শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের মধ্যে পড়ে প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। দিন যতই যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা তত ভারী হচ্ছে। পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারীদের হতাশা বেড়েই চলেছে। তবে টানা দরপতন হলে চোখে দেখছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফলে দরপতনের সঙ্গে পুঁজিবাজারে দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা। ধারাবাহিকভাবে পুঁজিবাজারে যেমন দরপতন হচ্ছে, তেমনি ধীরে ধীরে লেনদেনের গতিও কমে আসছে।

তবে অন্তবর্তী সরকার আগমনের খবরে পুঁজিবাজারে বড় চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছিল। এতে বিনিয়োগকারীরা বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন। তারা মনে করেছিল গত আড়াই বছরের ঘুরে ধরা পুঁজিবাজার অন্তবর্তী সরকারের ছোঁয়ায় এখন কেবল সামনের দিকেই অগ্রসর হবে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের সেই আশায় গুড়ে বালি। বিশিষ্ট ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে নতুন কমিশনের শুরু থেকেই টানা দরপতনে বৃত্তে পুঁজিবাজার। তবে বাজারকে কোনভাবেই ইতিবাচক ধারায় ফেরানো যাচ্ছিল না।

এর প্রেক্ষিতে কমিশন বাজারের বিভিন্ন অংশীজন তথা বিভিন্ন গ্রুপ ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে, যারা মার্কেট মেকার নামে পরিচিত, তাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠকের আয়োজন করে। এসব সিরিজ বৈঠকের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য মার্কেট মেকারদের সম্ভাব্য সহযোগিতা লাভ। কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে মার্কেট মেকাররা বরাবরের মতো তাদের নানা দাবি ও পরামর্শ তুলে ধরেছে। পাশাপাশি বাজার ইতিবাচক ধারায় ফেরাতে তাদের প্রথাগত ‘প্রত্যয়’ও ব্যক্ত করেছে।

কিন্তু মার্কেট মেকারদের দেওয়া সেই প্রত্যয়ের ছিটেফোঁটাও বাস্তবে দেখা মিলেনি। বাজার যথানিয়মে নেতিবাচক ধারায়ই আটকে রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, এই মার্কেট মেকাররাই নানাভাবে কারসাজিকারীদের লুটপাটে সহযোগিতা করেছে। তারা বাজারের সুস্থ্য ধারা কখনোই চায় না। সব সময় তারা বড় বড় বুলি আউড়ায়, কিন্তু বাস্তবে ছিটেফোঁটা অবদানও রাখে না।

তবে বিনিয়োগকারীদের আরেকটি অংশ বলছেন, মন্দার ছোবলে মার্কেট মেকাররাও বড় আকারে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের লোকসানের পাল্লাও বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কম নয়। যে কারণে তারা ইচ্ছে করলেও বাজারকে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দিতে পারছে না। লোকসানের ভারে অনেক প্রতিষ্ঠান অস্তিত্ব সংকটের মুখেও পড়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে নতুন করে তারল্য প্রবাহ বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় পুঁজিবাজারে সরকারি-বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগে পলিসিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পাশাপাশি দেশের বড় বড় শিল্প গোষ্টির মালিকদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে উৎসাহ যোগাতে হবে। অন্যথায় পুঁজিবাজারকে কাঙ্খিত পর্যায়ে নেওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নেতেই থেকে যাবে।

এদিকে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর ও টাকার পরিমাণে লেনদেন। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৩৬৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৯৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৬৩ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৮ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯৬ টির, দর কমেছে ২৫২ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৫০ টির। ডিএসইতে ৩১৮ কোটি ৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৩২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৫০ কোটি ৭৩ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৪৭ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৮৫ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪২ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১১১ টির এবং ৩২ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৮ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।