সাত নদীর পানি বিপদসীমার উপরে, বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সাত নদীর ৯ পয়েন্টের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। এতে দেশের পাঁচ জেলা অর্থাৎ মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বন্যা আক্রান্ত অবস্থায় আছে। ভারী বৃষ্টির কারণে আরও কিছু নদীর পানি বিপদসীমার উপরে উঠে যেতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এতে আরও বেশ কিছু এলাকার বন্যা পরিস্থিতি অবনতির পাশাপাশি নতুন কিছু এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়তে পারে বলে জানা যায়। সাত নদীর ৯ পয়েন্টের মধ্যে হবিগঞ্জের খোয়াই নদীর বান্না পয়েন্টের পানি বিপদসীমার সর্বোচ্চ ১৯৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে।
এরপর একই নদীর হবিগঞ্জ পয়েন্টের পানি ১৯০ সেন্টিমিটার, হালদা নদীর নারায়ণহাট পয়েন্টের পানি ১০০, মনু নদীর মনু রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টের পানি ৯৫, একই নদীর মৌলভীবাজার পয়েন্টের পানি ৬৫, মুহুরি নদীর পরশুরাম পয়েন্টের পানি ৭০, ধলাই নদীর কমলগঞ্জ পয়েন্টের পানি ৪৬ এবং ফেনী নদীর রামগড় পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পানির মোট ১১৬ টি স্টেশনের মধ্যে ৬২টি স্টেশনের পানি বেড়েছে।
তাদের পূর্বাভাসে বলা হয়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা নদ-নদীর পানি কমছে, অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এ সকল নদীর পানি কমতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে, এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদীগুলোর পানি কয়েকটি পয়েন্টে সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে, এ সময় এ অঞ্চলের মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরি ও গোমতী ইত্যাদি নদীর পানি সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল থাকতে পারে।
এদিকে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ফেণী ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী ও হালদা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। একই সময়ে পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লা জেলার গোমতী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, আগামীকাল সকাল পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতি যা আছে তাই থাকতে পারে, অর্থাৎ স্থিতিশীল। পরিস্থিতি অবনতি হবার শঙ্কা আমরা কম করছি। আগামীকালের পর ভারী বৃষ্টি কমে আসতে পারে। এতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে আমরা আশা করছি৷
আবহাওয়া কী বলছে: এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিম বঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। আগামীকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত পূর্বাভাসে বলা হয়, ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।
এরপর আগামীকাল সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।
ভারী বর্ষণের সতর্কবাণীতে বলা হয়, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ২০ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে। ভারী বর্ষণজনিত কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে।
আজ রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য পূর্বাভাসে বলা হয়, ঢাকা, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং কক্সবাজার অঞ্চলগুলোর উপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।