নেগেটিভ ইক্যুইটির প্রভিশন ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব ডিবিএ’র
শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণের বিপরীতে আদায় না হওয়া লোকসান (নেগেটিভ ইক্যুইটি) প্রভিশনের মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসেসিয়েশন। বর্তমান পুঁজিবাজারের অবস্থা বিবেচনা করে গ্রাহকের শেয়ার বিক্রির চাপ বা ফোর্সড সেল বন্ধ রাখতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রভিশন রাখার মেয়াদ বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) অনুরোধ জানিয়েছে স্টক ব্রোকারদের সংগঠনটি। পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের নেগেটিভ ইক্যুইটি প্রভিশনের মেয়াদ বিএসইসি ৫ম দফায় বৃদ্ধি করেছে। যার মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি শেষ হয়ে যাবে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের পরে মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার ব্যবসা করা অনেক বিনিয়োগকারী তাদের পুঁজি হারিয়ে ফেলেন। এতে মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে উল্টো বিনিয়োগকারীরা দেনাদার হয়ে যায়। এখন বিনিয়োগকারীদের হিসাবে আটকে থাকা টাকা ফেরত পেতে ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর হাতে দুটো রাস্তা আছে। এর মধ্যে একটি হলো- বিনিয়োগকারীদের হিসাব থেকে সব শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া। অন্যটি হলো- বিনিয়োগকারীদের হিসাবে যে লোকসান রয়েছে তার বিপরীতে প্রভিশন রেখে ধীরে ধীরে ঋণ কমিয়ে ফেলা।
যদিও শেয়ার বিক্রি করে দিলে শেয়ারবাজারে বিক্রির চাপ বাড়বে এবং ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মূলধন ঋণাত্মক হয়ে যাবে। তাই এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গ্রাহকদের মার্জিন হিসাবের অনাদায়ী ক্ষতির বিপরীতে প্রভিশন রাখতে মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসেসিয়েশন। ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসেসিয়েশনের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নেগেটিভ ইক্যুইটির প্রভিশন মেয়াদ যদি বৃদ্ধি করা না হয়, তাহলে বাজার সেল প্রেসার বাড়বে এবং বাজার দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক অবস্থার মধ্যে ধাবিত হবে। এছাড়া, নেগেটিভ ইক্যুইটির প্রভিশন মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হলে স্টক ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বড় ধরণের লোকসানের মুখে পড়বে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, শেয়ারবাজার এখনও ভালো অগ্রগতি হয়নি। শেয়ারবাজার মধ্যস্থতাকারী স্টক ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংক যারা বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কিনতে মার্জিন ঋণ প্রদান করেছে, তারা ২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। সেই সঙ্গে শেয়ারবাজার দীর্ঘ সময় নেতিবাচক অবস্থায় থাকায় বিনিয়োগকারীদের নেগেটিভ ইক্যুইটি হিসাবের লোকসান পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। আর বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে নেতিবাচক ইক্যুইটি হিসাব থেকে প্রতিনিয়ত বড় ধরনের বিক্রির চাপ হচ্ছে।
তাই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে বর্তমান শেয়ারবাজার পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের নেগেটিভ ইক্যুইটি হিসাব থেকে ব্যাপক পরিমাণ শেয়ার বিক্রির চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। তাই স্টক ব্রোকাররা গ্রাহকের মার্জিন ঋণ হিসাবে আদায় না হওয়া লোকসানের বিপরীতে প্রভিশন রাখার মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ জারি করা বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, স্টক ডিলার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকারদের পোর্টফোলিওর মার্জিন ঋণ হিসাবে আদায় না হওয়া লোকসানের বিপরীতে প্রভিশন রাখার মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।