টানা ছয় কার্যদিবস দরপতনে অস্থির পুঁজিবাজার, গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে নতুন কমিশন
শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজার কিছুতেই দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না। বরং দিন যতই যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের রক্তক্ষরণ ততই বাড়ছে। মুলত ক্ষমতার পালাবদল হলেও বিনিয়োগকারীদের ভাগ্যের চাকা ঘোরেনি। বরং প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে। সেই সঙ্গে হতাশা বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের। এনিয়ে টানা ছয় কার্যদিবস দরপতনের বৃত্তে পুঁজিবাজার। ফলে বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন কী হচ্ছে পুঁজিবাজার। এ ভাবে আর কত দিন চলবে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা আরও ভারী হচ্ছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নবগঠিত কমিশন পুঁজিবাজারকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে কমিশন গঠনের শুরুটা ভালো হলেও দিন দিন তার গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। ফলে নতুন করে বিনিয়োগমুখী হচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা। বর্তমান বাজারে আস্থা ও তারল্য সংকটে হাহাকার চলছে।
এছাড়া বড় বিনিয়োগকারীরা সাইডলাইনে বসে রয়েছেন। যেহেতু পুঁজিবাজারের অনিয়ম ও দুর্নীতিরোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্ত কার্যক্রম চলছে, তাই সবাই যার যার পূর্বের হিসেব নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। কারণ ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী প্রায় সবাই কম বেশি কোন না কোন শেয়ারে প্রাইস মেকিংয়ে ভূমিকা রাখে। বিএসইসির তদন্ত রিপোর্টে আবার কেউ ফেঁসে যায় কিনা সেই আতঙ্কে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় থেকে দূরে রয়েছে।
এছাড়া গত ১৫ বছরে বিভিন্ন সময়ে শেয়ার দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা কমানোর পেছনে যাদের ভুমিকা ছিলো তারা হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যেতে চাইছে। যার ফলে লেনদেনের শুরুটা ভালো হলেও দিনশেষে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভারের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হচ্ছে।
ফলে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন ডিএসইর ৪৯ পয়েন্ট সূচকের দরপতন হয়েছে। এর ফলে টানা ছয় কর্মদিবসে ডিএসইর সূচক উধাও ২০০ পয়েন্টের বেশি। যে কারণে পতনের এই ডাবল সেঞ্চুরির জন্য বিনিয়োগকারীরা মার্কেট মেকারদের দায়ী করছেন।
একাধিক বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করে বলেন, পুঁজিবাজারের সন্ধিক্ষণে মার্কেট মেকাররা বরাবরের মতো এখনো হাত গুটিয়ে বসে আছেন। যেখানে বাজারকে তাদের সাপোর্ট দেওয়ার কথা, সেখানে বাজার কিছুটা ছন্দে ফিরলেই তারা সেল প্রেসার দিয়ে বাজারের উত্থান রোধ করার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে বিনিয়োগকারীতের পুঁজি শুন্য হতে আর বেশি দিন লাগবে না।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৪৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৬২৯ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২১৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ৯২ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৯ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৭ টির, দর কমেছে ৩০৭ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫ টির। ডিএসইতে ৬২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৫৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৬৭৮ কোটি ৮২ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৭২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৬৪ পয়েন্টে। সিএসইতে ২২৮ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৯ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৭০ টির এবং ১৯ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৭ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।