পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে ৩ হাজার কোটি টাকার ‘সভরেন গ্যারান্টি’ পাচ্ছে আইসিবি
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: রাষ্ট্রায়াত্ব বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) ৩ হাজার কোটি টাকার ‘সভরেন গ্যারান্টি’ দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আইসিবি এই গ্যারান্টি পেলে বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো ঋণদাতা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য সমপরিমাণ টাকার ঋণ নিতে পারবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) সূত্রে জানা গেছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমাদের একটি বৈঠক ছিল যেখানে পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করার জন্য আইসিবি একটি তহবিল পেতে বলেছিল সে বিষয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। আমরা চেষ্টা করি সেটাকে রেজুলেশন আকারে করে অর্থ উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরার জন্য। তবে পরবর্তীতে অর্থ উপদেষ্টা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে সভরেন গ্যারান্টি দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেবেন। পরবর্তীতে এ গ্যারান্টি পেলে বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো ঋণদাতা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সমপরিমাণ টাকার ঋণ নিতে পারবে আইসিবি।
তথ্য অনুযায়ী, আইসিবিকে ৩ হাজার কোটি টাকার সভরেন গ্যারান্টি দেয়ার আলোচনা কয়েকমাস আগে থেকে ছিল। পরবর্তীতে তা আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সেই আলোচনার ইতি ঘটে। অনিশ্চিত হয়ে যায় আইসিবির ঋণ পাওয়া। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সম্প্রতি আইসিবিকে ৩ হাজার কোটি টাকার সভরেন গ্যারান্টি দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফলে এক মাস বা তার কিছুটা বেশি সময়ের মধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকার সভরেন গ্যারান্টি পেতে যাচ্ছে আইসিবি। এ গ্যারান্টি পেলে বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো ঋণদাতা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সমপরিমাণ টাকার ঋণ নিতে পারবে আইসিবি।
জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে কয়েক দফায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে তারল্য সংকট মেটাতে সরকারের কাছে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ চেয়ে আসছিল আইসিবি। তবে আর্থিক সংকটে থাকা সরকারের পক্ষে সরাসরি ঋণ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে গেলে সেই গ্যারান্টার হওয়ার স্বপ্নও ধুলিসাৎ হয় আইসিবির।
তবে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর নতুন করে এ বিষয়টি সামনে এনে তা সমাধানে ৩ হাজার কোটি টাকার সভরেন গ্যারান্টার হওয়ার জন্য সম্মত হয়েছে। এতে পুঁজিবাজারে বড় বিনিয়োগ করতে আইসিবির সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
এফআইডির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আইসিবির ঋণ আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকার আইসিবিকে সরাসরি ঋণ দিতে পারবে না। তবে গ্যারান্টি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে।
তবে আইসিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য সরকারের কাছ থেকে তহবিল সহায়তা পাওয়ার ব্যাপারে আমরা খুবই ইতিবাচক ও আশাবাদী। আমরা প্রয়োজনীয় বিষয়াদির ব্যাপারে কাজ করছি। যেহেতু আইসিবির প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে পুঁজিবাজারকে সমর্থন দেওয়া, তাই তহবিলের একটি অংশ পুঁজিবাজারে সরবরাহ করা হবে। এছাড়া পুঁজিবাজারকে সহায়তা দিতে কয়েক বছর ধরে আইসিবি’র নেওয়া উচ্চ-সুদের মেয়াদি আমানত পরিশোধ করতেও তহবিলের কিছু অংশ ব্যবহার করা হবে।
এ বিষয়ে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, গ্যারান্টি পেতে সরকার নির্ধারিত ফরম্যাটে কিছু নথিপত্রসহ আবেদন করতে হয়। এসব নথি প্রস্তুতের কাজ চলছে। শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে।
সরকারের কাছে কত টাকার ঋণ গ্যারান্টি চাইবেন এমন প্রশ্নে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আইসিবি ৫ হাজার কোটি টাকা চায়। এখন সরকার কতটা দেবে, তা তো বলতে পারি না। তবে এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ঋণ চেয়ে আবেদন করেছিল আইসিবি। তবে ১৩ জুন চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, সরকার গ্যারান্টার হলে ঋণ দিতে আপত্তি নেই।