শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ‘কারসাজি’র ভীতিতে পুঁজিবাজার বিমুখ হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। কারসাজির শেয়ারের দাপটে শঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা ভালো শেয়ারও বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে প্রতিদিনই কমেছে শেয়ারের দর। টানা পতনের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দেশের পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় সমস্যা শেয়ার নিয়ে কারসাজি। সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দরপতনের মধ্যেও ডিএসইতে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে থাকা বেশির ভাগ কোম্পানিই ছিল কারসাজির শেয়ার। অথচ এ সময়ে ফান্ডামেন্টালি স্ট্রং অনেক ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ারদর কমে তলানিতে এসে ঠেকেছে।

তাহলে কীভাবে বাজার নিয়ে আস্থা থাকবে বিনিয়োগকারীদের? এছাড়া দীর্ঘদিন বাজারে কোনো ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। যেসব কোম্পানি বাজারে নতুন বিনিয়োগকারী নিয়ে আসবে। তারা বলেন, বাজারে এমন সব কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে, যেসব কোম্পানি বছর না ঘুরতেই লোকসান গুনছে?

এদিকে চলতি বছরের জুলাইয়ে পুঁজিবাজারের মূল্যসূচক বাড়লেও কমেছে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের ৩০ জুন থেকে চলতি মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৫৬ পয়েন্ট বাড়লেও আলোচ্য সময়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী কমেছে প্রায় ২০ হাজার। সাধারণত সূচক বাড়লে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ার কথা। কিন্তু আলোচ্য সময়ে সূচক বাড়লেও উল্টো কমে গেছে বিনিয়োগকারী। মুলত বিনিয়োগকারী কমার পেছনে মুল কারণ আস্থা সংকট ও ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারের দর না বাড়া।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, অর্থনৈতিক সংকট, আমানতের সুদ বেশি দেওয়ায় ও আসন্ন মুদ্রানীতির প্রভাবে পুঁজিবাজারের সূচকের মিশ্র প্রবণতা থাকলেও অধিকাংশ শেয়ারের ক্রেতা সংকটে ভুগছে। বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর আলোচ্য সময়ে কমে গেছে। যে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে বাজার বিমুখ হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য অনুসারে, গত মাসের ৩০ তারিখে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী ছিল ১৭ লাখ ৭৫ হাজার ১৪৬ জন। চলতি মাসের ১৪ তারিখে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩০ জন। সে হিসাবে ১৫ দিনে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী কমেছে ১৯ হাজার ৬১৬ জন।

বিনিয়োগকারীদের মতে, ভালো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনলেও ভালো মুনাফা হবে তা নিশ্চিত বলা যায় না। উপরন্তু খারাপ প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারে বিনিয়োগ করলে বেশি মুনাফা হচ্ছে। তাই সচেতন বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার ছেড়ে দিচ্ছেন। কারণ পুঁজিবাজারের প্রতি মানুষের আস্থা কমছে। অনেকে শেয়ার বিক্রি করে চলে যাচ্ছেন।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ব্যাংকের সুদের হার কয়েক দফা বৃদ্ধির ফলে গত এক বছর ধরে পুঁজিবাজারে নতুন কোনো বিনিয়োগ আসেনি। বরং পুঁজিবাজার থেকে টাকা বের হয়ে গেছে। ফলে বাজারে শেয়ারের দরপতন অব্যাহত আছে। এছাড়া বর্তমানে বন্ড এবং এফডিআর করলে আকর্ষণীয় মুনাফা দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ পুঁজিবাজাওে কেন বিনিয়োগ করবে? ফলে সবাই এখন বন্ড ও এফডিআরে বিনিয়োগ করছে।

তিনি বলেন, আগামী ১৮ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে। ইতোমধ্যে ব্যাংক ঋণের সুদহার এরই মধ্যে ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এরপরও সুদহার বাড়িয়ে টাকাকে আরও দামি করে তোলা হতে পারে আসন্ন মুদ্রানীতিতে। এতে ঋণের সুদের হার আরও বাড়বে। ঋণের সুদের হার বাড়লে আমানত সংগ্রহের জন্যও সুদের হার বাড়বে। এর ফলে আমানতকারীরা ব্যাংকে টাকা রাখলে আরও বেশি সুদ পাবেন। এর প্রভাবেও বাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা ।