দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ‘নাশকতাকারীদের’ ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গত শনিবার রাত থেকে চিরুনি অভিযান শুরু করেছে। ছবি এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে নাশকতাকারীদের শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তারে ব্লক রেইড চলছে। এদিকে হঠাৎ সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা।

সঠিক পরিসংখ্যান দিতে না পারলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এরই মধ্যে বিএনপিসহ বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ নেতাসহ ৬ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত কয়েকদিনে অনেক নেতাকর্মীর বাসাবাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তল্লাশি ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপি ও সংশ্লিষ্টদের।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারই দায়ী। এখন নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য মিডিয়াকে ব্যবহার করে বিরোধী দলগুলোর ওপর দায় চাপানোর জন্য অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে সরকার। সেই উদ্দেশ্যেই বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক দুর্বল থাকায় আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি, নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের অফিসগুলোতে অভিযান চালিয়ে সব নিয়ে গেছে। যতটুকু জেনেছি, দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অবিলম্বে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, নির্যাতন বন্ধ এবং আটক নেতাকর্মীদের সন্ধান ও মুক্তির দাবি জানান মির্জা ফখরুল।

জানা গেছে, সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় নাশকতার দায়ে ২০০টির বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন থানায়। সারা দেশে ইন্টারনেট সংযোগ সীমিত থাকা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিএনপিসহ বিরোধী দলের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা ভেঙে পড়েছে। তবে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দাবি, দলীয় নির্দেশনা না থাকলেও বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন। এখন সমগ্র নাশকতার দায় তাদের ওপর দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপি ও বিরোধী দলের যেসব শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার: বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, জহির উদ্দিন স্বপন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি,

সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, আন্তর্জাতিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, যুববিষয়ক সহসম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল আলম নিরব ও সদস্য সচিব মো. আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল আলম তেনজিং ও সৈয়দ জাহাঙ্গীর হোসেন।

এ ছাড়া যুবদলের সাবেক নেতা এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা দক্ষিণের সাদ মোর্শেদ পাপ্পা শিকদার, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর ছেলে সানিয়াত, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম, বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর হেনা এবং ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক পয়গাম আলী।

বিএনপির পাশাপাশি মিত্র রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব যোবায়ের, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলামসহ শতাধিক নেতাকর্মী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) আন্দালিব রহমান পার্থ, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তারেক রহমানকে আটক করা হয়েছে।

উল্লিখিত যেসব নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই নিজ নিজ দলের জন্য সাংগঠনিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোটা আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে শুধু জামায়াতের এক হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রের দাবি।