বিশেষ প্রতিনিধি, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সদ্য বিদায়ী চেয়্যারমান শিবলী রুবাইয়েত-উল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। ২০২০ সালের ১৭ মে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। খেলাপি ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে বিএসইসিতে যোগদান করার পর বিভিন্ন অপরাধ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত বেপরোয়া ছিলেন তিনি। পুঁজিবাজারে কারসাজিসহ থেকে বিভিন্ন ধরণের সুবিধা নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে গড়েন সম্পদের পাহাড়।

অপরাধের জন্য কারসাজির চক্রকে সঙ্গে নিয়ে বিশাল অসাধু সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এই সিন্ডিকেটে কমিশনের ভেতরের কর্মকর্তা, স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গ্যাম্বলার, ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী আমলা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থমন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং কিছু গণমাধ্যমের লোকজনও রয়েছেন। মুলত পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পদে বসে বেআইনিভাবে শেয়ার ব্যবসা করেছেন সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি শেয়ার ব্যবসা করেছেন বেনামে। বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যে শেয়ার লেনদেনের বিও অ্যাকাউন্ট খোলেন তিনি। শেয়ার ব্যবসা করতে গিয়ে শিবলী রুবাইয়াত শেয়ার কারসাজির অন্যতম হোতা আবুল খায়ের হিরোর কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়েছেন।

হিরোর তথাকথিত ‘হট আইটেম’, অর্থাৎ কারসাজির মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি পাওয়া বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারই শিবলীর বেনামি অ্যাকাউন্টে ক্রমাগত কেনাবেচা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থায় ক্ষমতার দাপটে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এলআর গ্লোবালকে একের পর এক বিতর্কিত সুবিধা দিয়েছেন সম্প্রতি পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী। এলআর গ্লোবালের সিইও রিয়াজ ইসলামের সঙ্গে দুবাইয়ে সিগমা ম্যানেজমেন্ট নামে যৌথ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। ওই কোম্পানির পার্টনার শিবলীর বড় ছেলে যুহায়ের ইসলাম।

জানা গেছে, ২০২০ সালের মে মাসে বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার সময়ই অধ্যাপক শিবলী ঋণখেলাপি ছিলেন। অর্থঋণ আদালতে মামলায় ২০০৭ সাল থেকেই টানা প্রায় ১৬ বছর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ঘুরছিলেন তিনি। চেয়ারম্যান পদে চার বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালনের প্রথম দুই বছর চার মাস পর্যন্ত তিনি ঋণখেলাপি ছিলেন এবং তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল ছিল। অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জাবেদ এ মতিনের হংকংয়ের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১ কোটি ৩৪ লাখ ডলার হাতিয়ে নেওয়া, প্রতারণার অর্থ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে পাচার করে আনা এবং এ ক্ষেত্রে অধ্যাপক শিবলীর প্রত্যক্ষ সহায়তার তথ্য পাওয়া গেছে। পাচার করা অর্থ দেশে আনার সহযোগিতার অংশ হিসেবে শিবলী এর ভাগ নিয়েছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টে প্রায় ১২ কোটি টাকা নেওয়ার প্রমাণ পায় সমকাল। অর্থ পাচারকারী জাবেদ এ মতিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসার পর প্রথম চার মাস শিবলী রুবাইয়াতের ধানমন্ডির বাসায় ছিলেন।

এদিকে বিএসইসির হস্তক্ষেপের জন্য স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। সংস্থাটির যত স্বাধীন ক্ষমতা ছিল তা সব কেড়ে নেয় তৎকালীন বিএসইসি চেয়ারম্যান। ফলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার কারসাজিসহ নানা অনিয়ম হলেও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেনি ডিএসই। স্টক এক্সচেঞ্জের শীর্ষ কর্তাদের দাবি, মূলত নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র হস্তক্ষেপের কারণে স্টক এক্সচেঞ্জ তার ম্যান্ডেড অনুযায়ী পুঁজিবাজার ও তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

লিস্টিং রুলস অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে স্বচ্ছতা আনতে স্টক এক্সচেঞ্জকে অনেক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ২০২০ সালের মে মাসে শিবলী রুবাইয়েত-উল ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার পর বহু অনিয়ম হলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি স্টক এক্সচেঞ্জ। সদ্য বিদায়ী শিবলী নেতৃত্বাধীন কমিশনের হস্তক্ষেপের কারণে স্টক এক্সচেঞ্জ অনেকটাই ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে। প্রাইমারি রেগুলেটর হলেও এখন ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা ছাড়া কার্যত কোনো ক্ষমতা নেই স্টক এক্সচেঞ্জের।
ডিএসইর সাবেক এক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব স্টক এক্সচেঞ্জের।

