এস আলম-সামিট গ্রুপ ও ওরিয়ন গ্রুপের বিদেশে অর্থ পাচার
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নিয়ে বিদেশে পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে কুখ্যাত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমের বিরুদ্ধে। লুটের টাকায় তিনি সিঙ্গাপুরে সাম্রাজ্য গড়েছেন। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশে তার রয়েছে অবৈধ বিনিয়োগ। মাফিয়া এই গ্রুপের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, দুদক ও বিএসইসি সম্প্রতি নানা ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।
কিন্তু এখনো এ বিষয়ে নির্বিকার অর্থপাচার নিয়ে কাজ করা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। বুধবার (২১ আগস্ট) অনুষ্ঠিত নিয়মিত সভায় অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না; তা নিয়ে একাধিক কর্মকর্তা প্রশ্ন তুলেন। বিএফআইইউর একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
জানা গেছে, বিএফআইইউর উপ-প্রধান রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সংস্থারটির কার্যালয়ে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে একাধিক কর্মকর্তা প্রশ্ন করেন, এস আলম গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, ব্যাংক খাতের সমালোচিত চৌধুরী নাফিজ সরাফতসহ অনেকের অর্থপাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য বিএফআইইউতে আছে। বিভিন্ন সময়ে এদের অনিয়ম নিয়ে সংবাদপত্রে রিপোর্ট হয়েছে।
এতদিন বলা হয়েছে, চাপের কারণে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। এখন তো আর সেই চাপ নেই। বরং বর্তমান সরকার অর্থপাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে। তাহলে এখনও কেন এসব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
উল্লেখ, এস আলম গ্রুপের মতো সামিট গ্রুপেরও সিঙ্গাপুরে বিশাল ব্যবসা রয়েছে। গ্রুপটির প্রধান কার্যালয় মূলতঃ সিঙ্গাপুরে। গ্রুপের কর্ণধার আজিজ খান এবং তার মেয়ে ও গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আয়েশা আজিজ খান সেদেশেই থাকেন। আজিজ খান দেশটির শীর্ষ ধনীদের অন্যতম।
অন্যদিকে ওরিয়ন গ্রুপের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে। দুবাইয়ে এই গ্রুপের বড় অংকের বিনিয়োগ রয়েছে। গ্রুপটির চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম দুবাইয়ে থেকে ওই ব্যবসা দেখভাল করেন। আর চৌধুরী নাফিজ সরাফতের বিরুদ্ধে কানাডায় অর্থপাচারের অভিযোগ আছে। দিনের পর দিন এদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ থাকলেও বিএফআইইউ রহস্যজনকভাবে চুপ করে ছিল।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নজিরবিহীন বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন বিএফআইইউ প্রধান মোঃ মাসুদ বিশ্বাস, ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান ও খুরশীদ আলম এবং নীতি উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাছের। সরকার পতনের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে সাবেক মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিবিদ, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে বিএফআইইউ। তবে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অর্থপাচারে মূল অভিযুক্তদের কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।