কে এম চিশতি সিয়াম: শুধুমাত্র সম্পদশালীরাই কিনতে পারবে, যাদের টাকা আছে তাদের আরো টাকা বানানোর সুযোগ করে দিবে? পুঁজিবাজারে বৈষম্যের শিকার এসএমই মার্কেটকে এখন সময় এসেছে ঢেলে সাজানোর। ২০২১ সালে এসএমই মার্কেট বানানোর পর সবার জন্য উন্মুক্ত করে নাই। এখানে QI নামে একটা টার্ম আছে, যার অর্থ Qualified Investor। অর্থাৎ SME Market এ লেনদেন করতে চাইলে একজন বিনিয়োগকারীকে কোয়ালিফাই করতে হয়। এই কোয়ালিফাইড বিনিয়োগকারী হওয়ার যে মানদন্ড তা হলো টাকা! একজন বিনিয়োগকারীর বিও অ্যাকাউন্ট যদি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার Buy Price বা Cost price এ থেকে থাকে তবে তিনি একজন Qualified Investor হিসাবে বিবেচিত হবে এবং তিনি SME Platform থেকে শেয়ার কিনা বেচা করতে পারবে।

এটা প্রতি ৩ মাস পর পর একটা নোটিফিকেশন দিয়ে জারি করে আসছে। যেমন বর্তমানে নিয়ম অনুযায়ী ২০২৪ সালের জুন মাসের ৩০ তারিখে যাদের বিও অ্যাকাউন্টে ৩০ লাখ টাকার শেয়ার ছিল তারা আগামী ৩ মাস এসএমই মার্কেটে লেনদেন করতে পারবে। তবে এই Qualified Investor এর সংজ্ঞা এবং বাস্তর চিত্র একই না। এর কারন হলো বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ওয়েবসাইটে Qualified Investor Offer by Small Capital Company Rules, 2022 এ একটা গেজেট প্রকাশ করা হয় যেখানে স্পষ্ট ভাবে Qualified Investor এর সংজ্ঞা বলা আছে।

“resident or non-resident Bangladeshi individual who is an active investor in the capital market for a period of at least 1 (one) year having at least portfolio investment worth of taka 1 (one) million at the time of application for subscription of securities under the QIO shall also be considered as QI”

অর্থাৎ একজন SME Market এর একজন বিনিয়োগকারী হিসাবে যদি আপনি কোয়ালিফাই করতে চান তবে নুন্যতম শেষ ১ বছরে ১০ লাখ টাকা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ থাকতে হবে। অন্যদিকে Merchant Banker, Portfolio Manager, Asset Manager, Mutual Fund and Collective Investment Scheme, Stock Dealer, Bank, Financial Institution, Insurance Company, Fund Manager, Alternative Investment Fund, Provident Fund, Approved Pension Funds, Market Maker সহ যারা প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী আছে তাদেরকে ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে।

একই সাথে যারা বিদেশি বিনিয়োগকারী আছে তারা যে কোনো এমাউন্ট বিনিয়োগ থাকলেই এসএমই মার্কেটে লেনদেন এর যোগ্যতা রাখে, আমি যেই কথাগুলা বললাম তা as per ২০২২ সালের গেজেট মোতাবেক। তবে বাস্তবিক চিত্র হলো আলাদা।বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন তারা নানা সময়ে এই Qualified Investor এর সংজ্ঞার মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন করেছে। এসএমই মার্কেটের Qualified Investor এর মানদণ্ড শুরু হয় ১ কোটি টাকা দিয়ে, তবে তখন সাধারন মানুষ কেউ আগ্রহ দেখায় নাই, এর পরে কমিয়ে করা হয় ৫০ লাখ সেখানেও আগ্রহ নেই।

এরপরে হুট করে কমিয়ে দেওয়া হয় ২০ লাখ। যখন’ই এই ২০ লাখ করা হলো এসএমই মার্কেটে  উত্তান হয়। তবে বিপত্তি ঘটে যখন এই ২০ লাখ বাড়িয়ে ৩০ লাখ টাকা করা হয়। আবার ৩০ লাখ থেকে ২০ লাখ করা হয়, এর কিছুদিন পরে আবার ৩০ লাখ করা হয়। এখানে সমস্যা এই রকম দাঁড়ায় যে, আগে যিনি ২০ লাখে যোগ্য বিনিয়োগকারী হয়েছিল তাকে এখন ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। যার ফলে অনেক বিনিয়োগকারী তাদের হাতে থাকা শেয়ারের এভারেজ করতে পারে নাই এবং তারা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।  অন্যদিকে মার্কেট ক্রমাগত স্লো হতে হাতে। বিষয়টা আরেকটু সহজ করে যদি বলি, এসএমই মার্কেটে যখন ২০ লাখ দিয়ে যোগ্য বিনিয়োগকারী হওয়া যেত তখন নাম্বার অফ কোম্পানি ছিল ১২/১৩ টা। আর এখন নাম্বার অফ কোম্পানি বেড়ে ২০।

একদিকে নাম্বার অফ কোম্পানি বেড়েছে অন্যদিকে নাম্বারস অফ বিনিয়োগকারী কমেছে। একটা টেকসই পুজিবাজার পেতে চাইলে হয়ত SME Market এর দরকার আছে তবে এত ঘন ঘন সিন্ধান্ত পরিবর্তন কোনো ভাবেই কারো কাম্য না। শুধু এখানেই শেষ না, যখন রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের সময় মূল বাজার (DSEX) এ ফ্লোর প্রাইজ আরোপ করা হয়েছিল তখনও এসএমই মার্কেটে ফ্লোর প্রাইজ দেওয়া হয় নাই। একই বাজারে দুই নীতি বিনিয়োগকারিদের সাথে অন্যায় নয় কি?

এসএমই মার্কেটের বর্তমান যেই অবস্থা এতে অনেক কোম্পানির শেয়ার যথেষ্ট আন্ডারভেলুড হয়ে আছে, যা একজন সাধারন বিনিয়োগকারী কিনতে পারছে না। আমার কথা হলো, একজন বিনিয়োগকারী যদি ১০ টাকাও বিনিয়োগ করতে চায় তবে এখানে ধরাবাঁধা কেন নিয়ম থাকবে? দেখুন যারা শেয়ার বাজারে আসে তারা জেনে বুঝেই আসে, স্টক মার্কেটে রিস্ক ছিল, আছে থাকবে, তবে এর মানে এই না যে, আপনি কাউকে শেয়ার কিনতে দিবেন আর কাউকে দিবেন না। টাকার মানদণ্ড দিয়ে একটা সম্ভাবনায় মার্কেটকে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমাতে পারেন না।

কেউ যদি মনে, সে ৫০ টাকা দিয়ে এসএমই মার্কেটের শেয়ার কিনবে তাহলে আমি আপনি বলার কে? একটা লাভজনক ও অবমুলায়িত মার্কেটে বিনিয়োগসীমা বা যোগ্য বিনিয়োগকারী হতে হবে এই বিষয়টা এখন বাদ দিতে হবে।আপনি এসএমই মার্কেট রাখেন আমাদের আপত্তি নেই, তবে সাধারন ছোট বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করতে পারবে না, তা মেনে নেওয়া যায় ন না। সাধারন বিনিয়োগকারীদের দাবি, এসএমই মার্কেটকে বিলুপ্ত করে সেখানে থাকা শেয়ারগুলো মেইন মার্কেটে যুক্ত করে দিন।

– কে এম চিশতি সিয়াম, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী