ভারতে বসে আওয়ামীলীগের হাল ধরার চেষ্টায় নানক-হানিফ-নাছিম
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর কার্যত দিশাহারা হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দলের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা না আসায় প্রথমে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে চলে যান তারা, কয়েক দিনের মধ্যেই দেশ ছাড়তে শুরু করেন সাবেক সরকারের আমলের নেতাকর্মীরা। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পেরিয়ে গেছে প্রায় দুই মাস। কিন্তু এখনো আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য অবৈধভাবে দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। যারা পালিয়ে গেছেন বা পালানোর চেষ্টায় আছেন, তাদের প্রায় সবাই হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, সরকার পতনের এত দিন পরও কীভাবে এসব ব্যক্তি দেশ ছেড়ে পালাতে পারছেন।
আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। পালাতে গিয়ে সীমান্তে ধরাও পড়েছেন কেউ কেউ। সীমান্ত পার হতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে ৫ আগস্টের কিছুদিন আগে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে আর দেশে ফেরেননি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের এমন ১৩ নেতা রয়েছেন।
৫ আগস্টের পর দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ এক হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। দালালের পাশাপাশি স্থানীয় নেতা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তারা সীমান্ত পাড়ি দেন। এ ক্ষেত্রে অধিকাংশই সিলেট, নেত্রকোনা, ঠাকুরগাঁও, ময়মনসিংহসহ অন্তত সাতটি সীমান্ত ব্যবহার করেছেন।
পলাতক এসব নেতাকর্মীর অধিকাংশের দেখা মিলছে কলকাতার শপিংমল, পার্ক, কফি হাউস, সিনেপ্লেক্স থেকে শুরু করে চায়ের আড্ডাতেও। কলকাতাস্থ চট্টগ্রাম সমিতির আশ্রয়ে রয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরা। ফেনীর সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিমসহ দলটি অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজন নেতা ভারত থেকে ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন।
তবে ভারতে বসে দল গোছানোর চেষ্টা করছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। প্রত্যক্ষদর্শী ও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যেখানে বলা হয়েছে আওয়ামী লীগ ও দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা যে কোনো পরিস্থিতিতে দেশবাসীর পাশে আছেন। আজ বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়ে এ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। সেন্ট মার্টিনের প্রতি ইঙ্গিত করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মাটিতে অন্য কোনো দেশের পতাকা উড়তে দেওয়া হবে না।
প্রয়োজনে আরেকটি যুদ্ধ হবে, স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ। দেশের সার্বিক অবস্থা চারদিকে সবার মাঝে এক সংকটময় অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং দলের সভানেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা যে কোনো পরিস্থিতিতে আপনাদের পাশে আছেন এবং থাকবেন ইনশাআল্লাহ। আপনারা সবই জানেন, সবই দেখেছেন। এখন হয়তো সব কিছু অনুধাবন করতে পারছেন, কী পরিস্থিতিতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছিলেন। ষড়যন্ত্রকারীরা আরো লাশ চেয়েছিল। তিনি চাননি আর কোনো বাবা-মায়ের বুক খালি হোক।
তাই সময়ের প্রয়োজনে এই সাময়িক পদক্ষেপ নিয়েছেন। আপনারা দেখেছেন, আদালতের রায় শিক্ষার্থীদের সব দাবির পক্ষেই গেছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও আমাদের সরকার তাদের সব দাবি মেনে নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচারের নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। নিহত সব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, আহতদের বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। তারপরও কেন এই অরাজকতা, এত হত্যা, এত ধ্বংসযজ্ঞ করা হলো? কারণ, এর পেছনে ছিল ক্ষমতা দখলের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এক ষড়যন্ত্র। আপনারা দেখেছেন, ১৬ জুলাই থেকেই ছাত্রদের আন্দোলনকে হাইজ্যাক করে কীভাবে দেশের রাজনৈতিক অপশক্তি ও বিদেশি এজেন্টরা কীভাবে হত্যা ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে।
এমনকি ছাত্রদের ওপর ৭.৬২ রাইফেল ব্যবহার করে গুলি চালিয়ে পরিস্থিতিকে অগ্নিগর্ভ করে তোলা হয়। কীভাবে ঢাকা শহরে অবস্থিত রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। কীভাবে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, বৌদ্ধ মঠে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। কত নিষ্ঠুরভাবে পুলিশ ও সাংবাদিক হত্যা এবং মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মীদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে। পাঁচই আগস্ট কিভাবে বাঙালি জাতির মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার, জাতির পিতার স্মৃতিবিজড়িত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ধ্বংস করা হয়েছে।
