ব্যর্থ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দুই কমিটি!
তৌফিক ইসলাম ও শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলন আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। দলের ভেতরে ‘কৌশলগত ব্যর্থতার’ সমালোচনা চলছে। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সংঘটিত সহিংসতা মোকাবিলায় ও হতাহত ঠেকাতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক-বাহক যে দলটির নেতৃত্বে একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে, যে দলের নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা এমনভাবে তলানিতে পৌঁছেছে যা কোটা সংস্কার আন্দোলন না হলে টের পাওয়া যেত না। প্রশ্ন উঠেছে, ক্ষমতাসীন দলটির এর দুর্বলতার কারণ কী?
বিশ্লেষকরা বলছেন, এর কারণ রাজনৈতিক দলটি টানা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলীয় নেতাকর্মীরা গ্রুপিংয়ে জড়িয়ে পড়েছেন। দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত একই অবস্থা বিরাজ করছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ঐতিহ্যবাহী এ দলটির পরতে পরতে ঘুণপোকা ধরেছে। ফলে এমন অবস্থায় ক্ষমতাসীন দলটির সর্বস্তরের সংগঠনের নেতৃত্ব বদলাতে পারে এমন গুঞ্জন বেশ জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছে। ফলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর থানার ১০৮টি ইউনিট কমিটির মধ্যে ২৭টি কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় মোহাম্মদপুর সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অন্তর্গত তিন থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় এসব কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। বৈঠক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে সংঘাত, সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যর্থতা ও আন্দোলনে অংশগ্রহণ না করার জন্য এসব ইউনিট কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া ব্যর্থতার দায়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দুই কমিটি খুব শিগগিরই ভেঙে দেওয়া হবে বলে আওয়ামীলীগের বিশ্বস্ত একটি সূত্র দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে নিশ্চিত করেছে। আগস্টের পর শুরু করে ডিসেম্বরের মধ্যে দল পুনর্গঠন করা হবে আলোচনা আছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন ও উদ্ভূত পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষেত্রে দলের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই। ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে আগাম সম্মেলনের বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
সূত্রগুলো জানায়, আগাম সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনাও বেশ প্রবল হয়ে উঠেছে। কোটা সংস্কারবিরোধী আন্দোলন আওয়ামী লীগকে সংস্কারের প্রয়োজন শিখিয়ে দিয়ে গেছে কী করা উচিত, কী করতে হবে সেই পথ দেখিয়ে দিয়েছে। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা ও দলের অনৈক্যের আসল চিত্র প্রকাশ পেয়েছে।
সূত্রমতে, দলের এই দুর্বলতা কাটাতে নেতৃত্ব বদলানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা কোথায় ব্যর্থতা, কোথায় দুর্বলতা ছিল, সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন। এ ছাড়া, মাঠপর্যায়ের কর্মীরাও নেতৃত্ব বদলানোর জোরালো আওয়াজ তুলেছেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলন ঘিরে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের পক্ষ থেকেও নেতৃত্ব বদলের জোরালো দাবি উঠেছে।
মাঠপর্যায়ের কর্মীরা মনে করেন, ক্ষমতার বাকি সাড়ে চার বছর পার করতে হলে যেকোনো মূল্যে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা দূর করতে হবে। তারা আরও বলেন, বৈরী পরিস্থিতি মাত্র শুরু হলো, সামনের দিনগুলোয় আরও জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে সরকারকে। ফলে নড়বড়ে সংগঠন থাকলে বিপদ মোকাবিলা করা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে সরকারের জন্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বলেন, প্রথম ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করতে চান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রথমেই দক্ষ-যোগ্য নেতৃত্বের হাতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ তুলে দিতে চান প্রধানমন্ত্রী।
ঘনিষ্ঠ ওই সূত্রগুলো জানায়, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দুর্বলতা দলীয় সভাপতিকে বেশ অবাক করেছে। কোটা আন্দোলন পরিস্থিতি সামাল দিতে মহানগর আওয়ামী লীগ ও মহানগর এলাকার সংসদ সদস্যদের (এমপি) ভূমিকা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে হতাশ করেছে বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। গত কয়েক দিনের কর্মকাণ্ড নিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের থানা পর্যায়ের অন্তত ২০ নেতার সঙ্গে কথা হয় দেশ প্রতিক্ষণের। তারা সংগঠনের ব্যর্থতা নিয়ে নানা মন্তব্য করেন। তবে প্রকাশ্যে এ নিয়ে কথা বলতে চান না।
