দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে টানা তিন কার্যদিবস নতুন করে দরপতনে আতঙ্ক বিরাজ করছে বিনিয়োগকারীদের। কারণ বর্তমান বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই বললেই চলে। এর মধ্যে নতুন করে দরপতনে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে বিনিয়োগকারীদের।

তবে টানা দরপতনের পর মুলধনী মুনাফার উপর করহার কমানোর খবরে বাজার দুই তিন ইতিবাচক ধারায় থাকলেও স্থায়ী হয়নি। ফলে নতুন করে দরপতন ফের শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে টানা সূচকের উত্থানের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।

পরে গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় অন্তর্র্বতী সরকার। দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দিকে পুঁজিবাজারে লেনদেনের অবস্থা ভালো ছিল। সূচকেও ছিল উত্থান। কিন্তু সেই উত্থান পরে পতনে নেমে আসে। পতনের ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এমন অবস্থায়ও পুঁজিবাজারে বেড়েছে নতুন বিনিয়োগকারী। এর মধ্যে পার হয়েছে অন্তর্র্বতী সরকারের তিন মাস।

অন্তর্র্বতী সরকারের এই তিন মাসের পুরোটা সময় পুঁজিবাজারের কারসাজি চক্ররা ছিল সক্রিয়। ফলে শেয়ারদর হারানো কোম্পানিগুলোর তালিকাও ছিল লম্বা। যেখানে নামিদামি কোম্পানি বেশি ছিল। দরপতনের ধারা ও চক্রের কারসাজিতে বিনিয়োগকারীদের দিন কাটাতে হচ্ছে পুঁজি হারানোর ভয়ে। এমন শঙ্কায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, বর্তমান সরকারের শুরুতেই পুঁজিবাজার লেনদেন ও সূচকে উত্থান ছিল। বেড়েছিল বাজারে মূলধন। অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছিল। শুরুর উত্থানে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন আশা দেখা গিয়েছিল। এতে করে অল্প সময়ে পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। কিন্তু, সময়ের পালাক্রমে ফিরে আসে পুঁজিবাজারের পুরোনো পতন।

এর নেপথ্যে মুলত পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) হুটহাট সিদ্ধান্তের কারণে এমন পতন হয়েছে জানিয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য পুঁজিবাজারে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা বাস্তবায়নে বিএসইসি তাড়াহুড়ো করেছে। আবার বিএসইসির বেশকিছু পদক্ষেপ পুঁজিবাজারের পতন আনতে সহায়তা করে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিএসইসি ২৭টি কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে নামিয়ে আনার আগে তাদের সঙ্গে সংলাপ জরুরি ছিল। এ ছাড়া পতনের জন্য পুঁজিবাজারের আরও কয়েকটি বড় কারণ ছিল। সেগুলো হলো: ব্যাংক খাতে উচ্চ সুদহার, মার্জিন ঋণের বিপরীতে কেনা শেয়ার বেচা, তারল্য সংকট, বিএসইসিতে বিশৃঙ্খলা ও বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৫০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ২৬৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৭৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৫৩ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৪ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৩ টির, দর কমেছে ২৯২ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৯ টির। ডিএসইতে ৫৫৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১৮ কোটি ১১ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫৪১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৭৯৬ পয়েন্টে। সিএসইতে ২০৫ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৭টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৪০ টির এবং ১৮ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।