শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: শেখ হাসিনা সরকারের পতন পর থেকে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। তবে সরকার পতনের পর ৮ কার্যদিবসের মধ্যে পাঁচ কার্যদিবস সূচক বাড়লেও তৃতীয় কার্যদিবস সূচকের দরপতন হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন সূচকের কারেকশন নাকি ফের কারসাজির খপ্পরে পুঁজিবাজার। কারণ ৮ কার্যদিবসে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শেয়ারের দর বাড়লেও অধিকাংশ খাতের শেয়ারের দরপতন হয়েছে। ফলে ব্যাংক ও আর্থিক খাত বাদে অন্যান্য খাতের শেয়ারের দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মাঝে রক্তক্ষরণ হয়েছে।

একাধিক বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীল না অস্থিতিশীল বুঝতে পারছি না। সূচক বড় ধরনের বাড়লেও আমাদের হাতে থাকা শেয়ারের বড় দরপতন হয়েছে। মুলত এ সময়ে ব্যাংক আর্থিক খাতে ভর করে সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। যার ফলে অধিকাংশ শেয়ারের এ সময়ের মধ্যে দরপতনে ১৫-২০ শতাংশ নতুন করে পুঁজি উধাও হয়ে গেছে। আমরা চাই স্থিতিশীল পুঁজিবাজার। যেখানে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদে বিনিয়োগ করবে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহম্মেদ বলেন, বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরতে একটু সময় লাগবে। কারণ গত দুই তিন বছর টানা দরপতনে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী বাজারবিমুখ হয়ে পড়ছেন। ফলে বাজারে সূচকের উত্থান টানা হলে বাজারবিমুখ বিনিয়োগকারীরা বাজারে ফিরবে। এছাড়া অর্থ উপদেষ্টা ও বিএসইসি নতুন চেয়ারম্যান বাজার ইস্যুতে কার্যক্রম শুরু করলে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফেরবে। পুঁজিবাজার নিয়ে ভয়ের কিছু দেখছি না। কারণ বাজার যেখানে নেমে গেছে। এখান থেকে পড়ার শুরু নেই বলে তিনি মনে করেন।

বাজার বিশ্লেষণ নিয়ে স্টক অবজারভারের সিইও জয়ন্ত দে বলেন, চলতি সপ্তাহের শুরুতে বাজার ৬ হাজার ২০০ পয়েন্ট থেকে রিজেক্ট হয়ে ৫ হাজার ৮০০ থেকে ৬ হাজার পয়েন্টের জোনে সাইড ওয়েতে অবস্থান করছে। এতে আশা করা যায়, বাজার আবারও শক্তিশালী টার্ন নিয়ে ৬ হাজার ২০০ পয়েন্টের রেসিস্টেন্স ব্রেক করবে এবং সামনের দিকে অগ্রসর হবে। কারণ চলতি সপ্তাহে মার্কেট কিছুটা কারেকশন হয়েছে এবং কারেকশনের কারণে ভলিউমও কিছুটা কমে গেছে। কিন্তু এটা নেগেটিভ নয়। এরমধ্যে মার্কেটে কিছুটা প্রফিট টেকিং হয়েছে। প্রফিট টেকিংয়ের কারণে এখন সেল প্রেসার কমে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আশা করা যায়, আগামী সপ্তাহে আবারও মার্কেটে পসিটিভ টার্ন নিবে। তবে যে স্টকগুলো গত ২ সপ্তাহে বেশি বেড়েছে, সেগুলোর স্বাভাবিকভাবে কিছুটা কারেকশন হতে পারে। আর যেগুলো বেশি কমেছে, সেগুলো ঘুরে দাঁড়াতে পারে। পাশাপাশি মার্কেটে ব্যালান্সড ওয়েতে সামনের দিকে দিকে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচকের সাথে কমেছে টাকার পরিমাণে লেনদেন ও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৪৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৯০৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৬৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ১৭৯ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৮কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯১ টির, দর কমেছে ২৭৫ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২ টির। ডিএসইতে ৯৯৯ কোটি ১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২৪৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ২৪৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকার।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১১০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩১ পয়েন্টে। সিএসইতে ২৪৭ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৫ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৮০ টির এবং ১২ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।