শহীদুল ইসলাম ও মনির হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। মুলত কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজের সেল প্রেসারের চাপে উত্থানের বাজার পতনের বৃত্তে আটকে আছে। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নেতৃত্ব বদল, দুর্নীতি দমনে পদক্ষেপ ও বড় কিছু কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠনের মতো ঘটনা পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাড়িয়েছে উদ্বেগ। ফলে ব্যাংক খাতের আধিপত্যে লেনদেন কিছুটা বাড়লেও বেড়েছে শেয়ার বিক্রির চাপ। মুলত ব্যাংক খাতের ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি, ন্যাশনাল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও গ্রামীণফোন, বৃটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো এবং স্কয়ার ফার্মার শেয়ার বিক্রির চাপে সূচকের দরপতন হয়েছে।

এদিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাজারে যে উল্লম্ফন দেখা দিয়েছিল তা আর নেই। মূল্যসূচকের টানা পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা ফিরে এসেছে। ফলে নতুন করে পুঁজি নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও অধিকাংশ শেয়ারের ২০-২৫ শতাংশ পুঁজি উধাও হয়ে গেছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের ধারণা ছিল শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুঁজিবাজারে সূচকের টানা উস্ফল্লন হবে।

পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের কারণ জানতে চাইলে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মুলত রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনিয়ম দুর্নীতি বিষয়ে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে, তাতে বড় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ কারণে অনেকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ধীর চল নীতি গ্রহণ করছেন।

তবে পুঁজিবাজারের অনিয়মের বিরুদ্ধে নেওয়া এসব পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতেও যাতে বাজারে কোনও ধরনের অনিয়ম না ঘটতে পারে, সেই ব্যবস্থা বর্তমান কমিশনকে নিতে হবে। বাজার কারসাজিমুক্ত থাকবে বা কারসাজি করলে কেউ ছাড় পাবে না এই বার্তা যদি বিশ্বাসযোগ্যভাবে বাজারে যায়, তাহলে তা বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা বৃদ্ধি করবে।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারের মূল সমস্যা আস্থা সংকট। টানা দরপতনের কারণে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়ে ফেলছে। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তা নিতে হবে। তা না হলে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা ফেরানো কঠিন। তারা আরো বলেন, বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসইর ছোট-বড় গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা বসে আছেন, তাদের অবিলম্বে সরানো প্রয়োজন। তা না হলে কুচক্রী মহলের অসৎ তৎপরতা কোনভাবেই প্রতিরোধ করা যাবে না। প্রতিদিনই ইতিবাচক বাজার আতঙ্ক ছড়িয়ে টেনে নামাবে। প্রতিদিনই বাজার ছন্দপতন ঘটবে। যা স্থিতিশীল বাজারের জন্য কোনভাবেই সহায়ক নয়।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৬৮৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২১৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক .৬৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ৮৭ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৮ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৩১ টির, দর কমেছে ২৩১ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩ টির। ডিএসইতে ৭৫০ কোটি ২৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১৯২ কোটি ২১ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫৫৮ কোটি ৩ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৬৮ পয়েন্টে। সিএসইতে ২১৯ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৩ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৫১ টির এবং ১৫ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ২২২ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।