তবে বিগত কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপের কারণে ডিএসই তার নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। কমিশনের স্বেচ্চাচারিতার কারণে স্টক এক্সচেঞ্জ যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেনি। পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে স্টক এক্সচেঞ্জের আরো ক্ষমতায়ন প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। আবার স্টক এক্সচেঞ্জের বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে কমিশনের আস্থাভাজন লোকজন বসিয়ে মূলধন উত্তোলন করা কোম্পানিতে প্রাইভেট প্লেসমেন্টে শেয়ার কারসাজির সুযোগও দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ কর্মকর্তাদের। আইপিও রিভিউ কমিটি, মার্কেট অপারেশন্স ও ইনভেসটিগেশন বিভাগ থেকে যোগ্য লোকদের সরিয়ে দিয়ে পছন্দের লোকজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

স্টক এক্সচেঞ্জ বিএসইসির নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিষ্ঠান, যা ডি-মিউচ্যুয়াইজেন স্কিম অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এ স্কিম অনুযায়ী, ২৫০ জন ট্রেকহোল্ডার বা ব্রোকারেজ হাউস, স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাইমারি শেয়ারহোল্ডার। তাদের মালিকানায় রয়েছে ৪০ শতাংশ শেয়ার। ইতোমধ্যে ২৫ শতাংশ কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রি করা হয়েছে আর ৩৫ শতাংশ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রি করা হবে।
পুঁজিবাজার সঠিকভাবে পরিচালনায় কমিশন বিভিন্ন নীতি বা আইন প্রণয়ন করে, যা বাস্তবায়ন করে স্টক এক্সচেঞ্জ।

লিস্টিং রুলস অনুযায়ী, তিন বছর উৎপাদনে না থাকলে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে ডি-লিস্ট করতে পারে স্টক এক্সচেঞ্জ। ইনভেস্টমেন্ট ডিসিশন প্রভাবিত হয় এমন তথ্য প্রকাশ না করা, তিন বছর লিস্টিং ফি না দেয়া ও পাঁচ বছর লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হওয়া কোম্পানির শেয়ার ট্রেডিং হল্ট, সাসপেন্ড বা ডি-লিস্টি করার ক্ষমতা রয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জের। পাশাপাশি কোনো কোম্পানির শেয়ার ম্যানুপুলেশন হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে ডি-লিস্ট বা ট্রেড সাসপেন্ড করার ক্ষমতাও স্টক এক্সচেঞ্জের রয়েছে। তবে বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, শেয়ার কারসাজি, লভ্যাংশ দিতে না পারা কিংবা উৎপাদন বন্ধ থাকলেও গত পাঁচ বছরে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনি স্টক এক্সচেঞ্জ।

উদাহরণস্বরূপ ১৮ বছরের বেশি উৎপাদনে নেই তালিকাভুক্ত কোম্পানি মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিস। উৎপাদন না থাকায় বছরের পর বছর কোনো লভ্যাংশও দিতে পারছে না কোম্পানিটি। জেড ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনা ঘটলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি স্টক এক্সচেঞ্জ। কমিশনের এক পরিদর্শনে ২০০৪ সাল থেকে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ থাকার প্রমাণও মিলেছে। একইভাবে ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে উৎপাদনে নেই শ্যামপুর সুগার মিলস। তারপরও গত বছরের ৫ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারি মালিকানাধীন চিনি কলটির শেয়ার দাম বেড়েছে ১৬৬ শতাংশ।

সম্প্রতি দুর্বল বা লোকসানি কোম্পানির শেয়ার দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেলেও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি স্টক এক্সচেঞ্জ। দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কেবল কারণ দর্শানো চিঠি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে সংস্থাটি। তিন বছরের বেশি উৎপাদনে না থাকায় ২০১৮ সালে রহিমা ফুড করপোরেশন ও মডার্ন ডাইং কোম্পানির শেয়ার লেনদেন স্থগিত করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। শিবলী কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর কমিশন এক নির্দেশনায় ওই কোম্পানি দুটিকে আবারও মূল মার্কেটে ফিরিয়ে আনে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কোম্পানি দুটির লেনদেন চালু হয়। লিস্টিং রুলস অনুযায়ী, শেয়ার লেনদেন সাসপেন্ড করা হলেও স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে ব্যাখা চায় কমিশন।

এরপর বিভিন্ন সময় লিখিত কিংবা মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষমতা খর্ব করার অভিযোগ করছেন ডিএসইর কর্মকর্তারা। পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলনে আসা কোম্পানির বিষয়ে ডিএসইর রিভিউ টিম নেতিবাচক মতামত দিলেও গায়ে মাখেনি কমিশন। উল্টো আইপিও অনুমোদন দিয়েছে, যাদের বেশির ভাগের অবস্থাই এখন ভালো না। কমিশনের স্বেচ্ছাচারিতায় তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে অবনমনে ডিএসইর ক্ষমতাও কেড়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে সদ্য বিদায়ী কমিশনের বিরুদ্ধে। স্টক এক্সচেঞ্জের হিসাব অনুযায়ী, উৎপাদনে না থাকায়, রিটেইনড আর্নিংস নেগেটিভ, লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ এমন অন্তত অর্ধ-শতাধিক কোম্পানি জেড ক্যাটাগরিতে যাওয়ার যোগ্য হলেও তা করতে পারছে না স্টক এক্সচেঞ্জ।

