ঢাকার সহিংসতায় অংশ নেয় রাজশাহীর দেড় শতাধিক জঙ্গি!
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় চালানো নাশকতা ও তাণ্ডবে অংশ নিয়েছিল রাজশাহী বিভাগের জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। এছাড়া এতে অংশ নিয়েছে জেএমবির দেড় শতাধিক জঙ্গি সদস্যও। ঢাকায় তাণ্ডব চালিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফেরার পথে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা স্বীকার করেছেন যে, শীর্ষ নেতাদের নির্দেশেই সরকার পতনের জন্য এ আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন তারা।
তবে ঢাকা ও গাজীপুরে ১৮ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত নাশকতার স্থানগুলোতে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ সিম বাইরে থেকে ঢুকেছে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি জানান, বিএনপি-জামায়াতের লোকজনের গতিপ্রকৃতি নাশকতার স্থানগুলোমুখী ছিল। বাইরে থেকে প্রায় ১ লাখ সিম ঢুকে সেসব স্থানগুলোতে। শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ডাকভবনে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৪তম জন্মদিন উপলক্ষে সারাদেশে এক লাখ গাছের চারা রোপণে ‘শান্তির জন্য বৃক্ষ ট্রি ফর পিস’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
পলক বলেন, বিভিন্ন জেলার যেসব স্থানে ‘রেড এলার্ট’ জারি ছিল সেখানে ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই কোন সহিংসতা হয়নি। ঢাকার যে ১০ থেকে ১৫টি জায়গায় অতিরিক্ত ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ নতুন সিমকার্ডের ব্যবহারকারীরা আসে, সেগুলোর তথ্য-উপাত্তা বিশ্লেষণে দেখা যায় রেড এলার্টভুক্ত এলাকার বিএনপি, ছাত্রদল, জামাত-শিবিরের চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা ঢাকামুখী ছিল এবং ঢাকায় তারা অবস্থান গ্রহণ করেছে। তাদের অবস্থানকালেই ১৮ থেকে ২১ জুলাই সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, নাশকতাকারী ও মদদদাতা সবাইকে খুঁজে আইনের আওতায় আনতে চলছে অভিযান। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ভর করে রাজধানীতে ব্যাপক সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও ও তাণ্ডব চালায় দুর্বৃত্তরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী বলছে, গত ১৮ ও ১৯ জুলাইয়ের নাশকতায় ঢাকার বাইরে থেকেও অংশ নেন অনেকে।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভাষ্য, ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলো বিচ্ছিন্ন করতে পরিকল্পনামাফিক রাজশাহী বিভাগ থেকে নাশকতায় অংশ নিয়েছিল জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। পরে কারফিউ শিথিল হলে ঢাকা থেকে রাজশাহী ফেরার পথে গ্রেপ্তার হন অনেকেই। রাজশাহী বিভাগের অনেকেই ঢাকা ও আশপাশের জেলায় সংঘটিত সহিংসতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। পরে নিজ নিজ এলাকায় ফেরার সময় গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেকেই।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা স্বীকার করেছেন যে, তারা গত ১৮ জুলাই থেকে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় জড়ো হন এবং শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে দুদিন ধরে চালানো সহিংসতায় অংশ নেন। এছাড়া, নাশকতায় অংশ নেন জঙ্গি সংগঠন জেএমবির রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁর অন্তত দেড়শ সদস্য।
গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, জঙ্গি সদস্যরা নিয়মিত থানায় হাজিরা দিলেও নাশকতা চলাকালীন তারা ছিল লাপাত্তা। তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় নাশকতায় অংশ নিতে এলাকা ছেড়েছিল জঙ্গিরা।
রাজশাহী র্যাব-৫-এর অধিনায়ক ফিরোজ কবির জানান, তারা নিশ্চিত যে, জেএমবির সদস্যরা ঢাকা, গাজীপুর ও নরসিংদী এলাকায় সংঘটিত নাশকতায় অংশ নিয়েছে। বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে এবং এ বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এদের দেয়া তথ্য-উপাত্ত নিয়ে র্যাব অধিকতর তদন্ত চালাচ্ছে এবং অন্যান্য জঙ্গিকে গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশ পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্তি ডিআইজি বিজয় বসাক জানান, জামায়াত-শিবির ও বিএনপি নেতাকর্মী এবং জঙ্গিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি পরিকল্পনাকারী ও মদদদাতাদের ধরতে অভিযান চলছে। যারা আর্থিকভাবে সহায়তা করেছে এবং উস্কানি দিয়েছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
পুলিশ জানায়, রাজশাহী বিভাগে নাশকতায় অন্তত একশ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশের পিকআপ ও অবকাঠামোগত আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সাড়ে ৩৩ লাখ টাকা। সহিংসতার ঘটনায় বিভিন্ন থানায় ৬৭ মামলায় পুলিশ ৯৫১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতা ও অর্ধশত জঙ্গি রয়েছেন।