শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ২০১০ সালে ধসের পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ফিরেছে দেশের পুঁজিবাজার। এতে ঋণগ্রস্ত বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর পত্রকোষ বা পোর্টফোলিও জোরপূর্বক বিক্রি বা ফোর্সড সেলের আওতায় পড়ে নি:স্ব হয়েছেন। ফলে পুঁজিবাজারে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ধসের ১৪ বছর অতিক্রম করলেও এখনও একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার ফিরে পায়নি বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু এখনও এ ধসের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেননি ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা।

তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতন পর থেকে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। পুঁজিবাজারে আবারও সুদিন ফিরে আসবে এই আশায় বুক বাধছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম চার কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়েছিল ৭৮৬ পয়েন্ট। এতে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে স্বপ্ন বুনতেও শুরু করেছিল।

তবে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে ফের টানা দরপতনে পুঁজিবাজার। প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ব্যাংক খাত সংস্কার এবং পুঁজিবাজারে আস্থা পুনরুদ্ধার করা ছিল অর্থনীতির মূল চ্যালেঞ্জ। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের দেড় মাসে সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশের অর্থবাজারে কিছুটা আশার আলো দেখা দিয়েছে। কিন্তু, পুঁজিবাজারের চিত্র এখনো আগের অবস্থানে আছে।

অন্তর্র্বতীকালীন সরকার ব্যাংক খাত সংস্কারের জন্য গভর্নর হিসেবে অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে সাবেক ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে দেওয়া হয়েছে পুঁজিবাজারের দায়িত্ব। ব্যাংক খাত অভিজ্ঞ অভিভাবক পেলেও পুঁজিবাজার যোগ্য নীতিনির্ধারক পায়নি বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। মুলত তার হুট হাট সিদ্ধান্তে গত এক মাসে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পুঁজি হারিয়েছে। বিএসইসি চেয়ারম্যান বাজার স্থিতিশীল না করে একের পর এক তদন্ত কমিটির ফলে বাজার টানা দরপতন হচ্ছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে বিএসইসি পুনর্গঠন করা হয়েছে। কিন্তু, ইতোমধ্যে বিএসইসি’র নতুন কমিশনের বেশকিছু ভুল সিদ্ধান্ত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এমনকি কমিশনে নিয়োগপ্রাপ্তদের দক্ষতা ও বিচক্ষণতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ফলে পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরার পরিবর্তে বিএসইসি’র সঙ্গে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের অন্তর্দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। তারা আরো বলছেন, বর্তমান কমিশন হয়ত সবাইকে দুর্নীতিবাজ বা খারাপ ভাবছে। অভিভাবক হিসেবে তারা যা করছেন, তা-ই ঠিক; অন্যদের কথা শোনা বা পরামর্শ নেওয়ার দরকার নেই, এমনটা ভাবা হবে খুবই ভুল সিদ্ধান্ত। এমন চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।

এদিকে গত এক মাসের বাজার পরিস্থিতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিকে ২০১০ সালের থেকেও ভয়াবহ ধস বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, পুঁজিবাজারে ২০১০ সালে যে মহাধস নামে তা সবাই স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন। সে সময় একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতনের সঙ্গে সূচকের বড় পতন হয়েছিল। এতে নিঃস্ব হন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। সাম্প্রতিক সময়েও তালিকাভুক্ত প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমেছে। এতে একটু একটু করে পুঁজি হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এ সংখ্যাও কম নয়, লাখের অধিক। কিন্তু সূচকের বড় পতন হয়নি।

স্টক বন্ডের বিনিয়োগকারী মজিবুর রহমান বলেন, সবাই ২০১০ সালের ধসকে মহাধস বলেন। কিন্তু এখন যে নীরব ধস চলছে তা মনে হচ্ছে কেউ দেখছেন না। গত এক মাসে আমার পুঁজি অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০১০ সালের থেকে এটা কোনো অংশেই কম নয়। শুধু আমার নয়, অল্প অল্প করে বাজারের সিংহভাগ বিনিয়োগকারীর পুঁজি শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তদন্ত কমিটি ও ‘জেড ক্যাটাগরি’ ইস্যুতে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে পুঁজিবাজারকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

এদিকে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন বেড়েছে টাকার পরিমাণে লেনদেন। তবে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৪১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৭৩৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৯৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ৯৫ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৮ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৮ টির, দর কমেছে ৩৫৫ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪ টির। ডিএসইতে ৭৯৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৭৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৭১৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৯২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯৮৩ পয়েন্টে। সিএসইতে ২৩৪ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৯ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৯১ টির এবং ১৪টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১৮ কোটি ১৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।