এক নির্দেশনায়, ক্যাটাগরি অবনমন ঠেকিয়ে দিয়েছে চেয়্যারম্যান শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম কমিশন। স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষমতা এখন কেবল ৫ হাজার টাকা জরিমানা করার মধ্যে সীমাবন্ধ। কোনো কোম্পানি প্রান্তিক বা অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন যথাসময়ে জমা দিতে ব্যর্থ হলে প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা করে এই জরিমানা করতে পারে স্টক এক্সচেঞ্জ। লিস্টিং ফি দিতে ব্যর্থ হলেও একই জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে জরিমানা টাকা কেউ পরিশোধ না করলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না স্টক এক্সচেঞ্জ। এতে বকেয়ার বিপরীতে কোটি কোটি টাকা প্রভিশন রাখতে হচ্ছে স্টক এক্সচেঞ্জকে।

ডিএসইর লিস্টিং বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানি লিস্টিং রুলস মানছে কিনা, সেসব দেখভাল করে স্টক এক্সচেঞ্জ। তবে রুলসে যে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান, তা করা যাচ্ছে না। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, আগে উৎপাদন বন্ধ থাকায় কারণে দুটি কোম্পানিকে ডি-লিস্ট করা হলেও, কমিশন পরবর্তীতে তাদেরকে ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা দেয়, যার কারণে আর কোনো কোম্পানিকে ডি-লিস্টিং করা হয়নি। তিনি বলেন, আর্থিক প্রতিবেদন যথাসময়ে না দিলে জরিমানা করা হয়। তবে জরিমানা না দিলেও কিছু করা যায় না। ফলে এভাবেই চলে যাচ্ছে। স্বচ্ছতা বা জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাচ্ছে না।

ডিএসইর লিস্টিং বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় দুই-ডজনের মতো কোম্পানির উৎপাদনের অবস্থা খুবই শোচনীয়। কোনোটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ, আবার কোনোটির আংশিক উৎপাদন চলছে। প্রান্তিক বা অর্থবছরের আর্থিক হিসাব বা লিস্টিং ফিও সময়মত দিচ্ছে না। তারপরও এসব কোম্পানি নিয়ে বিভিন্ন সময় গুজব কিংবা মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কোম্পানির শেয়ার দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না স্টক এক্সচেঞ্জ। কোনো কোম্পানির অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কমিশন তদন্তের নির্দেশ দিলে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয় স্টক এক্সচেঞ্জ।

প্রতিবেদন পাওয়ার পর কমিশন প্রয়োজন মনে করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করে অথবা তদন্ত প্রতিবেদন পড়েই থাকে। লিস্টিং রুলস অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানির সার্বিক বিষয় দেখভাল করে এক্সচেঞ্জ। তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রকৃত চিত্র জানতে স্পট ইন্সপেকশন বা পরিদর্শনও স্টক এক্সচেঞ্জ করে থাকে। তবে স্পট ইন্সপেকশন কমিশনের অনুমতি ছাড়া করা যায় না। ইন্সপেকশনের বিষয়ে লিস্টিং রুলসে বলা হয়েছে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা বা তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ ইস্যুকারীর বিষয়গুলো পর্যালোচনার প্রয়োজন হলে, কমিশনের পূর্বানুমতি নিয়ে যে কোনো সময় ইন্সপেকশন (পরিদর্শন) করতে পারে স্টক এক্সচেঞ্জ।

তবে কোম্পানি পরিদর্শনের অনুমোদন পাওয়া সময় সাপেক্ষ, যার কারণে কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা জানা সম্ভব হয় না উল্লেখ করে ২০২১ সালে বিএসইসির কাছে চিঠি দেয় স্টক এক্সচেঞ্জ। ওই চিঠিতে কমিশনের অনুমোদনের বদলে কমিশনকে জানিয়ে কোম্পানি পরিদর্শন করার অনুমতি চেয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জ। তবে তিন বছর পার হলেও সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি কমিশন।

বাজার সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, দুবাই প্রবাসী এক আতর ব্যবসায়ীর মাধ্যমে এবং বিদেশে বিনিয়োগ রোডশোর আড়ালে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে উপার্জন করা শত শত কোটি টাকা পাচার করেছেন অধ্যাপক শিবলী। অবশ্য এর সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ এখনও মেলেনি। তবে ওই আতর ব্যবসায়ীকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেওয়া, একটি রুগ্ণ কোম্পানির মালিকানা কিনতে সহায়তা করা এবং পুঁজিবাজারে পুনঃতালিকাভুক্ত করাতে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার প্রমাণ রয়েছে।