শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে কোন কিছুতেই টানা দরপতন থামছে না। বরং দিন যতই যাচ্ছে পতনের মাত্রা তত বাড়ছে। ফলে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে বেড়েই চলেছে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ আর হাহাকার। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কয়েক দিন পুঁজিবাজারে উল্লম্ফন দেখা গেলেও এখন টানা দরপতনে পুঁজিবাজার। ফলে বাজার নিয়ে নতুন করে দু:চিন্তায় পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। আবার একেই বলে জ্বালার ওপর বিষ ফোঁড়া।

একদিকে মূলধন হারিয়ে বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা তার ওপর সিকিউরিটিজ হাউজগুলোর ফোর্সড সেল। পুঁজিবাজারে ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে এখন তাদের ঋণের টাকা তুলে নিতে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ফোর্সড সেল বা জোরপূবক বিক্রি করে দিচ্ছে। কোনো কোনো হাউজ আবার বিনিয়োগকারীদের না জানিয়েই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে।

ফলে মন্দা বাজারে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ পরিশোধের তাগিদ দিয়ে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলো নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। ফলে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে ডিএসই বিএসই’র নিরব আচরনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের। আর অনিয়ম তদন্তে ব্যস্ত বিএসইসি

একাধিক বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নবগঠিত কমিশন বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে কমিশন গঠনের শুরুটা ভালো হলেও দিন দিন তার গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে বলেও মনে করছেন তারা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বাজারের কারসাজি ও অনিয়ম দূরীকরণে বিএসইসি ব্যবস্থা নেবে এটা স্বাভাবিক।

কিন্তু বিএসইসির এটাও বুঝতে হবে, এ বাজার অনেক স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল। দেশের অন্য যেকোন খাতের সঙ্গে তালমিলিয়ে সমান গতিতে এখানে পদক্ষেপ নেয়া যায় না। আর তাই এখানে হাক-ডাক দিয়ে প্রতিদিনই তদন্ত কমিটি ঘোষণার মানে নেই। বিএসইসির বুঝা উচিত, তদন্তের এসব ঘোষণা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পরিণতিতে আমরা সব হারিয়ে নি:স্ব হয়ে যাচ্ছি।

বাজারের এই চিত্র সম্পর্কে বিনিয়োগকারী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রতিদিন আশায় থাকি বাজার ভালো হবে। কিন্তু প্রতিদিনই বাজারে দরপতন হচ্ছে। আর আমাদের লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে। এরইমধ্যে বিনিয়োগ করা পুঁজির প্রায় অর্ধেক নেই হয়ে গেছে। কবে এই লোকসান থেকে বের হবো সেই টেনশনে ঠিকমত ঘুমাতে পারি না।

তিনি বলেন, সরকার পতনের পর পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল এবার হয় তো লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবো। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি। গত সরকারের মতো এই সরকারের আমলেও পুঁজিবাজার সেই পতনের মধ্যেই রয়েছে। আর আমার মতো সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লোকসান গুনেই চলেছি।

বিনিয়োগকারী মিজানুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজার ভালো হবে এই আশায় আছি। কিন্তু বাজারতো ভালো হচ্ছে না। কবে বাজার ভালো হবে তাও বুঝতে পারছি না। দিন যত যাচ্ছে বাজার নিয়ে হতাশা তত বাড়ছে। মাঝে মধ্যে মনে হয় লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়ে চলে যাবো। কিন্তু এতো লোকসানে শেয়ার বিক্রি কিভাবো করবো। ছয় লাখ টাকার শেয়ার কিনে আড়াই লাখ টাকায় লোকসানে রয়েছি।

এদিকে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। সম্প্রতি ১১ কার্যদিবসের মধ্যে ৮ কার্যদিবসেই দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে পুঁজিবাজারের। ফলে পুঁজিবাজার নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি ক্ষোভ বিনিয়োগকারীদের বাড়ছেই। আর দিন দিন আস্থা সংকটে ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে প্রতিদিনই ক্রেতা সংকটে ভুগছে পুঁজিবাজার। এদিন সূচকের সাথে কমেছে টাকার পরিমাণে লেনদেন ও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৩০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৬৮১পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৩৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ৬৮ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৪০১ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫৬ টির, দর কমেছে ১৮২ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৩ টির। ডিএসইতে ৬৩৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৩৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৬৬৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭৭ পয়েন্টে। সিএসইতে ২২৫ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৭ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১০৩ টির এবং ২৫ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১০ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।