পুঁজিবাজারে টানা দরপতন ঠেকাতে ব্যর্থ নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সূচক উধাও ৫৩ পয়েন্ট
শহীদুল ইসলাম ও মনির হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টানা দরপতন ঠেকাতে পারছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এমনকি দরপতন ঠেকাতে কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে টানা দরপতন হলেও পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপই চেখে পড়ছে না।
বরং দুর্বল মৌল ভিত্তি আইপি শেয়ার দিয়ে বাজারকে আরো অস্থিতিশীল করছে। এছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতার পাশাপাশি সংস্থাটি কারসাজি রোধেও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আস্থা ও তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক দরপতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং বিএসইসি চেয়ারম্যান মুখে কুলপ দিচ্ছে। এর আগে বিনিয়োগকারীদের বলা হতে আপনারা নির্ভয়ে বিনিয়োগ করুন আপনাদের পুঁজির নিরাপত্তা দিব। কিন্তু নিরাপত্তা তো দুরের কথা বাজার ইস্যুতে মুখ খুলছে না বিএসইসি। ফলে বিনিয়োগকারীরা কোন আশায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে এমন প্রশ্ন তাদের। এছাড়া রোড শোর নামে বিদেশে ভ্রমন করলেও বাজারে কোন বিদেশী বিনিয়োগ নেই বললেই চলে বলে জানান তারা।
একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, কিছুদিন পরপর বাজারের উত্থান পতনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। মুনাফার আশায় বিনিয়োগ করে বারবার লোকসানের মুখে পড়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বাজারবিমুখ হয়ে পড়ছেন। বর্তমান বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই বললেও চলে।
পুঁজিবাজারের চলমান ইস্যুতে সাবেক বিএসইসি চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, পুঁজিবাজারে এত লম্বা সময় ধরে যে মন্দাবস্থা চলছে, সেটি মূলত সুশাসনের বড় ঘাটতির কারণেই। দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্বে থাকার পরও বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে। সুশাসনের অভাবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে।
বাজারে এক বছর ধরে যে দরপতন চলছে, তাতে বাজার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা খুব বেশি অবশিষ্ট আছে বলে মনে হচ্ছে না। এ কারণে সরকার বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও তার কোনো সুফল বাজারে মিলছে না। বিনিয়োগকারীরা এখন ধরেই নিয়েছেন, শেয়ার বিক্রি করলেই লাভ বেশি। কারণ, প্রতিদিনই দাম কমছে। তাই লোকসান কমাতে যে যেভাবে পারছেন, বাছবিচার ছাড়া হাতের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।
এদিকে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন শেয়ার বিক্রির চাপে সূচকের বড় দরপতন হয়েছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এছাড়া শেয়ার ক্রয়ের ক্রেতা সংকটে ভুগছে পুঁজিবাজার। ফলে সূচকের সাথে কমেছে টাকার পরিমাণে লেনদেন ও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৫৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৩৩০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৬৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯০২ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯২ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৭ টির, দর কমেছে ৩৩২ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩ টির। ডিএসইতে ৪৫০ কোটি ১৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৩৮ কোটি ২০ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৮৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১১৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ২৭৩ পয়েন্টে। সিএসইতে ২১৯ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৭ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৬৭ টির এবং ২৫ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ২০ কোটি ৮১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।