সাখাওয়াত হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের মতামত ছাড়াই গত ১ সেপ্টেম্বর সাত বিশিষ্টজনকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর মধ্যে তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত যোগ দেননি তারা। ফলে একটিও পর্ষদ সভা হয়নি। প্রথম নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে দু’জন দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করায় নতুন দু’জনকে নিয়োগ দিয়েছে বিএসইসি।

ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে ডিএসইর টানাপোড়েনের ডালপালাও ক্রমশ বাড়তে থাকে। বর্তমান কমিশন এসেই ডিএসইর সঙ্গে একটা দৃশ্যমান ব্যবধান তৈরি করে ফেলে। যার কারণে ডিএসইতে যারা বসে আছেন, তারা ক্রমেই বর্তমান কমিশনের পক্ষ ত্যাগ করছেন। এর প্রমাণ মিলেছে গত বুধবার শেষবেলায় হঠাৎ করে ২৮টি কোম্পানির শেয়ার ‘জেড ক্যাটাগরিতে’ স্থানান্তর করার সিদ্ধান্তে। কারণ এদিকে একের পর তদন্ত গঠনের খবরে অস্থির পুঁজিবাজার। এমন সময় বিনিয়োগকারীরা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ধারাবাহিক নেতিবাচক কর্মকান্ডের দিকে আঙ্গুল তুলেছিল।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, বিএসইসির নতুন কমিশন দায়িত্ব নিয়েই বড় বড় বিনিয়োগকারীদের, যারা বাজারের নিয়ন্ত্রক, তাদের আটকানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তাদের ধারণা যারা এতোদিন লুটপাট করেছে, তাদের শায়েস্তা করতে পারলেই পুঁজিবাজার টুপ করে ফুলে ফেঁপে উঠবে। আসলে পুঁজিবাজার সম্পর্কে যাদের সম্যক অভিজ্ঞতা নেই, তাদের এমন ধারণা অমুলক নয়।

ফলে ২৮টি কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরির সিদ্ধান্তে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতন হয়েছে। এদিন ক্রেতা সংকট থাকলেও শেয়ার বিক্রির হিড়িক ছিলো। ফলে ডিএসইর সূচক কমেছে ৯৭ পয়েন্টের বেশি। হঠাৎ ২৮ কোম্পানির শেয়ারকে জেড ক্যাটাগরির সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় আতঙ্ক দেখা যায়।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশজুড়ে শ্রমিক অসন্তোষ ও আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতিতে বর্তমানে পুঁজিবাজার এমনিতেই ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এমন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা অন্ধের মতো বড় বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে একের পর এক শাস্তি আরোপ করে চলেছে। যে কারণে অস্থির হয়ে পড়েছে পুঁজিবাজার। আর টানা দরপতনে নি:স্ব হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

একাধিক বিনিয়োগকারীরা বলেন, পুঁজিবাজার ইস্যুতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার একের পর এক হঠকারী সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া ২৮ কোম্পানির জেড ক্যাটাগরির সিদ্ধান্তে আরও কিছুদিন পরেও করতে পারতে ডিএসই। এতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো না। বাজারের এমন ভঙ্গুর অবস্থায় তাদের এটা করাটা কোনভাবে ঠিক হয়নি। এতে আরো পুঁজিবাজার দরপতন উস্কে দিচ্ছে বলে তারা মনে করেন।
বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করে বলেন, পুঁজিবাজারকে চাপে ফেলার জন্যই ডিএসই এটা করেছে। বিএসইসি ও ডিএসইস অর্ন্তদ্বন্দ্বের বলি হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তারা দিনের পর দিন পুঁজি হারিয়ে নি:স্ব হচ্ছেন।

কোম্পানিগুলো হলো : লুবরেফ বাংলাদেশ, দেশ গার্মেন্টস, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, বিচ হ্যাচারি, ফার কেমিক্যার, প্যাসিফিক ডেনিমস, জিএসপি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, মিরাকল, বিডি থাই, আনলিমা ইয়ার্ন, ভিএফএস থ্রেড ডাইং, এনার্জিপ্যাক, সেন্ট্রাল ফার্মা, এসোসিয়েটেড অক্সিজেন, ফরচুন সুজ, এসকে ট্রিমস, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, খুলনা পাওয়ার, ইন্দোবাংলা ফার্মা, ফনিক্স ফাইন্যান্স, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড এবং লিবরা ইনফিউশন।

এসব কোম্পানির মধ্যে এ ক্যাটাগরির ২টি, বি ক্যাটাগরির ১টি এবং ২৩টি কোম্পানিই ছিল জেড ক্যাটাগরিভুক্ত। মূলত সিকিউরিটি আইন অমান্য করার কারণে পুঁজিবাজারে আজ থেকে ২৮টি কোম্পানির লেনদেন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে হয়েছে। কোম্পানিগুলোর লেনদেন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে হওয়ায় আস্থার অভাবে শেয়ার বিক্রি করতে মরিয়া হয়ে উঠে বিনিয়োগকারীরা। যার কারণে ক্রেতা সংকটে পড়ে কোম্পানিগুলো।