি ১১০ কোটি টাকায় ক্রয়ের জন্য আসামি আমিন আহমেদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিপত্র করেন আরেক আসামি শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু। চুক্তি করা জমির মূল্য ১১০ কোটি টাকা এবং চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের সময় পরিশোধিত অর্থ ১০ কোটি টাকা।

চুক্তিপত্র অনুযায়ী দুটি দলিলে ভূমির দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়, যার মধ্যে ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর প্রথম দলিলে ১৮ কাঠা জমির দাম নয় কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে গ্রহীতা শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, শেখ শাহরিয়ার পান্না ও শিরিন আক্তার।

অন্যদিকে, দ্বিতীয় দলিলে ওই একই বছরে ১২.২৫ কাঠার দাম ছয় কোটি ২৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। যেখানে গ্রহীতা হলেন শেখ ছাবিদ হাই অনিক ও শেখ রাফা হাই। অর্থাৎ জমির মোট রেজিস্ট্রেশন মূল্য ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশনে মূল্য ৯৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা কম দেখিয়ে অবৈধ আয় গোপন করার চেষ্টা করেন আসামিরা। এছাড়া জমির মূল্য কম দেখিয়ে সরকারের আট কোটি ৫২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার রাজস্বও ফাঁকি দিয়েছেন।