অন্যদিকে ভারতের কলকাতায় অবস্থান করা একজন আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সীমান্ত পারাপারের চুক্তি করেছিলেন। গাড়িতে করে সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছানো এবং প্রশাসনসহ সব কিছু ম্যানেজ করে তাকে পার করে দেওয়ার কথা ছিল চুক্তিতে। এরপর স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সহায়তায় আগস্টের শেষ দিকে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতে ঢুকেছেন।
সীমান্ত পার হয়ে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে তিনি কলকাতায় পৌঁছেন। সেখানে গিয়ে প্রথম এক সপ্তাহ তিনি হোটেল থেকেই বের হননি। পরে ভারতে আসা অন্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। এখন তারা বিভিন্ন কফি হাউস ও পার্কে মাঝে মধ্যে আড্ডা দেন।
জানা গেছে, ভারতে বসে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার কাজ করছেন দলটির নেতারা। সূত্রের খবর, ভারতে বসে দল গোছানোর সচেষ্ট আছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
তারা দেশে ও বিদেশে থাকা নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন; সাহস জোগাচ্ছেন। সেই সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি, কেন্দ্রীয় নেতা ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়। হেফাজতে থাকা অবস্থাতেই তাদের অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়।
তবে পরে নিরাপত্তা হেফাজত থেকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় নিজেদের ও পরিবারের জিম্মায়। ছেড়ে দেওয়ার কয়েক দিন পর থেকেই তাদের দেখা মিলছে পাশর্^বর্তী দেশে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। বিশেষত কলকাতায়। পালাতে গিয়ে সীমান্তে ধরাও পড়েছেন কেউ কেউ। সীমান্ত পার হতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। সম্প্রতি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন মন্ত্রী এমপির ভারতে দেখা মেলে যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।
সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে কলকাতার পার্কে দেখা গেছে। কামালকে ভারতে দেখা যাওয়ায় শোরগোল উঠলেও তার বৈধভাবে দেশ ছাড়ার কোনো তথ্য পুলিশের হাতে নেই।
পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধান অতিরিক্ত আইজি (চলতি দায়িত্বে) শাহ আলম বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ যাদের কথা জানা যাচ্ছে, তারা বৈধভাবে যাননি এটা নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে। তারা ইমিগ্রেশন পার হলে আমাদের কাছে প্রমাণ থাকবেই। তাদের ক্ষেত্রে কোনো প্রমাণ নেই।
অতিরিক্ত আইজি শাহ আলম বলেন, অনেকেই অবৈধভাবে গেছেন। কেউ কেউ দেশে আছেন। অনেককেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তারও করছে। ৬-৭ আগস্ট কয়েকজন গেছেন। মূলত ওই সময় কোনো নির্দেশনা ছিল না। এদের মধ্যে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল কাহহার আকন্দ রয়েছেন।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও আওয়ামী লীগের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী সরকার পতনের পর আগস্ট মাসেই অবৈধপথে দেশ ছাড়েন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের পাশাপাশি সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য এসএম কামাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল সম্প্রতি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাড়ি জমান। গত মাসের শুরুর দিকে সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, সাবেক নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল), সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ (নাসিম) ও আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কেন্দ্রীয় সদস্য রেমন্ড আরেঙ, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সাবেক সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্ত,
টাঙ্গাইলের সাবেক সংসদ সদস্য ছোট মনির, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি মৃণাল কান্তি দাস, নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান লিটন (ভিপি লিটন), ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর আনিস ও সাঈদসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কলকাতায় যান।
