শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কমিশনের ওপর আস্থা পাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা।দায়িত্ব নেওয়ার পর মাস অতিবাহিত হলেও এখন আস্থা ফেরাতে পারেনি পুঁজিবাজার। বরং দিন দিন বিনিয়োগকারী কমেছে পুঁজিবাজারে। মুলত গত ১৮ আগস্ট চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন রাশেদ মাকসুদ। বরং দিন যতই যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে।

আর দৈনিক লেনদেনের ধীর গতিতে সন্তুষ্ট হতে পারছে না বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া বিএসইসি চেয়ারম্যানের নেয়া বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে বিনিয়োগকারীদের মনে তৈরি করেছে আস্থার সংকট। তেমনি বিএসইসি এখন পর্যন্ত এমন কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি যে সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে। অন্যদিকে কোন বিনিয়োগকারী বেশী পরিমাণ শেয়ার কিনলেই বিএসইসি থেকে ফোন দিয়ে কারণ জানতে চাওয়া হয়।

এছাড়া গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর যোগ্য নেতৃত্বে দেশের অর্থবাজার অনেকটা ঘুরে দাঁড়ালেও সংকট থেকে বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার। তবে মাঝে মধ্যে সূচকের উকি মারলেও আস্থা ফিরছে না পুঁজিবাজারে। কারণ গত দুই বছরের টানা দরপতনে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর পুঁজি শেষ। এ অবস্থায় আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর বিনিয়োগকারীদের আশা ছিলো বাজার ভাল হবে। তবে ভাল তো দুরের কথা। পুঁজিবাজারের গত পাঁচ মাসের দরপতনে বড় ক্ষতির মুখে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারে মূল সমস্যা আস্থা সংকট। বিশেষ করে বর্তমান বিএসইসি চেয়ারম্যানের বিতর্কিত কর্মকান্ডে বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় সূচকের টানা উত্থান না হলেও আতঙ্ক কাটবে না। তাই যে কোন মূল্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে হবে।

তবে এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরের কয়েক মাসে একগুচ্ছ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে সেগুলো আস্থা ফেরাতে পারছে না বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। ক্রমেই কমছে সূচক ও লেনদেনের পরিমাণ।
বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিএসইসির যেসব নীতি পদক্ষেপ নিয়েছে: বাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়ানোর ব্যবস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়াতে তহবিল জোগানে সহায়তা,

জরিমানার মাধ্যমে বিএসইসির আদায় করা অর্থ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় কাজে লাগাতে ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি-বেসরকারি ভালো ও লাভজনক কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে আইপিও আইন সংস্কার ও কর প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, পুঁজিবাজারে লেনদেন নিষ্পত্তির সময় কমিয়ে একদিন করা, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোয় থাকা অনাদায়ি পুঞ্জীভূত ঋণাত্মক ঋণগুলোর (নেগেটিভ ইক্যুইটি) চূড়ান্ত নিষ্পত্তি,

উচ্চ সম্পদশালীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে মূলধনী মুনাফার করহার কমানো, শেয়ার পুনঃক্রয়ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে আর কখনো ফ্লোর প্রাইস আরোপ না করা, সুশাসন ও আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করা।

এদিকে পুঁজিবাজারে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের। মুলত নিয়ন্ত্রক সংস্থার একাধিক ভাল সিদ্ধান্তের পরও কেন পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না এমন প্রশ্নের জবাবে বিনিয়োগকারীদের বক্তব্য, পুঁজিবাজার আস্থা সংকটের কারনে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

প্রথমত বিএসইসি আস্থা সংকট দুর করতে হবে। আস্থা সংকট দুর না করে একের পর এক জরিমানা করলে কখনই আস্থা ফিরবে না। কারণ বর্তমান বাজারে তারল্য সংকট নয় আস্থা সংকটের কারনে বাজারে নানামুখী ইতিবাচক সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়ছে না।

জানা গেছে, দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৯৮ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২২৯টির এবং ৭১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৮ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৯৯ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১০ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯৩০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৫৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩১৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৩০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা লেনদেন কমেছে। এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে রবির শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১২ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৯৪ টাকার। এছাড়া ১০ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিটি ব্যাংক।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৪০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯১টির এবং ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১০১ কোটি ৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।