আলমগীর হোসেন ও মোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের এখনই সঠিক সময়। তাই এখনই প্রবাসী ও বিদেশীদেরকে বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উন্নয়নের মূলে পুঁজিবাজার। দেশের অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের একই ধারায় উন্নয়ন হয়নি। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে প্রবাসী ও বিদেশিদের বিনিয়োগ থাকলেও তা খুবই কম। তাই এখনই বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

কারণ যে কোনো সংকটের পাশেই থাকে সম্ভাবনা। পুঁজিবাজারও ঠিক এরকমই। বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে টানা দরপতন ছিলো। বিপরীতে বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে আর্কষণীয় অবস্থায় রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির মূল্যস্তর। মৌলভিত্তি কোম্পানির শেয়ারের এমন অবস্থায় চলে এসেছে, তাতে বিনিয়োগ করলে ভালো মুনাফা আসবেই। এরমধ্যে শক্তিশালী মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলো অন্যতম।

তাছাড়া পুঁজিবাজারে পিই রেশিও যত কম বিনিয়োগ ঝুঁকিও ততো কমে। পাশাপাশি পিই রেশিও বাড়লে বিনিয়োগ ঝুঁকি বাড়ে। ফলে বছরজুড়ে পিই রেশিও আরো কমেছে, পিই রেশিও কমায় শেয়ারে বিনিয়োগ ঝুঁকি মুক্ত অবস্থানে আছে। এদিকে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই শুরু হবে নতুন বছর ২০২৫ সাল। সেইসঙ্গে বিদায় নেবে ২০২৪ সাল। বিদায়ের পথে থাকা ২০২৪ সাল পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য মোটেও ভালো যায়নি।

বছরজুড়েই বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে হাহাকার করেছেন বিনিয়োগকারীরা। অব্যাহত পতনের মধ্যে পড়ে বছরটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বাজার মূলধন এক লাখ কোটি টাকার ওপরে কমে গেছে। বড় অঙ্কের বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি বছরটিতে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। তবে গড় লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। এছাড়া পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকি নির্ণয় করা হয় মূল্য আয় অনুপাত (পিই) দিয়ে। সাধারণত ১০-১৫ পিইকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি মুক্ত ধরা হয়। আর কোনো পিই ১০-এর নিচে চলে গেলে, তাকে অবমূল্যায়িত বা বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ ধরা হয়।

২০২৪ সালের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫০ পয়েন্টে। এ হিসাবে এখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকি নেই বললেই চলে। বছরের শুরুতে ডিএসই’র পিই ছিল ১৩ দশমিক ১২ পয়েন্ট। অর্থাৎ এক বছরে পিই কমেছে ১৩ দশমিক ৬২ পয়েন্ট। এদিকে ২০২৪ সাল শেষে ৬ লাখ ৬২ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। যা বছরের শুরুতে ছিল ৭ লাখ ৮০ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১ লাখ ১৮ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। বাজার মূলধন কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমেছে।

ডিএসইর পরিচালক মো. শাকিল রিজভী বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উত্তম সময়। কারণ অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম ফেসভ্যালুর নিচে। এ অবস্থায় বিনিয়োগ করলে লোকসানের সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ ঝুঁকি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে পিই একটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্ডিকেটর। তবে পিই একমাত্র ইন্ডিকেটর নেই। অনেক সময় পিই বেশি থাকলেও কোম্পানির গ্রোথ ভালো হলে তা বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে।

তিনি বলেন, সার্বিক পুঁজিবাজারের পিই ১০ এর নিচে নেমে গেলে সেটাকে বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বিবেচনা করা যেতে পারে। অতীত ইতিহাস দেখা গেছে, বাজারের সার্বিক পিই ১০ এর নিচে বেশিদিন থাকেনি। পিই ১০ এর নিচে নামলে, তা আবার ১০ ওপরে উঠে আসে। তবে বাজারের সার্বিক পিই দিয়ে সব কোম্পানিকে মূল্যায়ন করা যায় না। সুতরাং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের ভালো প্রতিষ্ঠান বাছাই করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক্ষেত্রে কোম্পানির গ্রোথ, লভ্যাংশসহ সার্বিক আর্থিক অবস্থা খতিয়ে দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

ডিএসইর আর এক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, নিম্ন পিই নিঃসন্দেহে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়। তবে পিই একমাত্রই ইন্ডিকেটর না। গত ১৫ বছরের দুঃশাসনের কারণে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সেই আস্থা বর্তমান কমিশন এখনো ফিরিয়ে আনতে পারেনি। নিম্ন পিই বাজারে আস্থা সংকটের ইঙ্গিতও বহন করে।