শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: কিছুতেই স্থিতিশীলতায় ফিরছে না দেশের পুঁজিবাজারে। ফলে কোন উদ্যোগেই দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার। আশার প্রতিফলন পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। দীর্ঘদিন থেকে ধৈর্য্য ধরে আস্থার প্রতিফল পাচ্ছেন না। এমনকি দিন যতই যাচ্ছে, ততই গভীর হচ্ছে ক্ষত। বছর শেষের দিকে হওয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী সাইডলাইনে রয়েছেন।

নতুন বছরে পরিস্থিতি দেখে তারা আবার সক্রিয় হবেন। এমন অবস্থায় সূচকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে লেনদেনের পরিমাণ। ভুক্তভোগিরা প্রতিনিয়তই আশা নিয়ে বিনিয়োগ করছেন আর প্রতিবারই লোকসানী হচ্ছেন। পোর্টফোলিও থেকে মাইনাস হচ্ছে পুঁজি। মূলত এ কারণেই তাদের দুচিন্তা আরও ভারী হচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর চলতি সপ্তাহে শুরু থেকে ফের টানা পতনের প্রবণতা দেখা দিয়েছে। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। একই সঙ্গে দাম কমার তালিকায় ছিলো বেশিরভাগ কোম্পানি। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও।

এভাবেই দেশের পুঁজিবাজার সূচক তলানিতে নেমে যাচ্ছে। কারণ, বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। সূচক যেমন তলানিতে, আস্থাও তলানিতে। এখন এই অনাস্থা গিয়ে চরম ভাবে ঠেকেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর। এতে প্রতিদিনই কমছে শেয়ারের দাম, সে সঙ্গে কমছে সূচক ও লেনদেনও।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপরই বিনিয়োগকারীদের এখন সবচেয়ে বেশি অনাস্থা। ফলে বর্তমান কমিশনের কোনো উদ্যোগেই এখন বিনিয়োগকারীরা আস্থা খুঁজে পাচ্ছেন না। বিশেষ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার হুটহাট সিদ্ধান্তে আস্থাহীনতায় ভুগছে বিনিয়োগকারীরা। এ অবস্থায় বাজারে নতুন বিনিয়োগ তো আসছেই না, বরং লোকসান শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে নানাভাবে টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থ্যানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা রেখে দেশ ছাড়ার পর ক্ষমতায় আসেন অন্তর্র্বতী সরকার। অন্তর্র্বতী সরকার দেশের অন্যান্য খাতের মতো পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীলতা ফিরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ অন্যান্য সংস্থায় পরিবর্তন আনেন। সরকার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে নিয়োগ দেয়।

মাকসুদ কমিশন বাজারকে স্থিতিশীলতায় ফিরাতে সব ধরণের স্টেকহোল্ডারসহ সংশ্লিষ্ট সবার সাথে আলোচনা করেন। পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য টাস্কফোর্স গঠন করে বিএসইসি। এছাড়া বাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য আইসিবিকে স্বল্প সুদে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়। এরপরও পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরছে না।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী কাজী হোসাইন আলী বলেন, পুঁজিবাজারে সবার আগে আস্থা ফিরাতে হবে। কাজটা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেই করতে হবে। যতক্ষণ না বাজারে আস্থা ফিরছে ততক্ষণ পুঁজিবাজারে স্থিরতা ফেরার সম্ভাবনা কম। কারন বাজারের প্রতি অধিকাংশের আস্থা যখন ফিরবে তখন বাজারে সূচক-লেনদেন সবই বাড়বে। বিনিয়োগ বাড়বে, সাথে পুঁজিবাজারে বাড়বে বিনিয়োগকারী।

ডিএসই ও সিএসই সূত্রে জানা গেছে, দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ২৫.৬১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১৭০ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬.২৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫৫ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১৩.০৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯২২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে মোট ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৯৯টি কোম্পানির, কমেছে ২১৬টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৮১টির। এদিন ডিএসইতে মোট ৩০৩ কোটি ২৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩১২ কোটি ৯১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ৯.২৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৮০৯ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৩.৪১ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ৪৫৪ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ১.২৭ পয়েন্ট কমে ৯৩০ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ৫৬.৪৯ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ৯২২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সিএসইতে ২০২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৪৯টি কোম্পানির, কমেছে ১১৫টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৩৮টির। দিন শেষে সিএসইতে ১২ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১১ কোটি ৫৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।