এক নেতা বলেন, মূল ব্যর্থতা হলো ১৫ বছরে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের পূর্ণাঙ্গ আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি নেই। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত যুবলীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা দীর্ঘদিন ধরে চলছে ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে। একই সঙ্গে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা অনেক নেতার থেকে নিজেদের লোকেরা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।
কিন্তু গত কয়েক দিনের বিশেষ পরিস্থিতিতে সুবিধাবাদীরা মাঠে ছিল না। সাবেক ছাত্রনেতাদের অনেকেই মাঠে থেকে সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়েছেন। থানা পর্যায়ের নেতাদের অভিযোগ, আন্দোলন মোকাবিলায় নেতাকর্মীদের একটি অংশ মাঠে থাকলেও প্রয়োজনের সময় বেশির ভাগ স্থানীয় এমপি, মেয়র, কাউন্সিলরদের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। মাঠে থাকা নেতাকর্মীরা আর্থিক সংকটে থাকলেও তেমন সাহায্য করা হয়নি।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের একটি থানা শাখা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, আন্দোলনে নেতাকর্মীদের খোঁজ নেননি এমপিরা। নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে কোনো ধরনের সহযোগিতা করেননি। বৃহস্পতি ও শুক্রবারের সহিংসতা নেতাকর্মীদের আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। কিন্তু এর আগে হাতে গোনা কয়েকজন এমপি ছাড়া কাউকে মাঠে দেখা যায়নি।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা জুড়ে যে তাণ্ডব এবং নাশকতা হয়েছে তাতে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং সমন্বয়হীনতা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরের উত্তর এবং দক্ষিণের সাংগঠনিক দুর্বলতা ভয়ঙ্করভাবে ফুটে উঠেছে সাম্প্রতিক সময়ের সংকটে।
আর এর পেছনে কারণ হিসেবে অনেক নেতাই মনে করছেন কমিটি বাণিজ্য, পদ বাণিজ্য হওয়ার কারণেই আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ একেবারে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। প্রায় তিন বছর হতে চলল কিন্তু এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি তালিকা দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল বটে তবে সেই তালিকা হস্তান্তর করার পর থেকেই জানা যায় যে টাকা নিয়ে বিভিন্ন অযোগ্য এবং অনুপ্রবেশকারীকে কমিটিতে রাখা হয়েছে এবং তাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
আর এ কারণে আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশে ওই কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এবার যখন সংকট শুরু হয় তখন দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বিভিন্ন জায়গায় যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারিননি। এমনকি অনেক কেন্দ্রীয় নেতাকেও মাঠে দেখা যায়নি। ঢাকা মহানগরের দুই কমিটি যে সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী অবস্থানে নেই তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগরকে ঢেলে সাজাতে যাচ্ছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বর্তমান অবস্থার উন্নতি হলে ঢাকা মহানগরের দুই কমিটি ভেঙে দেওয়া হতে পারে এবং আহবায়ক কমিটি গঠিত হতে পারে। কারণ ইতোমধ্যে এই দুই কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে আওয়ামী লীগ দুটি কমিটিতে যারা রাজপথে লড়াই সংগ্রাম করতে পারে, যারা দুঃসময়ে দলের জন্য কাজ করেছে এবং ত্যাগী পরীক্ষিত তাদের সামনে আনার পরিকল্না নেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের একটি কার্যনির্বাহী কমিটির সভা আয়োজন করবেন এবং এই সভায় তিনি সাম্প্রতিক সময়ে নাশকতা এবং পৈশাচিকতার সময় আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন বলে জানা গেছে। তবে তার আগেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কয়েকটি বক্তব্যে দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আত্মসমালোচনা করছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে কথা বলেছেন।
সুত্র মতে, মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের অন্তর্গত সব থানা ও ওয়ার্ড শাখার সম্মেলন শেষ হওয়ার পর দীর্ঘদিন পার হলেও দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বে ও নানান জটিলতায় ঝুলে ছিল কমিটি গঠনের বিষয়টি। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে প্রস্তাবিত খসড়া কমিটি জমা দেওয়া হয়েছে। তবে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে এ কমিটিগুলোর নাম জমা দেয়া হয়। আর এ জমা দেয়ার পরই সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য।
অভিযোগ উঠেছে যে, ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণে ওয়ার্ড এবং থানা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনে নজিরবিহীন পদ-বাণিজ্য হয়েছে।
