পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে টাস্কফোর্স গঠনের দাবী
শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহজুড়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বাজার মূলধন বাড়লেও সূচকের ব্যাপক উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসেই দাম বাড়ার চেয়ে কমার তালিকায় ছিল বেশিরভাগ কোম্পানি। ফলে সপ্তাহজুড়ে দরপতনের পাল্লাই ভারী হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে মূল্যসূচক ও লেনদেনের পরিমাণ। এরপরও বেড়েছে বাজার মূলধন। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় ৯০০ কোটি টাকা বেড়েছে। বিপরীতে প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ২ পয়েন্টের একটু বেশি। আর লেনদেন কমেছে ১৯ শতাংশের বেশি। দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৬৮ শতাংশ কোম্পানি।
মুলত দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্র্বতী সরকারের অধীনে এটি পুঁজিবাজারের পঞ্চম সপ্তাহ। এর আগে অন্তর্র্বতী সরকারের অধীনে আরও চারটি সপ্তাহ পার করেছে দেশের পুঁজিবাজার। সব মিলিয়ে অন্তর্র্বতী সরকারের অধীনে লেনদেন হওয়া পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে চার সপ্তাহেই পুঁজিবাজারে সূচকের দরপতন হয়েছে।
এদিকে হাসিনা সরকার পতনের পর পুঁজিবাজারে উল্লম্ফন হলেও নতুন অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দুই সপ্তাহ পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়। তবে তৃতীয় সপ্তাহে এসে পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়। কিন্তু চতুর্থ সপ্তাহে ফের দরপতন হয়। পঞ্চম সপ্তাহেও দাম কমার তালিকা বড় হয়েছে।
এছাড়া গত সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ২২ শতাংশ কমার পর এ সপ্তাহেও ২১ শতাংশের বেশি কমেছে ব্যাংক খাতের শেয়ারের লেনদেন। ১৪টি খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি শেয়ারের লেনদেনই কমেছে গত পাঁচ কার্যদিবসে। এর ফলে এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের রক্ষায় ব্যাংকখাতে সংস্কারের মতোই পুঁজিবাজার সংস্কারে ও টাস্কফোর্স গঠনের দাবী বিনিয়োগকারীসহ অর্থনীতিবিদরা।
ফলে এ অবস্থায় আশা-নিরাশার দোলাচলে ফেলা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফেরাতে এ খাতের সংস্কার ও টাস্কফোর্স গঠনের পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীর কারসাজিতেই পুঁজিবাজারে ব্যাপক উত্থান-পতন ঘটছে। পুঁজিবাজারে নেতৃত্বের পরিবর্তন হলেও নীতির পরিবর্তন হয়নি। এ বাজারের সংস্কারে ব্যাংক খাতের মতোই টাস্কফোর্স গঠন করা উচিত।
জানা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯২ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। যা সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৯ কোটি টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন ৮৯৮ কোটি টাকা বেড়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে ৩ হাজার ২২১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে হয়েছিল ৩ হাজার ৯৯৪ কোটি ৬ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন ৭৭২ কোটি ৬১ লাখ টাকা বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭২৬ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৬ পয়েন্ট বেড়ে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ২৪৫ পয়েন্টে এবং ২ হাজার ১০০ পয়েন্টে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৬ টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১০৭ টির, কমেছে ২৭১ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮ টির শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর। এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই সূচক ১.৪৫ শতাংশ ও সিএসসিএক্স সূচক ১.৪৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৬ হাজার ১৪০.০২ পয়েন্ট ও ৯ হাজার ৭২৯.৫৩ পয়েন্ট। এছাড়া সিএসআই সূচক ০.৮২ শতাংশ, সিএসই-৩০ সূচক ০.৬৬ শতাংশ ও সিএসই-৫০ সূচক ১.১১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১০৩০.৬৬ পয়েন্টে, ১৩০১২.৬৬ পয়েন্টে ও ১১৯৪.৫৫ পয়েন্টে।
ফলে সপ্তাহ ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ৩৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা। সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৭১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৬৯টির, কমেছে ২৪২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টি কোম্পানির শেয়ার দর।