আতঙ্ক ছড়িয়ে শেয়ার হাতানোর কৌশলে বড় বিনিয়োগকারীরা
শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দীর্ঘ আড়াই যাবত পতনের বৃত্তে ঘুরফাক খাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। এখন তলানির সর্বনিম্ন পর্যায়ে অবস্থান করছে। কিন্তু তলানিতে থাকার পরও বড় বিনিয়োগকারীরা আতঙ্ক ছড়িয়ে কম দামে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শেয়ার হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারায় লিপ্ত। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতন পর থেকে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন।
পুঁজিবাজারে আবারও সুদিন ফিরে আসবে এই আশায় বুক বাধছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। যার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে গত চার কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে লেনদেন ও মূল্য সূচক বাড়ার মাধ্যমেই। তবে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচক ও লেনদেনের ভাটায় শেষ হয়েছে।
মুলত টানা চার কার্যদিবস সূচকের বড় উত্থানের পর একটু কারেকশন স্বাভাবিক বাজারের লক্ষণ বলে মনে করছেন তারা। এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। কারণ টানা সূচকের উত্থানের পর একটু কারেকশন স্থিতিশীল বাজারের লক্ষণ বলে মনে করছেন তারা। তাই বিনিয়োগকারীদের এখন বুঝে শুনে বিনিয়োগ করলেও লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানান তারা।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২ সালের ০১ জানুয়াারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রধান সূচক ছিল ৭ হাজার ১০৫ পয়েন্টে। আর লেনদেন ছিল ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার আশেপাশে। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে সূচক নামতে থাকে এবং লেনদেনও ক্রমাগত পড়তে থাকে। শেখ হাসিনা সরকারের শেষ কর্মদিবস (০৪ আগস্ট) ডিএসইর সূচক এসে দাঁড়ায় ৫ হাজার ২২৯ পয়েন্টে। আর লেনদেন নেমে যায় ২০৮ কোটি টাকার নিচে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তবর্তী সরকার গঠনের খবরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বড় বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হতে শুরু করেছে। তাদের অংশগ্রহণে চার কার্যদিবসের মাথায়ই ডিএসইর সূচক বেড়েছে ৭৮৬ পয়েন্ট। আর লেনদেনে ছাড়িয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা।
তারপরও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বড় বিনিয়োগকারীরা প্রয়োজনীয় শেয়ার সংগৃহ করতে পারেনি। এখন সেল প্রেসার দিয়ে বাজার কমিয়ে শেয়ার সংগ্রহের কৌশলে রয়েছে। যার প্রভাবে বাজারে বড় সংশোধন হয়েছে। তাঁদের মতে, দুই-একদিন বাজার এমন নেতিবাচক থাকার পর আবারও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় অগ্রসর হবে। তাঁরা বলছেন, সামনে পুঁজিবাজারের জন্য সোনালী ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৮৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৯৩২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৭০ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৩০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ১৫৩ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৪০৩ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৩ টির, দর কমেছে ৩৩৭ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩ টির। ডিএসইতে ১ হাজার ১৪৩ কোটি ২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৮৬৭ কোটি ৬ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ১০ কোটি ৮ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১২৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ১৫৭ পয়েন্টে। সিএসইতে ২৬৯ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৮ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৮৬ টির এবং ১৫ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ২০ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।