তবে কেন্দ্রীয় কিছু নেতা ও সীমান্ত অঞ্চলের আওয়ামী লীগ নেতারা ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন থেকে ৭ আগস্ট তিন দিনে বৈধ পথেই দেশ ছাড়েন।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা ইউরোপ ও আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন। এর মধ্যে আলাউদ্দিন নাছিম কানাডায়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সিদ্দিকী নাজমুল আলম যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন। সিদ্দিকী নাজমুলের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব রয়েছে। ভারতে অবস্থানরতদের কেউ কেউ পশ্চিমা দেশগুলোতে পাড়ি জমানোর চেষ্টায় আছেন।
আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি অসীম কুমার উকিল ও তার স্ত্রী অপু উকিলের নিজস্ব ফ্ল্যাট রয়েছে কলকাতার নিউ টাউনে। সেই বাসাতেই থাকছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। অসীম কুমার উকিলের এক সন্তান কানাডায় পড়ালেখা করেন, আরেকজন আমেরিকায়। তাই তারা দ্রুতই কানাডা অথবা আমেরিকায় পাড়ি জমাবেন বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলও লন্ডনে পাড়ি জমাবেন।
ভারতের একাধিক সূত্র জানান, কলকাতার সল্টলেক সিটি শপিংমল, নিউমার্কেট, কেষ্টপুরসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন দেশ থেকে পালানো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া শিলিগুড়ি, রামগঞ্জ ও দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েক নেতার দেখা মিলেছে। কলকাতার সিটি শপিংমলের স্টারবাক্স কফিশপ ও চায়ের দোকানে নিয়মিত আড্ডা বসে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের। কলকাতায় সিনেপ্লেক্সে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক এক এমপির সাক্ষাৎ পাওয়ার কথা জানান এক ব্যক্তি।
আবার বাংলাদেশের মতো কলকাতাতেও বেপরোয়া জীবনযাপন করছেন কিছু নেতা। তাদের একজন টাঙ্গাইলের ছোট মনির কলকাতার সল্টলেক এলাকার একটি অভিজাত বারে গিয়ে বিশ্ঙ্খৃৃলা করেছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার পতনের আভাস পেয়ে আওয়ামী লীগের ৪৫ জন মন্ত্রী-এমপিসহ শীর্ষস্থানীয় নেতা ৫ আগস্টের আগেই দেশ ছাড়েন। এর মধ্যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দুই দিন আগেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস পরিবারসহ দেশ ছাড়েন। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও আন্দোলনের সময় সপরিবারে সিঙ্গাপুরে চলে যান। পলাতক অবস্থায় ও সীমান্ত দিয়ে পালানোর সময়ও অর্ধশতাধিক এমপি-মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা ও দালালদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের সাতটি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছেন তারা। এর মধ্যে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া এবং নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কলমান্দা দিয়ে মেঘালয়ে পাড়ি জমিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সিলেটের সীমান্ত দিয়ে আসাম পালিয়ে যাওয়ার অন্যতম রুট। বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শাসসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দনা সীমান্ত এলাকায় বিজিবির হাতে আটক হয়েছিলেন।
তার কাছ থেকে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা দালালরা নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, যশোর, লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁও সীমান্ত দিয়েও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী পালিয়ে গেছেন। শুরুর দিকে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় সীমান্তের দুই পাড়ের সঙ্গে চুক্তি হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রেট বেড়েছে। সর্বশেষ, কোটি টাকা পর্যন্ত সীমান্ত পারাপারের চুক্তি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ কর্মকর্তা ও সরকারের সুবিধাভোগীদের অবস্থান ও অন্তর্ধানের বিষয়ে বিভিন্ন গুঞ্জন শুরু হলে গত ১৮ আগস্ট আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- শেখ হাসিনার পতনের পর প্রাণ রক্ষার্থে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিচারক, পুলিশ সদস্যসহ ৬২৬ জন সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
এর মধ্যে ৬১৫ জন স্ব-উদ্যোগে সেনানিবাস ছেড়েছেন। বর্তমানে সাতজন সেনানিবাসে রয়েছেন। আশ্রয় দেয়া ব্যক্তিদের মধ্য থেকে এ পর্যন্ত চারজনকে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বা মামলার ভিত্তিতে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সেনানিবাস থেকে নিজস্ব হেফাজতে যাওয়ার পর পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর বিপুল সংখ্যকেরই দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তথ্য মিলেছে। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়ায়দুল কাদেরসহ শীর্ষ স্থানীয় অনেক রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তা কোথায় অবস্থান করছেন, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি।