স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: স্মরণকালের সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে দেশের পুঁজিবাজার। ব্যাপক সম্ভাবনাময় খাতটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। সবার চোখের সামনে বছরজুড়ে হাওয়ায় মিশে গেছে হাজার হাজার কোটি টাকার বাজার মূলধন। আতঙ্কে দিন কাটছে বিনিয়োগকারীদের। ফলে বছরজুড়ে দরপতন আর হতাশায় বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। তাদের পিঠ রীতিমতো দেওয়ালে ঠেকে গেছে।

এর মধ্যে গত পাঁচ মাসে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর পুঁজি হারিয়ে বাজারবিমুখ হয়ে পড়ছেন। বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ। যদিও পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস ও অর্থ উপদেষ্টা ইতিবাচক বক্তব্য দিলেও তাতে বিশেষ কোনো ফল লাভ হয়নি। তেমনি দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুঁজিবাজার সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সরকার।

এরই ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুনর্গঠন করা হয়। তবে পুঁজিবাজারে সংস্কারের উদ্যোগে নতুন আশায় স্বপ্ন বুনতে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রায় পাঁচ মাস অতিবাহিত হতে চললেও বাজারে স্থিতিশীলতা আসেনি। বরং দিনের পর দিন যে সংকট রয়েছে, তা আরও ঘনীভূত হতে চলেছে। এতে চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমেছে সূচক।

ফলে এমন পরিস্থিতিতে শূন্য হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও। পুঁজি হারিয়ে ‘নিঃস্ব’ হয়ে বাজার ছাড়তে শুরু করেছেন অনেক বিনিয়োগকারী। ফলে টানা দরপতনের প্রতিবাদে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। তবে বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ করলেও ভয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চাইতে পারছে না বাজার মধ্যস্থতাকারীরা

কারণ আগের ন্যায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনও ভয়ের পরিবেশ তৈরী করেছে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে। যে কারনে বর্তমান কমিশন অযোগ্য সত্ত্বেও তাদের পদত্যাগ বা অপসারনের দাবি করার সাহস করছে না বাজার মধ্যস্থতাকারীরা। কারন এরই মধ্যে বিএসইসির সমালোচনা করতে গিয়ে অনেকে ব্যক্তিগত আক্রোশের স্বীকার হয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক শীর্ষ এক ব্রোকার বলেন, অর্থ উপদেষ্টা বিএসইসি চেয়ারম্যানের পূর্ব পরিচিত এবং তাদের মধ্যে সক্ষ্যতা আছে। নিজের দূর্বলতা ঢাকতে এই সুযোগকে কাজে লাগান বিএসইসি চেয়ারম্যান। তিনি সবসময় বাজার মধ্যস্থতাকারীদের নিয়ে অর্থ উপদেষ্টার কাছে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ করেন এবং নিজের কর্মকাণ্ডের গুণগান করেন। এর মাধ্যমে অনেকটা বাজার মধ্যস্থতাকারীদেরকে ভিলেন বানানো হয়েছে উপদেষ্টার কাছে।

যে কারনে উপদেষ্টা বাজার মধ্যস্থতাকারীদেরকে ভালো চোখে দেখেন না। আর বিএসইসি চেয়ারম্যান যোগ্য ও সঠিক দায়িত্ব পালন করছেন বলে মনে করেন উপদেষ্টা। তবে এভাবে বেশি দিন যাবে না। একদিন উপদেষ্টা ঠিকই বুঝবেন প্রকৃত সমস্যাটা কোথায়। ওই ব্রোকার আরও বলেন, আওয়ামীলীগ মুক্ত বা নতুন স্বাধীন দেশেও বিএসইসিকে ভয়ে চলতে হয়। কারন এরই মধ্যে বিএসইসির কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে রোষাণলে পড়েছেন। এ কারনে কেউই এখন ভয়ে কথা বলতে চায় না। অথচ বিএসইসিতে দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তারা সবাই বহাল তবিয়তে রয়েছে।

খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের উপর শুরু থেকেই পুঁজিবাজারের সব খাতের মানুষের ক্ষোভ। সবার মধ্যেই এই কমিশনের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আর প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে বহুদিন বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ-মানববন্ধন করেছেন। এই কমিশনের যোগ্যতা নেই বলে পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। এছাড়া বিএসইসির মূল ফটক তালা মেরে চেয়ারম্যান, কমিশনারসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখার মতো নজিরবিহীন ঘটনাও ঘটেছে। তারপরেও চেয়ার আকঁড়ে ধরে রেখেছেন রাশেদ মাকসুদ। বিনিয়োগকারীসহ পুঁজিবাজারের সব ক্ষেত্রের মানুষ তাকে না চাইলেও তিনি যাবেন না। অথচ সামান্য সমালোচনা উঠতেই মাসরুর রিয়াজ বিএসইসিতে যোগদানই করেননি।

এতো কিছুর পরেও রাশেদ মাকসুদের চেয়ার আকঁড়ে ধরে রাখায় তার ক্ষতি না হলেও প্রতিদিন পুঁজি হারাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। ধংসের পথে বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান। অথচ আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পরে ও মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন পূণ:গঠনের আগে পুঁজিবাজারে অনেক ভালো হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল। যা পরবর্তীতে বিএসইসিতে যোগ্য লোকের অভাবে সম্ভব হয়ে উঠেনি। তারপরেও বাজার মধ্যস্থতাকারীরা রাশেদ মাকসুদের অপসারন চাওয়ার সাহস করতে পারছেন না। অনেকটা আওয়ামীলীগের সময়ের ভয়ের পরিবেশ এখনো তাদের মধ্যে তৈরী করা হয়েছে। কারন এরই মধ্যে প্রতিবাদ করতে গিয়ে কেউ কেউ ব্যক্তিগত আক্রোশের স্বীকার হয়েছেন।

জানা গেছে, ব্রোকারেজ হাউজের কেউ কেউ সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করেন। যা বিএসইসির অনেক কর্মকর্তার ভালো লাগে না। এ কারনে ব্র্যাক ইপিএল, লংকাবাংলা ও ইউসিবি ব্রোকারেজ হাউজের তদন্ত করছে বিএসইসি। অথচ এমনিতেই পুঁজিবাজারের কেউই ভালো নেই খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে। ধারাবাহিক পতনে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। লোকসানের মধ্য দিয়ে চলতে চলতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এ নিয়ে বিএসইসির ভ্রুক্ষেপ নেই। উল্টো তাদের বিপদ বাড়ানোর জন্য করণীয় সব করে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।