আস্থার সংকটে পুঁজিবাজার, পুঁজির নিরাপত্তা চায় বিনিয়োগকারীরা
শহীদুল ইসলাম ও আলমগীর হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দীর্ঘদিন অনাস্থায় থাকা পুঁজিবাজার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সূচকের কিছুটা উত্থানে আপাতত স্বস্তি ফিরেছে। তবে স্বস্তি ফিরলেও আতঙ্ক কাটছে না বিনিয়োগকারীদের। কারণ এর আগেও কয়েক বার সূচকের উত্থানের আভাস দিলেও শেষ পর্যন্ত টিকেনি। ফলে মাঝে মধ্যে সূচকের উকি মারলেও আস্থা ফিরছে না পুঁজিবাজারে।
কারণ গত দুই বছরের টানা দরপতনে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর পুঁজি শেষ। এ অবস্থায় আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর বিনিয়োগকারীদের আশা ছিলো বাজার ভাল হবে। তবে ভাল তো দুরের কথা। পুঁজিবাজারের গত পাঁচ মাসের দরপতনে বড় ক্ষতির মুখে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।
একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারে মূল সমস্যা আস্থা সংকট। বিশেষ করে বর্তমান বিএসইসি চেয়ারম্যানের হুটহাট সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা সংকট বাড়ছে। এ অবস্থায় সূচকের টানা উত্থান না হলেও আতঙ্ক কাটবে না। তাই যে কোন মূল্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে হবে। তেমনি পুঁজির নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা দিতে হবে।
তা না হলে নতুন পুরাতন বিনিয়োগকারীর আগমন ঘটবে না পুঁজিবাজারে। এছাড়া নতুন বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারমুখী হবে না। তেমনি পুঁজিবাজার ইস্যুতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সিদ্ধান্ত নিতে হলে ভেবে চিন্তে নিতে হবে। এদিকে অর্থনীতির শক্ত ভিত গড়ে তুলতে পুঁজিবাজারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে পুঁজিবাজার প্রায়ই অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।
ফলে বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারান এবং পুঁজিবাজার কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়। কয়েক বছর ধরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও পড়েছে। সে ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে পুঁজিবাজারের সূচকের টানা দরপতনে পুঁজি হারিয়ে আস্থা সংকটে ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা। বছরজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ব্যাংক খাতে অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসসহ বিভিন্ন ইস্যুতে পুঁজিবাজারে মন্দা ভাব বিরাজ করেছে। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশা অনুযায়ী মুনাফা অর্জন করতে পারেননি।
এদিকে ২০২৫ সালে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা। ফলে আশা করা হচ্ছে, সাইডলাইনে থাকা বিনিয়োগকারীরা ফের সক্রিয় হবেন এবং বিনিয়োগে ফিরবেন। বস্তুত বর্তমান অবস্থান থেকে পুঁজিবাজারের ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে পুঁজিবাজার নিজস্ব গতিতে ফিরবে বলে মনে করেন তারা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের ভাষ্যমতে, পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে হলে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য দেশী-বিদেশী ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া পুঁজিবাজার কারসাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে ব্যাংক খাতের সমস্যার সমাধানও করতে হবে। এ মুহূর্তে পুঁজিবাজারের সব থেকে বড় সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট। বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের কোনো আস্থা নেই। ফলে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারবিমুখ হয়ে গেছেন। যে কারণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হলেও বাজারে তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুৃঁজিবাজারে মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। এই সংকট কাটাতে উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। না হলে দীর্ঘমেয়াদে বাজার টেকসই হওয়া কঠিন।
তিনি আরো বলেন, সবার আগে আস্থা সংকট দূর করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ কারসাজির মাধ্যমে কেউ তার টাকা হাতিয়ে নিলে বিচার হবে এই মর্মে বিনিয়োগকারীদের নিশ্চয়তা দিতে হবে। পাশাপাশি ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। এই দুই পদক্ষেপের মাধ্যমে বাজারের সমস্যা দূর করা সম্ভব। তবে বর্তমান বাস্তবতায় এটি খুব সহজ নয় বলে তিনি মনে করেন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের কিছুটা উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে।
এদিন বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর ও টাকার পরিমানে লেনদেন। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ২০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ২০৪ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক .৩৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৬৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৩১ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৯ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২২৫ টির, দর কমেছে ১০০ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৪ টির। ডিএসইতে ৩৭৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৯২ কোটি ১৭ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৮২ কোটি ১৯ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৭১ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৮৩ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯২ টির দর বেড়েছে, কমেছে ৫৭ টির এবং ৩৪ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।