পুঁজিবাজারের স্বার্থে নীতি সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস এনবিআরের
মিজানুর রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। এ সময় পুঁজিবাজারে ইতিবাচক ধারা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীতি সহায়তার অনুরোধ জানায় ডিএসই।
এ অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে নীতি সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে এনবিআর। রোববার (২৭ অক্টোবর) এনবিআরের কার্যালয়ে উভয় পক্ষেরে এ সাক্ষাতপর্ব অনুষ্ঠিত হয়। উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রকাশনা ও জনসংযোগ বিভাগ) মো. শফিকুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম ছাড়াও পরিচালক অধ্যাপক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, মো. শাকিল রিজভী, রিচার্ড ডি রোজারিও, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাত্ত্বিক আহমেদ শাহ উপস্থিত চিলেন। এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষে সদস্য (ট্যাক্স পলিসি) এ কে এম বদরুল আলম এবং সেন্টার ইন্টেলিজেন্স সেলের ডিরেক্টর জেনারেল আহসান হাবীব উপস্থিত ছিলেন। ডিএসই’র প্রতিনিধিদল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিকট একটি লিখিত প্রস্তাবনাও উপস্থাপন করেন।
লিখিত প্রস্তাবে ডিএসই’র চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, পুঁজিবাজার মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রধানতম চালিকাশক্তি। কিন্তু বিভিন্ন অনিয়ম এবং নীতি অসংগতির কারণে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এযাবতকালে অর্থনীতিতে কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারের কাঠামোগত সংস্কারে বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জসহ সব বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ একযোগে কাজ করছে। আশা করা যায় সকল সংস্কার কার্যক্রমের সফল সম্পাদন এবং পরিপূরক নীতি-সহায়তার মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজার শীঘ্রই একটি দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে সক্ষম হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখা শুরু করবে।
প্রস্তাবনায় আরও উল্লেখ করা হয়, আয়কর আইন ২০২৩-এর মাধ্যমে ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানি বা তহবিলের শেয়ার বা ইউনিট হস্তান্তর হতে অর্জিত ৫০ লাখ টাকার অধিক মূলধনী আয়ের উপর কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়। যার ফলে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ হারে কর প্রদানকারী করদাতাদের জন্য সারচার্জসহ এরূপ অর্জিত আয়ের উপর কার্যকরী করের হার ক্ষেত্র বিশেষে ৪০.৫ শতাংশে উপনীত হয়। এটি ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার বিমুখ করেছে এবং পুঁজিবাজারের উপর সামগ্রিকভাবে ভীষণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
ফলশ্রুতিতে দেশের প্রধান ষ্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইতে দৈনিক লেনদেন ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এ সর্বোচ্চ ১৮০০ কোটি টাকা থেকে ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে অক্টোবর ২০২৪-এ দৈনিক ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। বাজারের সূচকও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং সূচকের অব্যাহত পতন বিনিয়োগকারীদের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। বাজারের এই লেনদেন এবং সূচকের পতনের ফলে সরকারের মূলধনী আয়ের উপর কর এবং লেনদেনের উপর আরোপিত কর উভয়ই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। এখানে উল্লেখ্য যে পুঁজিবাজারের লেনদেন থেকে ০.০৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের বিধান রয়েছে।
প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়, পুঁজিবাজারকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের জন্য উক্ত মূলধনী আয়ের উপর অর্জিত আয়কে সম্পূর্ণরূপে কর অব্যাহতি দেয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আমরা আপনার নিকট বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। এটি করা হলে শুধুমাত্র পুঁজিবাজারই উপকৃত হবে না, তার সাথে সাথে লেনদেন-এর ঊর্ধ্বগতি অর্জনের ফলশ্রুতিতে টার্নওভার ট্যাক্স এবং ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্সের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ঘটবে।
প্রস্তাবনায় আরও উল্লেখ করা হয়, ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের জন্য তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ আয়ের উপর উৎসে কর্তিত কর-কে চূড়ান্ত কর হিসেবে পরিগণনা, ব্রোকারেজ হাউসগুলোর লেনদেন থেকে ০.০৫ শতাংশ উৎসে কর-কে হ্রাসকরণ এবং এ খাত থেকে নিরূপিত ক্ষতি অন্য খাতের আয়ের সাথে সমন্বয় কিংবা নিরূপিত ক্ষতির জের পরবর্তী ছয় বছর পর্যন্ত টানার অনুমতিসহ বেশ কিছু প্রস্তাবনা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিবেচনার জন্য অতীতে ডিএসই’র পক্ষ থেকে প্রেরণ করা হয়েছে।
এসকল প্রস্তাবনার বিষয়গুলোও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সুবিবেচনা লাভ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। প্রতিনিধিদল পুঁজিবাজারের গতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সকল বাজার মধ্যস্থতাকারী ও বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে উল্লেখিত বিষয়গুলো সু-বিবেচনা ও সমাধানের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতি অনুরোধ জানান।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, প্রস্তাবিত বিষয়গুলো নিয়ে তিনি অবহিত আছেন এবং সামগ্রিক অর্থনীতি, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবনাগুলোর ব্যাপারে শিগগিরই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তিনি প্রতিনিধি দলকে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের পেশাদারিত্বের সাথে কার্যক্রম পরিচালনা, ডিভিডেন্ড আয়ের উপর উৎসে কর কর্তনের সার্টিফিকেট প্রদানসহ কিছু বিষয়ে ডিএসই’র নেতৃত্বশীল ভূমিকা পালনের অনুরোধ করেন।