নজরুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত দুই মাসেও মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। প্রায় প্রতিদিনই লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমছে। এতে বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। সার্বিক পুঁজিবাজারে মন্দা বিরাজ করলেও প্রতিনিয়ত বাজারে যুক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন বিনিয়োগকারী। তবে এই বিনিয়োগকারীদের পুরোটাই স্থানীয়। তবে বিপরীতে প্রবাসী বা বিদেশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমছে।

মুলত শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত দুই মাসে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব কমেছে ১১৯টি। আর চলতি বছরের ১০ মাসে বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কমেছে ৮ হাজারের বেশি। অন্যদিকে, গত দুই মাসে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার। তবে চলতি বছরের শুরুর তুলনায় বর্তমানে শেয়াবাজারে প্রায় ১ লাখ বিও হিসাব কম রয়েছে।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)-এর তথ্য অনুযায়ী, ৯ অক্টোবর শেষে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ৩১৯টি। যা শেখ হাসিনা সরকার পতনের সময় ছিল ১৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫৮টি। সে হিসাবে হাসিনা সরকার পতনের পর পুঁজিবাজারে বিও হিসাব বেড়েছে ৭ হাজার ২৬১টি।

সিডিবিএল’র জানিয়েছে, বর্তমানে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব রয়েছে ৪৬ হাজার ৯৬৫টি। হাসিনা সরকার পতনের সময় এই সংখ্যা ছিল ৪৭ হাজার ৮৪টি। অর্থাৎ গত দুই মাসে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ১১৯টি।

বিদেশিদের পুঁজিবাজার ছাড়ার এই প্রবণতা চলছে আরও আগে থেকেই। গত বছরের নভেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কমছে। গত বছরের ২৯ অক্টোবর বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব ছিল ৫৫ হাজার ৫১২টি। এরপর ওই বছরের শেষদিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৫৫ হাজার ৩৪৮টিতে।

সে হিসাবে চলতি বছরে দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি ও প্রবাসীদের নামে বিও হিসাব কমেছে ৮ হাজার ৩৮৩টি। আর গত বছরের ২৯ অক্টোবরের তুলনায় বর্তমানে বিদেশি ও প্রবাসীদের নামে বিও হিসাব কম আছে ৮ হাজার ৫৪৭টি। বিদেশিদের পুঁজিবাজার ছাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকলেও সরকার পতনের পর স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে দেশি বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১৬ লাখ ১১ হাজার ২৯টি। যা হাসিনা সরকার পতনের সময় ছিল ১৬ লাখ ৩ হাজার ৮২২টি। অর্থাৎ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ৭ হাজার ২০৭টি।

তবে হাসিনা সরকারের পতনের পর পুঁজিবাজারে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়তে দেখা গেলেও তার আগে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছেড়েছেন। চলতি বছরের শুরুতে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫১টি। আর বর্তমানে বিও হিসাব আছে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ৩১৯টি। অর্থাৎ চলতি বছরে বিও হিসাব কমেছে ৯৮ হাজার ২৩২টি।

এদিকে বর্তমানে পুঁজিবাজারে যে বিনিয়োগকারীরা আছেন, তার মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৩২৩টি। হাসিনা সরকার পতনের সময় এই সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৩৪টি। অর্থাৎ হাসিনা সরকার পতনের পর পুরুষ বিনিয়োগকারীদের হিসাব বেড়েছে ৬ হাজার ৮৮৯টি।

অন্যদিকে বর্তমানে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২ হাজার ৬৭১টি। হাসিনা সরকার পতনের সময় এই সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২ হাজার ৪৭২টি। সে হিসাবে হাসিনা সরকার পতনের পর নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ১৯৯টি। হাসিনা সরকার পতনের পর নারী ও পুরুষ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি কোম্পানির বিও হিসাবও বেড়েছে। বর্তমানে কোম্পানি বিও হিসাব রয়েছে ১৭ হাজার ৩২৫টি। হাসিনা সরকার পতনের সময় এই সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ১৫২টি। সে হিসেবে গত দুই কোম্পানি বিও হিসাব বেড়েছে ১৭৩টি।

সিডিবিএল তথ্য অনুযায়ি, বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের যে বিও হিসাব আছে তার মধ্যে একক নামে আছে ১১ লাখ ৯২ হাজার ৭১৫টি, যা হাসিনা সরকার পতনের সময় ছিল ১১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৭টি। অর্থাৎ গত দুই মাসে একক নামে বিও হিসাব বেড়েছে ৯ হজার ৩৮টি। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের যৌথ নামে বিও হিসাব আছে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ২৭৯টি। হাসিনা সরকার পতনের সময় যৌথ বিও হিসাব ছিল ৪ লাখ ৬৭ হাজার ২২৯টি। অর্থাৎ গত দুই মাসে যৌথ বিও হিসাব কমেছে ১ হাজার ৯৫০টি।