শহীদুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের টানা দরপতন কিছুতেই থামছে না। দিন যতই যাচ্ছে পতনের মাত্রা তত বাড়ছে। ফলে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে বেড়েই চলেছে বিনিয়োগকারীদের হাহাকার। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কয়েক দিন পুঁজিবাজারে উল্লম্ফন দেখা গেলেও এখন টানা দরপতনে পুঁজিবাজার। ফলে বাজার নিয়ে নতুন করে দু:চিন্তায় পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।

আবার একেই বলে জ্বালার ওপর বিষ ফোঁড়া। একদিকে মূলধন হারিয়ে বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা তার ওপর সিকিউরিটিজ হাউজগুলোর ফোর্সড সেল। পুঁজিবাজারে ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে এখন তাদের ঋণের টাকা তুলে নিতে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ফোর্সড সেল বা জোরপূবক বিক্রি করে দিচ্ছে। কোনো কোনো হাউজ আবার বিনিয়োগকারীদের না জানিয়েই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে।

ফলে মন্দা বাজারে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ পরিশোধের তাগিদ দিয়ে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলো নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। ফলে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে ডিএসই বিএসই’র নিরব আচরনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, এ কেমন পুঁজিবাজার। দিন যতই যাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি ততই হারাচ্ছে। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোন ভুমিকা দেখছি না। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীদের নতুন করে ২৫-৩০ শতাংশ পুঁজি উধাও হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীদের জন্য পাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কোনোভাবেই থামছে না সূচকের পয়েন্ট হারানো ও দরপতন। বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ আর ক্রন্দন। প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। ভিটেবাড়ি ও সম্পদ বিক্রি করে এখানে বিনিয়োগ করে আজ পথে বসেছে। আশার আকাশে প্রতিদিনই নিরাশার কালো মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে। লোকসান দিতে হতে বিনিয়োগকারীরা আজ সর্বশান্ত হচ্ছেন। ফলে টানা দরপতনে পুঁজিবাজারে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

এদিকে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচকের সাথে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার পরিমাণে লেনদেন বেড়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৪৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৬৭৯ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২২১ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ১৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ১০০ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৭ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৪ টির, দর কমেছে ২৮৯ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৪ টির। ডিএসইতে ৬৭৮ কোটি ৮২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৬৭৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৪১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৩৭ পয়েন্টে। সিএসইতে ২৩৪ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৭ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৬১ টির এবং ১৬ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।