তবে খসড়ায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বিতর্কিত, সমালোচিত, হাইব্রিড, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। অনেকেই পদ পেতে তদবির করছেন। আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও উঠেছে।
এমনকি এক ব্যক্তি একাধিক পদে থাকতে পারবেন না বলে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা উপেক্ষা করে বেশিরভাগ কাউন্সিলরকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদে আনতে যাচ্ছে উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। লাখ লাখ টাকার বিনিময় হয়েছে এবং এর সাথে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জড়িত। এবিষয়টি জানার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এনিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু এর মধ্যেই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার গোচরে এসেছে। তিনি এনিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন তার নির্দেশে এই কমিটি গুলো স্থগিত হয়ে আছে। আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এই কমিটি গুলো অনুমোদিত হচ্ছে না। এগুলো বাতিল হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কারা কারা পদ-বাণিজ্য করেছেন তা খতিয়ে দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, খসড়ায় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাদের নাম রয়েছে তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এর মধ্যে মামলার আসামি, মাদক কারবারি, চাঁদাবাজি, নব্য আওয়ামী লীগার এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে অভিযুক্ত হয়ে বহিষ্কৃতদের নাম রয়েছে। রাজনীতিতে পূর্বে কোনো পদ না থাকলেও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতির ছেলের বন্ধু ও সাধারণ সম্পাদকের ভাই ও ভাগনেসহ অনেকেরই নাম রয়েছে খসড়ায়। এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছিল ক্ষোভ।
এ বিষয়ে সম্প্রতি ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে তলব করা হয় নগর দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে। খসড়া কমিটির অসামঞ্জস্যতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তারা একে অন্যকে দোষারোপ করেন। সমাধান না হলে কমিটি দলের সভাপতির কাছে উপস্থাপন করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন।
এ সময় ঢাকার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী এমপির এলাকায় কমিটি নিয়ে নয়ছয় করায় বিষয়েও জানতে চান দলের সাধারণ সম্পাদক। সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-৯ আসনের এমপি ও মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর পরামর্শ না শোনায় তিনি দলীয় প্রধানের কাছে নালিশ করেন। ঢাকা-৭ আসনের এমপি মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম ও ঢাকা-৬ আসনের এমপি সাঈদ খোকনের এলাকায় কমিটির বিষয়ে অবগত না করায় তারা দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে নালিশ করেন।
জানা গেছে, প্রস্তাবিত কমিটিতে মতিঝিল থানার অন্তর্গত ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ সম্পাদকের পদ ওয়াহিদুর রহমান চৌধুরী ওয়াহিদ নাম রয়েছে। তিনি দক্ষিণের সভাপতি মন্নাফীর ছেলে আহমেদ ইমতিয়াজ আহমেদ গৌরবের বাল্যবন্ধু ও ব্যবসায়ী অংশীদার। এই ওয়ার্ডে সভাপতি পদে প্রস্তাব করা হয়েছে শাহিনুর রহমান শাহীনের নাম। যার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে এবং এ-সংক্রান্ত কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। বেশ কয়েকবার শাহীন জেলও খাটেন। ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গেও সে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।
১০ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রস্তাব করা হয়েছে মাহবুবুল হক হীরককে। ক্যাসিনো কর্মকাণ্ডের জন্য কাউন্সিলর পদ থেকে বরখাস্ত মোস্তাবা জামান পপি পদ পেতে যাচ্ছেন পল্টন থানায়। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আ ফ ম ইফতেখার রহমান জয়ের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। শাহজানপুর থানাধীন ১১ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তার খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠ নুরের নবী ভূঁইয়া রাজু ও বি এম ফরহাদ অংকুর। তাদের বিরুদ্ধেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে যাচ্ছেন শেখ এনায়েত করিম বাবলু। মন্নাফীর ছেলে গৌরব পেতে যাচ্ছেন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতির পদ। গৌরব কাপ্তানবাজারে মুরগির বাজারের মুরগি বেচাকেনার পাশাপাশি আশপাশের এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন। তার হয়ে চাঁদা তুলতে রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ জনের বিশাল বাহিনী।
এদিকে দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুনের ভাগনে ও ভাই পেতে যাচ্ছেন ওয়ার্ড ও থানায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ। হুমায়ুনের ভাই কাউন্সিলর মকবুল হোসেন লালবাগ থানার সভাপতি পদে ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হতে যাচ্ছেন আপন ভাগনে বখতিয়ার হোসেন।