শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। গত দুই মাস ধরে চলছে টানা পতন। এতে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি নতুন করে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত উধাও হয়ে গেছে। তবে টানা দরপতন হলে এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থার। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট চরমে। যার ফলে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা হাত গুটিয়ে বসে আছেন।

ফলে আস্থা ও তারল্য সংকটে হাহাকার করছে পুঁজিবাজার। রীতিমতো লেনদেনের খরা দেখা দিয়েছে উভয় পুঁজিবাজারে। শুধু তাই নয়, সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) লেনদেন কমে তিনশ কোটি টাকার নিচে চলে এসেছে। অর্থাৎ অন্তর্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজারে সবচেয়ে কম লেনদেন হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পুঁজিবাজারে উত্থান ও পতন থাকবে। কিন্তু আমাদের বাজারে নিয়মিত দরপতন চলছে। এটি স্বাভাবিক বাজারের বৈশিষ্ট্য নয়। এছাড়া টানা দরপতন পরিকল্পিত কোন কারসাজি কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত। কারণ কেন দরপতন হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। কারণ স্বৈরাচার সরকারের প্রেতাত্মারা নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য পরিকল্পিতভাবে দরপতন ঘটিয়ে বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে কিনা তাও দেখার বিষয় বলে মনে করছে বাজার বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিল দেশের মানুষ। অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্বে পড়ার শঙ্কা থেকে বেঁচে ফিরে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আশার সঞ্চার হয়। শেখ হাসিনার পতনের পর চার দিন ঊর্ধ্বমুখী হয় পুঁজিবাজার। কিন্তু গত ১২ আগস্ট থেকে চলছে টানা দরপতন। অন্তর্র্বতী সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে বড় উদ্যোগ নিয়েছেন, যার প্রতিফলন ব্যাংকিং খাতে পড়েছে। কিন্তু পুনর্গঠিত বিএসইসি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে পারেনি।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১২ আগস্ট ঢাকার পুঁজিবাজারের মূলধনের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে তা কমে ৬ লাখ ৭০ হাজার কোটিতে নেমেছে। ফলে এ সময়ে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৩৯ হাজার কোটি টাকা। এ সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৫৬৭ পয়েন্ট। গত ১২ আগস্ট ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজার ৯৩২ পয়েন্ট। আলোচ্য সময়ে তা কমে ৫ হাজার ৩৬৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। গত ১২ আগস্ট লেনদেন হয়েছির ১ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। আজ বুধবার ডিএসইতে লেনদেন কমে ২৯৬ কোটি ৩৪ লাখে নেমেছে।

এদিকে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়াগ্রস্ত দেশ পাকিস্তানের পুঁজিবাজার যখন রেকর্ড উত্থান হচ্ছে, তখন দুর্নীতিবাজ সরকারের পতনের পর পুঁজিবাজারের অবস্থার উন্নতির কথা, সেখানে উল্টো পতনের ধারা কেন এ প্রশ্ন বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বাজার সংশ্লিষ্টদের।

ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট আছে। আস্থার সঙ্গে রিটার্নের সম্পর্ক রয়েছে। রিটার্ন ফিরে পেলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে। এখনই রিটার্ন পেতে হবে বিষয়টি এমন নয়, ভবিষ্যতে রিটার্ন পাবেন এমন আশা থেকেও মানুষ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে থাকে। তবে লেনদেনে যে খরা দেখা দিয়েছে, তা দিয়ে বাজার মধ্যস্ততাকারীরাও টিকে থাকবে কি না, তা দেখার বিষয়।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৪৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৩১৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৮২ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৪৭ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৫ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৩ টির, দর কমেছে ৩০০ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪২ টির। ডিএসইতে ২৯৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২১ কোটি ৭২ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩১৮ কোটি ৬ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৯৭২ পয়েন্টে। সিএসইতে ২০৯ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৮ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৪২ টির এবং ১৯ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।