আস্থা সংকট কাটলে স্থিতিশীলতায় ফিরবে পুঁজিবাজার, ফের রাস্তায় বিনিয়োগকারীরা
শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের নামমাত্রা উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে সূচকের কিছুটা উত্থান হলেও বাজার নিয়ে আতঙ্ক কাটছে না বিনিয়োগকারীদের। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মুল চ্যালেঞ্জ। কারণ গত দুই মাস টানা দরপতনে বাজারের উপর আস্থা নেই বিনিয়োগকারীদের। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট দূরীকরণের সুশাসনের বিকল্প নেই অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা।
তাছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংস্কারের নামে হুট হাট সিদ্ধান্তে বাজার আরো অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। টানা দরপতনে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীদের পুঁজির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ উধাও হয়ে গেছে। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার উপর আস্থা সংকটে ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা। তাই বর্তমান বাজারের সূচকের টানা উত্থানের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে টানা দরপতনের প্রতিবাদে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি রক্ষায় সোমবার সকালে মতিঝিলে মানববন্ধন করেছেন বিনিয়োগকারীরা। একাধিক ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সাথে আলাপকালে বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথম চার কার্যদিবস সূচকের বড় উত্থান হলেও এর পর থেকে টানা দরপতন শুরু হয়েছে, তা থামছেই না। এ অবস্থা কতদিন চলবে, সে বিষয়ে কেউ কোনো ধারণা দিতে পারছে না।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের যতদিন পূর্ণ আস্থা ফিরে না আসবে ততদিন বাজার সঠিক পথে চলতে পারবে না। সবার আগে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরাতে হবে। হাসিনা সরকারের দীর্ঘ ১৬ বছর পুঁজিবাজার নিয়ে খেলা করা হয়েছে। হাসিনা সরকারের পতন হলেও একটি চক্র বাজারকে অস্থিতিশীল করে রাখার চেষ্টায় ব্যস্ত। হাসিনা সরকারের প্রেতাত্মাগুলোকে সরানো গেলেই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে। আর বাজার চলতে তার আপন গতিতে।
ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারে মূল সমস্যা আস্থা সংকট। নতুন কমিশন আস্থা সংকট দুর করতে না পারলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবো না। এছাড়া বাজারে আস্থা বলতে কিছু নেই। নতুন কমিশন বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফল মিলবে। তবে বাজারের দুরবস্থা কাটাতে যে সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা, তা নেওয়া হয়নি। এছাড়া আইসিবিও কোনো সাপোর্ট দিতে পারছে না। ফলে টানা দরপতনের খপ্পরে পড়ছে পুঁজিবাজার।
ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম মনে করেন, তারল্য সংকট ও ফোর্সসেলের চলতি দর পতনের প্রধান কারণ। যাদের বিনিয়োগে বাজারে তারল্য বাড়ত এবং শেয়ার চাহিদা সৃষ্টি হতো, তারা সক্রিয় নেই। এর মধ্যে ৮-১০টি ব্যাংক আর্থিক সংকটে। আমানতকারীদের টাকাও এসব ব্যাংক ফেরত দিতে পারছে না। পুঁজি বাঁচাতে মার্জিন ঋণদাতা কিছু প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের শেয়ার ‘ফোর্সসেল’ করছে।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১৭৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯০৩ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৭ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫০ টির, দর কমেছে ১৮৪ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৩ টির। ডিএসইতে ৩৪৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৬২ কোটি ৪২ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৫১৩ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৭৯ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৩ টির দর বেড়েছে, কমেছে ৯৯ টির এবং ২৭টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।