তৌফিক ইসলাম ও মনির হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে পুঁজিবাজারে সূচকের বড় উত্থান চলছে। তাতে শেখ হাসিনা পালানোর দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) মূল্যসূচকের বড় উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এতে গত দুই কার্যদিবসে ডিএসইতে সূচক বেড়েছে ৩৮৯ পয়েন্ট। পাশাপাশি গত কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে গত আড়াই বছর ধরে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের ছোখেমুখে ছিল হতাশার ছাপ। এই সময়ে বিনিয়োগকারীরা ধারাবাহিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থই হয়েছেন। কিছু কারসাজিকারী ছাড়া পুঁজিবাজারে লাভবান হয়েছেন, এমন বিনিয়োগকারী খুঁজে পাওয়া খুবই দুস্কর হবে। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করছেন। ফলে পুঁজিবাজারে সুবাতাস বইছে। গত দুই কার্যদিবসে ডিএসইতে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ফিরেছে প্রায় ৩৩ হাজার ৬১৩ কোটি টাকার।

মুলত কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হলে পুঁজিবাজারে মন্দা অবস্থা দেখা দেয়। তার আগেও নানা ইস্যুতে ধারাবাহিক মন্দা চলছিল। প্রায় চার মাস ধরে বাজার পতনের মধ্যে রয়েছে। অর্থাৎ হাসিনা সরকারের শেষ সময়টা মোটেও ভালো যায়নি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য। কারণ কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে একধরনের অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকে একাধিক দিন।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৭ হাজার ১০৫ পয়েন্ট। এরপর থেকেই চলেছে থেমে থেমে পতনের ছোবল। পতনের ছোবলে ২ বছর ৭ মাসে ডিএসইর সূচক কমেছে প্রায় ২ হাজার পয়েন্ট। অথচ এরমধ্যে পুঁজিবাজারে নতুন আইপিও শেয়ার এসেছে ২০টির বেশি। যেগুলোর মূলধন সূচকে যোগ হয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সময়ে বাজারে তারল্য সংকটের কারণে যতটা কমেছে, তারচেয়ে বেশি কমেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে। অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত ইসলামের ইন্ধনে আওয়ামী পন্থীদের লুটপাটে পুঁজিবাজারের মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা শিবলী রুবাইয়াত ও তার আওয়ামী পন্থী দোসরদের দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত দাবি করেছেন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে অবিলম্বে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ও কমিশন সদস্যদের পুর্নগঠন করা প্রয়োজন। তাঁরা বলছেন, নোবেলবিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূস অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান হওয়ার খবরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের নতুন করে আস্থা তৈরি হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর পূর্ণ সমর্থন পাওয়া ড. ইউনূসের নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি ফিরবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

ডিএসইর একাধিক সদস্য বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। কারসাজির মাধ্যমে একটি চক্র পুঁজিবাজার থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যে কারণে পুঁজিবাজারের ওপর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে পতনের মধ্যে পতিত হয় পুঁজিবাজার। এখন শেখ হাসিনার সরকার পতন হওয়ায় বাজারে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১৯২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৬১৮ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৪২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ২১৯ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৮৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ২ হাজার ২২ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৬ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৬৬ টির, দর কমেছে ১১৪ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬ টির। ডিএসইতে ৭৭৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৭৪৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৪৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯৩৮ পয়েন্টে। সিএসইতে ২৫৬ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬০ টির দর বেড়েছে, কমেছে ৭৫ টির এবং ২১টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ২২৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।