দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ৯২০ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) মেয়াদ শেষ হলেও সেই টাকার উত্তোলন করা হয়নি। এমনকি এই টাকা পুনর্বিনিয়োগ হবে নাকি আইসিবি ভিন্ন কোনো খাতে ব্যবহার করবে তারও কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির গত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন এমন পর্যালোচনা করে এমন তথ্য জানিয়েছে বিএসইসি নিয়োগপ্রাপ্ত নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান।

নিরীক্ষিক জানিয়েছে, কোম্পানিটি তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে ৯২০ কোটি ২৬ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত বা এফডিআর আছে। বিভিন্ন ব্যাংকের এই আমানতের ৩০ জুন ২০২৪ সময়ে মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু আইসিবি এই টাকা উত্তোলন বা পুনর্বিনিয়োগের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

নিরীক্ষক বলেছে, যেহেতু এই পরিমাণ এফডিআরের টাকার মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেহেতু প্রতিষ্ঠানটি তা হয় পুনর্বিনিয়োগ করবে নয়তো তা উত্তোলন করবে। করপোরেশনের ঊর্ধ্বতনরা এ বিষয়ে কোনো জবাব দেননি। আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি সময় উল্লিখিত টাকার উত্তোলন যোগ্য হওয়ার পরও কেন করা হয়নি, এর কোনো আপডেট তথ্য নিরীক্ষিককে দেওয়া হয়নি। এমনকি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও সংগ্রহ করেনি আইসিবি।

আর্থিক প্রতিদেন অনুযায়ী, আসিবির ১৫৪ কোটি ২ লাখ টাকা এফডিআর আছে পদ্মা ব্যাংকে। ২০২৩ সালেও একই অঙ্কের স্থায়ী আমানত জমা ছিল আইসিবির। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে জমা আছে ২ লাখ ৩১ হাজার টাকা। ২০২৩ সালে এর পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২৪ হাজার টাকা।

পিপলস লিজিংয়ের জমা আছে আইসিবির ২৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে জমা আছে ২৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে জমা আছে ১৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। প্রিমিয়ার লিজিংয়ের জমা আছে ৪৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ফাস ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে জমা আছে ৫৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

নিরীক্ষক বলছে, মেয়াদ শেষ হওয়া এই টাকা উত্তোলন করা হলে প্রতিষ্ঠানটি ভিন্ন কোনো খাতে ব্যাংক করতে পারত। আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে নিরীক্ষক বলছেন, আইসিবি বাজার মূল্যের চেয়ে ৩ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি আছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী এই ঘাটতি পূরণ করার জন্য ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া আছে।

আইসিবি তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য গত নভেম্বরে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই টাকায় প্রতিষ্ঠানটি তাদের তারল্য সংকট কাটানো ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়াতে ব্যবহার করবে। এ অর্থের সুদহার ধরা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সুদহার অনুযায়ী। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সময়ে সময়ে বৃদ্ধি পাওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বর্তমান নীতিহার হচ্ছে ১০ শতাংশ।

ঋণের এ অর্থের সরকার সার্বভৌম (সভরেইন) গ্যারান্টার হয়েছে সরকার। গ্যারান্টার হওয়ায় কোনো কারণে আইসিবি ঋণের অর্থ ফেরত দিতে না পারলে সরকারকে তা পরিশোধ করতে হবে। গত নভেম্বর মাসে আইসিবির অনুরোধে সরকার এ ঋণের গ্যারান্টার হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে শর্তের কথা জানিয়ে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।

নন-ব্যাংক আর্থিক খাতের এই প্রতিষ্ঠানটি পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৮৬৭ কোটি টাকা। অনুমোদিত মূলধনের পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকা। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ৮৬ কোটি ৭২ লাখ শেয়ার আছে প্রতিষ্ঠানটির। মোট শেয়ারের ৬৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ শেয়ার আছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে, সরকারের কাছে আছে ২৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

প্রতিষ্ঠানিটির ২০২৪ সালে নিট মুনাফা করেছে ৩২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এ সময় শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৩৮ পয়সা। ২০২৩ সালে নিট মুনাফা করেছিল ৭৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ২০২২ সালে মুনাফা হয়েছিল ১৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। লভ্যাংশ বিতরণে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ২ শতাংশ, ২০২৩ সালে আড়াই শতাংশ নগদ ও আড়াই শতাংশ বোনাস এবং ২০২২ সালে ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল।