শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজারে কিছুতেই দরপতন থামছে না। সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে আইসিবির তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ ছাড়ের খবরের পরও চলছে টানা দরপতন। ফলে প্রতি দিনই কমেছে শেয়ারের দর। টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লাও ভারী হচ্ছে। আস্থা সংকট বেড়েই চলছে। মুলত পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হবে কী ভাবে এ প্রশ্ন এখন বিনিয়োগকারীদের।

কারণ যে হারে পুঁজিবাজারে জরিমানা চলছে তাই কেউ সাহস করে বিনিয়োগ করবে না। শেয়ার কিনলে লোকসান এ কথা এখন বিনিয়োগকারীদের মুখে মুখে। যার কারনে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। এছাড়া বাজার মেইকাররা জরিমানা ভয়ে নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না। তবে বাজার অস্থিতিশীল হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার জরিমানা থামছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সংস্কারের নামে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। এ ভাবে কখনো বাজার স্থিতিশীল করা সম্ভব নয় বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারে কারসাজির অভিযোগে আবুল খায়ের হিরু সহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পরিচালকদের মোটা অংকের জরিমানার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ আতঙ্কেও রেশ কাটতে না কাটতে গত মঙ্গলবার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে ১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১৩৫ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলছেন, বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের সাথে পতুল খেলা শুরু করছেন। তার যা ইচ্ছা তাই করছেন। বাজার স্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরী না করে একের পর এক জরিমানার ফলে বাজার আরো অস্থিতিশীল হচ্ছে। এ ভাবে পুঁজিবাজার চলতে পারে না বলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা আরো বলেন, বিনিয়োগকারীরা একদিকে নিয়ম ভঙ্গকারীদের শাস্তি দেওয়ার পক্ষে থাকলেও, অন্যদিকে বাজারের সামগ্রিক উন্নতি নিশ্চিত করার আগে এ ধরনের পদক্ষেপ এ সময় অযৌক্তিক বলে তারা মনে করেন।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী কাজী হোসাইন আলী বলেন, জরিমানায় কী বাজার স্থিতিশীল হয় এ প্রশ্ন এখন আমাদের। আগে বাজার ঠিক করতে হবে পরে সংস্কার করতে হবে। বাজার ঠিক না করে কিসের সংস্কার করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এছাড়া কঠোর হস্তে জরিমানা আরোপের ফলে যেমন দীর্ঘমেয়াদী শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব, তেমনি পুঁজিবাজারে একধরনের আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অনেক বিনিয়োগকারী তাদের অর্থ বাজারে বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন, কারণ তারা মনে করছে অনিয়মকারী কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তাদের আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। একই সঙ্গে, বাজারে তারল্য সংকটও দিন দিন প্রকট হচ্ছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, আগে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফেরাতে হবে পরে সংস্কার। বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা না ফিরলে এ বাজার কখনোই স্থিতিশীল হবে না। কারণ বিনিয়োগকারীরা ধাপে ধাপে বিনিয়োগ করে বড় লোকসানের শিকার হয়েছেন। অনেকে পুঁজি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা না ফিরিয়ে একের পর এক জরিমানা করে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৪২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১২৪ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৪২ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮৮৯ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৯ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫০ টির, দর কমেছে ২৯১ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৮ টির। ডিএসইতে ৩০৪ কোটি ২৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৭৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৮৩ কোটি ৪ লাখ টাকার।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৩৬৪পয়েন্টে। সিএসইতে ১৯৫ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪০ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১১৯ টির এবং ৩৬ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।