শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: টানা দরপতনের বৃত্তে আটকে গেছে দেশের পুঁজিবাজার। দিন যতই যাচ্ছে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট ততই বেড়েছে। ফলে পুঁজিবাজারের প্রতি অনাহী হয়ে বাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। আর টানা দরপতনে অভিবাভকহীন শুন্য পুঁজিবাজার। কারণ পুঁজিবাজারে টানা পতন ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে বিএসইসির কোনো উদ্যোগই বাজারে পতন ঠেকাতে কার্যকর হচ্ছে না। মুলত হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই টানা দরপতন হচ্ছে। তবে দেশে রাজনৈতিক পর পরিবর্তনের পর পুঁজিবাজারের নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন আসে। এতে নতুন আশায় স্বপ্ন বুনতে থাকে বিনিয়োগকারীরা।

তবে বিনিয়োগকারীদের সেই আশা আর আলোর মুখ দেখেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরে। উল্টো পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। আজ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৪৯ পয়েন্ট। এতে প্রধান সূচকটি প্রায় চার বছর বা ৪৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমেছে।

এতে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক ভারী হচ্ছে। দিনের পর দিন পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারীরা চোখে দেখছেন আঁধার; ক্ষোভে ফুঁসছেন। অথচ স্টক এক্সচেঞ্জ, নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলরা কুম্ভকর্ণের ঘুমে! তাদের এমন নির্লিপ্ত আচরণে বোঝার উপায় নেই, গভীর সংকটের গ্যাঁড়াকলে পড়েছে পুঁজিবাজার।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পুঁজিবাজার মানেই দর পতনের ইতিহাস। তবে যখন রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংস্কার চলছে, অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার আভাস মিলছে, তখন এমন দর পতন মেনে নেওয়া যায় না। অর্থনীতির বড় সংকটের মধ্যে থেকেও সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সহায়তায় শ্রীলঙ্কার পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের পুঁজিবাজার উঠেছে রেকর্ড উচ্চতায়। অথচ দেশের পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা পুঁজি রক্ষায় প্রতিদিন করছেন হাপিত্যেশ।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সাম্প্রতিক সময়ের লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১২ আগস্ট থেকে আজ রোববার পর্যন্ত আড়াই মাসে তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির শেয়ার ও ৩৭ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৭৮টি দর হারিয়েছে। এর মধ্যে ২০ থেকে ৭০ শতাংশ দর হারিয়েছে ২৭১ শেয়ার। গত এক বছরের সর্বনিম্ন দরে বা এর চেয়ে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ওপরে অবস্থান করা শেয়ার সংখ্যা বেড়ে ১৮৬টিতে উন্নীত হয়েছে। এসব শেয়ার যে কোনো দিন বছরের সর্বনিম্ন দরে নেমে আসতে পারে। শেয়ারের এমন পতনের চিহ্ন রয়েছে মূল্যসূচকে।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১৪৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১০৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ৪৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮৩০ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৬ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৯ টির, দর কমেছে ৩৪১ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬ টির। ডিএসইতে ৩০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২ কোটি ২১ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩০৬ কোটি ১ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৯৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬ পয়েন্টে। সিএসইতে ২০৪ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৩ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৭৩ টির এবং ৮ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।