শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দিন যত যাচ্ছে ততই খাদের মধ্যে পতিত হচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। ধারাবাহিক দরপতনে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। অব্যাহত পতনের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে লেনদেন খরাও দেখা দিয়েছে। ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মাঝে হতাশা বেড়েই চলেছে। কোন অবস্থাই বাজার নিয়ে আশার আলো দেখছেন না।

ফলে হতাশা ও অজানা আতঙ্ক ভর করছে বিনিয়োগকারীদের। এদিকে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচকের সাথে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর ও টাকার পরিমাণে লেনদেন। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

মুলত অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর গত ১১ আগস্ট ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ১০ কোটি টাকা। ওইদিন ডিএসইর সূচক বেড়েছিল ৯১ পয়েন্ট। এরপর ১৮ আগস্ট ডিএসইর লেনদেন নেমে আসে ৪৮০ কোটি ৮৯ লাখ টাকায়। আর আজ ডিএসইর লেনদেন আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকায়। এই লেনদেন অন্তবর্তী সরকারের সময়ে ডিএসইর সর্বনিম্ন লেনদেন। তবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে লেনদেন আরও তলানিতে নেমেছিল। শেখ হাসিনার সর্বশেষ কার্যদিবস ৪ আগস্ট ডিএসইর লেনদেন নেমেছিল ২০৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকায়।

বাজারের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, প্রতিদিন আশায় থাকি পুঁজিবাজার ভালো হবে। কিন্তু প্রতিদিনই বাজারে দরপতন হচ্ছে। আর আমাদের লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে। এরই মধ্যে বিনিয়োগ করা পুঁজির প্রায় অর্ধেক নাই হয়ে গেছে। কবে এই লোকসান থেকে বের হব সেই টেনশনে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না।

তিনি বলেন, সরকার পতনের পর পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল এবার হয় তো লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারব। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি। গত সরকারের মতো এই সরকারের আমলেও পুঁজিবাজার সেই পতনের মধ্যেই রয়েছে। আর আমার মতো সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লোকসান গুনেই চলেছি।

বিডিবিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের বিনিয়োগকারী শফিকুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজার ভালো হবে এই আশায় আছি। কিন্তু বাজারতো ভালো হচ্ছে না। মুলত একের পর এক তদন্ত কমিটি গঠন করে বাজারকে অস্থিতিশীল করে ফেলছে। তবে বাজার কবে ভালো হবে তাও বুঝতে পারছি না। দিন যত যাচ্ছে বাজার নিয়ে হতাশা ততই বাড়ছে। মাঝে মধ্যে মনে হয় লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়ে চলে যাই। কিন্তু এত লোকসানে শেয়ার বিক্রি কীভাবে করব। ১২ লাখ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে এখন মুলধন আছে আড়াই লাখ টাকা।

স্টক এন্ড বন্ডের বিনিয়োগকারী আবদুর রহমান ক্ষোভের সুরে বলেন, এটাতো যেন রোম পুড়ে যাচ্ছে, নীরুর বাঁশি বাজানোর গল্পের মতো। পতনে পুঁজিবাজার ছারখার হয়ে যাচ্ছে। মার্কেট মেকাররা শীতাতাপ নিয়ন্তিত কক্ষে খোশগল্পে মত্ত।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী কাজী হোসাইন আলী বলেন, পুঁজিবাজার সংস্কারে রোডম্যাপ ঠিক করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) মিটিং কী শুধু কাগজ কলমে। এত বড় মিটিং এর পরও সূচকের বড় দরপতন রহস্য জনক। এ ভাবে চলতে থাকলে আর কিছু দিন পর বাজার এমনেই বন্ধ হয়ে যাবে। বর্তমান বাজারের এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখী করা খুবই চ্যালেজিং বলে মনে করছেন তিনি।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৩৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৫৮৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৫২ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ৩৯ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৭ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০৫ টির, দর কমেছে ২৪৪ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৮ টির। ডিএসইতে ৩৮৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১১৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫০৩ কোটি ৯০ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৫৮৮ পয়েন্টে।
সিএসইতে ২১০ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬১ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১২২ টির এবং ২৭ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।