শহীদুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজার ইস্যুতে একের পর এক বৈঠক করলেও দরপতন থামছে না। ফলে টানা দরপতনের মধ্যে পড়ে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে দিন যতই যাচ্ছে ততই বিনিয়োগকারীদের মাঝে হাহাকার বাড়ছে। এদিকে পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও সংস্কারের লক্ষে (বিএসইসি) ৫ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করলেও তার কোন ইতিবাচক প্রভাব নেই পুঁজিবাজার।

বরং সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তে উল্টো ক্রেতা সংকট তীব্র হয়েছে। এতে বুঝা যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উপর আস্থার সংকটে বাজারবিমুখ বিনিয়োগকারীরা। যার ফলে চলতি সপ্তাহে তিন কার্যদিবসেই পুঁজিবাজারে দরপতন হলো। আর শেষ সাত কার্যদিবসের মধ্যে ছয় কার্যদিবসেই দরপতন হয়েছে ডিএসইতে।

এদিকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনেও (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়। নতুন চেয়ারম্যান আসায় বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টদের ধারণা ছিল এবার হয়তো পুঁজিবাজার উত্থানে ফিরবে। কিন্তু সেই আশায় গুরেবালি। দীর্ঘ দিন পতনের বন্দি থাকা পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা আগের চেয়ে নাজেহাল। বিনিয়োগকারীরা বর্তমান বাজার পরিস্থিতিকে ৯৬ ও ২০১০ সালের চেয়ে ভয়াবহ বলে মনে করছেন। এ অবস্থায় পুঁজি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বিনিয়োগকারীরা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাশেদ মাকসুদ যে দিন বিএসইসিতে যোগদান করেছেন সেদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজার ৭৭৫ পয়েন্ট এবং বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯৭ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। তার যোগদানের পর গত ৩৪ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক নেমেছে ৫ হাজার ৩২৩ পয়েন্টে এবং বাজার মূলধন নেমেছে ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৩০১ কোটি টাকায়। এতে দেখা যায়, আলোচ্য সময়ে ডিএসইর সূচক কমেছে ৪৫২ পয়েন্ট এবং বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমেছে ৩২ হাজার ২৩২ কোটি টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বাজারে নতুন মার্কেট মেকার বা বড় বিনিয়োগকারী তৈরি না করে একের পর এক তদন্ত কমিটি গঠন করায় বড় বিনিয়োগকারীরা সাইড লাইনে রয়েছেন। এছাড়া তাদের উপর উপর্যপরি শাস্তির খড়ক অব্যাহত রাখাতে বাজারের এমন দৈন্যদশা তৈরি হয়েছে। যাদের ওপর শাস্তি আরোপ করা হচ্ছে, তারা অব্যাহতভাবে বাজারকে চাপে রাখছে। যার ফলে বাজার কোন ভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

এছাড়া যারা এতদিন বাজারে ইচ্ছেমতো লুটপাট করেছে, তাদেরকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কিন্তু বাজারকে ঠিক না করে, বাজারে নতুন সাপোর্ট তৈরি না করে বিএসইসির কর্মকর্তাদের কেবল শাস্তির প্রক্রিয়া মশগুল থাকাটা কোনভাবেই সমীচীন হয়নি। পুঁজিবাজার সম্পর্কে সম্যক অভিজ্ঞতা না থাকাতেই এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৩২৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৮৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৩৯ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৪০০ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪২ টির, দর কমেছে ১৯৫ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৩ টির। ডিএসইতে ৩৫৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১১ কোটি ১৮ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৬৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯৬১ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৯৩ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭০ টির দর বেড়েছে, কমেছে ৯৫ টির এবং ২৮ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১১ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।