রেমিট্যান্স প্রণোদনায় পুঁজিবাজারের ৮ ব্যাংকের জালিয়াতি
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রণোদনার নগদ অর্থ বিতরণে ১১ ব্যাংকের জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) দপ্তর। এর মধ্যে পুঁজিবাজারের রয়েছে ৮ ব্যাংক। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের প্রণোদনা বিতরণ নিয়ে সিএজির কমপ্লায়েন্স অডিট প্রতিবেদনে এসব অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।
সিএজির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্সের প্রণোদনা-সংক্রান্ত ৬ হাজার ১১৯টি লেনদেনের ক্ষেত্রে গুরুতর অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। এতে রাষ্ট্রের ৬৪ কোটি ৪৩ লাখ ২১ হাজার ৫৮ টাকা ক্ষতি হয়েছে। সিএজি দপ্তর রেমিট্যান্সের প্রণোদনা বিতরণ নিয়ে ২০১৯-২০ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে এসব নিরীক্ষা চালায় ।
নিরীক্ষায় অনিয়ম ধরা পড়া রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক হলো সোনালী, অগ্রণী, জনতা এবং রূপালী। এরমধ্যে রূপালী ব্যাংক শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। অন্যদিকে, বেসরকারি ব্যাংকগুলো হলো পূবালী, ডাচ্-বাংলা, ব্র্যাক, এনসিসি, সাউথইস্ট, মিউচুয়াল ট্রাস্ট এবং ব্যাংক এশিয়া। এসব ব্যাংক শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত।
অডিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ব্যাংকগুলো ৬ হাজার ১১৯টি লেনদেনের ক্ষেত্রে গুরুতর অনিয়ম করেছে। আর অনিয়মের ৬৪ কোটি ৪৩ লাখ ২১ হাজার ৫৮ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সিএজির অডিট প্রতিবেদন অনুযায়ী, জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস ও ফরেন ওয়েজ আর্নার্স শাখার মাধ্যমে ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। একইভাবে সোনালী ব্যাংকের দিলকুশার ওয়েজ আর্নার্স শাখায় ট্রেড ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে জালিয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
অন্যদিকে, অগ্রণী ব্যাংকের দিলকুশা শাখা, রূপালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখা, ব্যাংক এশিয়ার কারওয়ান বাজার শাখা এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মতিঝিল শাখার মাধ্যমে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এ ছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের দিলকুশা শাখা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রধান শাখা, এনসিসি ব্যাংকের সিলেটের চৌহট্টি শাখা রেমিট্যান্সের নগদ প্রণোদনা
অর্থ পরিশোধ না করেই বানোয়াটভাবে অতিরিক্ত খরচ পরিশোধ হিসাবে দেখানো হয়েছে। এতে সব মিলিয়ে ক্ষতি প্রায় ৪৯ কোটি ৭ হাজার টাকা।অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর অসহযোগিতার কারণে রেমিট্যান্সের বিপরীতে সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ পুরোপুরি বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটের প্রণোদনার জন্য বরাদ্দ অর্থ ছিল ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা।
এর মধ্যে নগদ প্রণোদনা সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে ২ হাজার ৬৪৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। অবণ্টিত থাকে ৪১১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বা ৮৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অডিট প্রতিবেদনে এসবকে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম উল্লেখ করা হয়েছে।
সিএজির অডিট প্রতিবেদনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, রেমিট্যান্স বাড়াতে পর্যায়ক্রমে প্রণোদনা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আবার কিছু ব্যাংক স্বেচ্ছায় প্রণোদনা দিয়েছে। সেখানে অনিয়ম হলে প্রবাসীরা বঞ্চিত হবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বিষয়ে নজরদারি করবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে।