দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকার আমলে পুঁজিবাজারে হরিলুটের আরেক মাস্টারমাইন্ড ছিলেন আলমগীর হোসেন। লুটেপুটে খাওয়া সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের হিরোর নেপথ্য কারিগর হিসেবে ছিলেন এই আলমগীর হোসেন। বিভিন্ন শেয়ারের নাম বেনামে কারসাজি করে হিরু সাথে শত কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। আর বিভিন্ন শেয়ারের ডাম্পিংয়ের জন্য আডৎদার হিসেবে কাজ করছেন সাইথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস লিমিটেড।

মুলত সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু বকর ও সাউথইস্ট ব্যাংকের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট জেসমিন সুলতানা লাকী, সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক সিনিয়র এক্সকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়ারেস উল মতিন, সাউথইস্ট ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাশেদুল ইসলাম, সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটালের সিনিয়র অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজীব আহমেদ এরা আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে বিভিন্ন কারসাজিতে জড়িত ছিলেন।

ফলে হিরোর কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন পুঁজিবাজার থেকে কোটি কোটি টাকা হাতানো এই মাস্টারমাইন্ড গুলো। পুঁজিবাজার লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এই আলমগীর কবির সহ সাউথইস্ট ব্যাংকের একটি সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি না। ফলে এখনো সাইথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল লিমিটেডের সিন্ডিকেট চক্রটি বহাল তবিয়তে রয়েছেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি করা হলেও এদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এছাড়া গত কয়েক বছরে পুঁজিবাজারে কারসাজি সিন্ডিকেটের একাধিক ব্যক্তির নাম এসেছে। এর অন্যতম কারসাজি সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে ছিলেন আবুল খায়ের হিরো। মুলত আবুল খায়ের হিরু’র সাথে সিন্ডিকেট করে কোটি কোটি টাকা লোপাট করে আলমগীর হোসেনের চক্রটি। তবে আলমগীর কবিরের সব তথ্যপ্রমাণ বিএসইসির কাছে রয়েছে। তিনি সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল থেকে কখন কীভাবে এবং কার সঙ্গে মিলে কোন শেয়ার নিয়ে হিরো কারসাজি করেছেন সব জানে এ সংস্থা। এসব তথ্যপ্রমাণ ঘাঁটলে আলমগীর কবিরের সম্পৃক্ততার বিষয়টিও স্পষ্ট হবে।

কিন্তু সব প্রমাণ থাকার পরও তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হিরো মাত্র তিন থেকে চার বছরের ব্যবধানে হাজার কোটির বেশি টাকা লোপাট করেছেন। এই হিরো গংদের অন্যতম নেপথ্য ব্যক্তি ছিলেন সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন। আলমগীর হোসেন হিরোর সঙ্গে মিলে পুঁজিবাজার থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন। হিরোর নাম গণমাধ্যমে এলেও তার উত্থানের পেছনে ভূমিকা রেখেছেন এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ লোপাটে পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছেন আলমগীর হোসেন।

এদিকে আর্থিক খাতের কোম্পানি বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের শেয়ার লেনদেনে ইনসাইডার ট্রেডিং নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক আলমগীর কবিরকে ১২ কোটি টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

আলমগীর কবিরের সঙ্গে একই অপরাধে দণ্ডিত আরও দুই ব্যক্তি রয়েছেন। যারা হলেন: আলমগীর কবিরের স্ত্রী ও বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক সুরাইয়া বেগম ও সুরাইয়া বেগমের জামাতা তুষার এলকে মিয়াকে তুষার এলকে মিয়া। এরমধ্যে সুরাইয়া বেগমকে ৫ কোটি টাকা এবং তুষার এলকে মিয়াকে আড়াই কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের শেয়ার নিয়ে একই অপরাধে তিনটি ব্রোকারেজ হাউজকে মোট ১১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া, সিকিউরিটিজ নিয়ম লঙ্ঘন করে বে লিজিংয়ের শেয়ার লেনদেনের জন্য সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেসকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া বে লিজিংয়ের পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং কোম্পানি সচিবকে সতর্ক করা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বে লিজিংয়ের মূল উদ্যোক্তা আলমগীর কবিরের ভাই শাহজাহান কবির। স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা এর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হওয়ার সুবাধে আলমগীর কবির অবাধে পরিচালনা পর্ষদের সভায় অংশগ্রহণ করতেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখতেন। তবে কয়েকজন পরিচালকের আপত্তির কারণে গত এক বছর ধরে তিনি পর্ষদ সভায় অংশ নিতে পারছেন না।